রাশিয়া বিশ্বকাপে ফের অঘটন! বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল স্পেন
বিশ্বকাপে নিজেদের যাত্র শেষ করল স্পেন। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে রাশিয়ার কাছে হেরে গেল তারা।
অঘটনের বিশ্বকাপে আরও এক অঘটন। জার্মানি, আর্জেন্তিনা, পর্তুগালের দেখানো পথেই হাঁটল স্পেন। ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ী স্পেনকে টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে দিল স্পেন।
বিশ্বকাপ থেকে আরও এক নক্ষত্রখোচিত দলের পতনের সাক্ষী থাকল লেলিনের দেশ। এদিন প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ফেভারিট হিসেবেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে নেমেছিল স্পেন। কিন্তু ফেভারিট তকমাটাই ম্যাচ শুরুর দু'ঘন্টার শেষে ঝড়ে পড়ল পরাজিত দল হিসেবে।
এদিন গোটা ম্যাচেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলে স্পেন। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ তুলে আনতে থাকে স্প্যানিশ ফুটবলাররা। স্পেনের আক্রমণের ঝাঁঝে চাপ বাড়ে রাশিয়ার রক্ষণভাগেও। আর এরই সুবাদে রাশিয়ার ডিফেন্ডার ইগনাসেভিচের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। স্পেনের অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে আটকাতে গিয়ে ইগনাসেভিচের পায়ে লেগে বল ঢুকে যায় গোলে।
প্রথম গোল পেয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় স্পেন। তবে, এই একটা ক্ষেত্র ছাড়া এদিন গোটা ম্যাচেই দৃঢ় ডিফেন্সিভ ফুটবলের নমুনা রাখে রাশিয়া। শুধু রাশিয়ার ডিফেন্ডারদের কথা বললে ভুল হয়, রাশিয়ার গোলরক্ষক এই ম্যাচে যে পারফরম্যান্স দেখালেন তা এককথায় অনবদ্য। তাঁর বিশ্বস্ত হাত জোড়ার কাছেই প্রথমার্ধে বারবার আটকে যায় স্পেন।
একের পর এক আক্রমণ স্পেন তুলে আনলেও, প্রতিআক্রমণে ওঠা থামায়নি রাশিয়া। এরই ফলে ম্যাচের ৪০ মিনিটে স্পেনের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের ভুল থেকে পেনাল্টি পেয়ে যায় রাশিয়া। জিউবার হেড করা বল পিকের হাতে লাগলে পেনাল্টি দেন রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি জিউবা। ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনে রাশিয়া। প্রথমার্ধের খেলা শেষে দুই দলেরই গোল সংখ্যা ছিল এক।
যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে ড্রেসিংরুমে ফিরে ছিল স্পেন, সেই মেজাজেই শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা। বলাবাহুল্য প্রথমার্ধের থেকে দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় বেশি আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল স্পেনের। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণ তুলে আনে স্পেন। স্পেনের আক্রমণের ঝাঁঝে একটা সময় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে যায় রাশিয়ার রক্ষণে। সেই সময়ে রাশিয়ার গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভ অপ্রতিরোধ্য না হয়ে উঠতে পারলে রাশিয়াকে একরাশ লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হত। চিনের প্রাচীর যেমন অভেদ্য, তেমনই এই ম্যাচে অভেদ্য প্রাচীর তৈরি করে রেখেছিলেন ইগর।
রুশ গোলরক্ষকের পাশাপাশি এই ম্যাচে ভাল খেলে রাশিয়ার ডিফেন্ডাররাও। একবার নিজেদের দোষে বিপদ ডেকে আনলেও, গোটা ম্যাচে প্রতিটি মুহূর্তে সজাগভাবে ডিফেন্স রক্ষা করেন রুশ ডিফেন্ডারেরা।
রাশিয়ান ডিফেন্সিভ লাইনের এই অদম্য লড়াই এবং গোলরক্ষকের দৃঢ় পারফরম্যান্সের কারণে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই সময়েও একের পর এক আক্রমণ তুলে আনে স্পেন। কিন্তু সেই তাদের আটকাতে হয় রাশিয়ার প্রাচীরের মতো ডিফেন্সের কাছে। অতিরিক্ত সময়ের পরেও খেলার ফল থাকে রাশিয়া ১, স্পেন ১।
অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচ অমীমাংশিত থাকায় ২০১৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের জন্য ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর এর পরই ঘটে সেই অঘটন।
টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নেন স্পেনের বর্ষীয়ান ফুটবলার আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। গোলে বল রাখতে ভুল করেননি বার্সেলোনার এই প্রাক্তন তারকা। রাশিয়াকে সমতায় ফেরান স্মোলোভ। সবই চলছিল ঠিকঠাকই। অঘটনটি ঘটে স্পেনের তিন নম্বর শটে। শটি নিতে যান কোকে। কিন্তু কোকের শট সেভ করে দেন রাশিয়ার অধিনায়ক ইগর। এর পর ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারনকারী শট মিস করেন স্পেনের আসপাস। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে হেরে লুঝনিকি স্টেডিয়াম ছাড়তে হল স্পেনকে।