ময়দানে শোকের ছায়া, চলে গেলেন শান-এ-মহামেডান সৈয়দ লতিফুদ্দিন নাজম
৭০ দশকের মহান ফুটবলার, লতিফুদ্দিন নাজম আজ হায়দরাবাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। গত বছর মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব তাঁকে শান-এ-মহামেডান সম্মান দিয়েছিল।
চলে গেলেন ৭-এর দশকের প্রখ্যাত ফুটবলার সৈয়দ লতিফুদ্দিন নাজম। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। হায়দরাবাদে নিজের বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে তাঁর কোনও অসুস্থতাও ছিল না। হঠাত করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কলকাতায় এক বছর ইস্টবেঙ্গলে ছাড়া বাকি সময় মহামেডান স্পোর্টিং-এই খেলেছিলেন তিনি। গত বছরই ক্লাবে তাঁর অবদানের জন্য মহামেডান তাঁকে শান-এ-মহামেডান সম্মানে ভূষিত করেছিল।
ফুটবল ছিল তাঁর রক্তে। তাঁর বাবা সৈয়দ খাজা মইনুদ্দিনও বড় মাপের ফুটবলার ছিলেন। ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। বাবার কাছেই ফুটবলের প্রথম পাঠ পেয়েছিলেন লতিফুদ্দিন। ফুটবল জীবন শুরু হয়েছিল স্কুল ফুটবল দিয়ে।
সর্বভারতীয় স্কুল ফুটবল টুর্ণামেন্টে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের স্কুল দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। এরপর ভারতের স্কুল দলকে নেতৃত্বও দেন। সেই সময়ই তিনি নজরে আসেন ভারতের প্রবাদপ্রতীম ফুটবল কোচ এস এ রহিম বা 'রহিম সাহেব'-এর। বাকিটা ইতিহাস। তিনি পারি দেন কলকাতায়।
১৯৭০ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি খেলতে এসেছিলেন মহামেডানে। সেই সময় মহামেডান দলে কে নেই? পিটার থঙ্গরাজ থেকে শুরু করে নইমুদ্দিন, হাবিব, সাদাতুল্লা, সর্দার খান, সৈয়দ লতিফুদ্দিন - ভারতীয় পুটবলের বাঘা বাঘা সব নাম। তাদের ভিড়ে প্রথম দলে জায়গা পাওয়াই কঠিন। কিন্তু একবার জায়গা পেতেই তিনি আর সেই জায়গা হাতছাড়া করেননি।
খেলতেন উইং-এ। ৭২-এ একবছরের জন্য ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন লতিফুদ্দিন। আবার পরের বছরই মহামেডানে ফিরে আসেন। সেই থেকে টানা ৮০ পর্যন্ত তিনি ছিলেন মহামেডান ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭৬ সালে কলকাতা লিগে ২২ গোল করে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
অবসরের পর তিনি হায়দরাবাদে ফিরে গিয়েছিলেন। গত বছরই তিনি কলকাতায় এসেছিলেন শান-এ-মহামেডান সম্মান নিতে। সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন কোনদিন অর্থের জন্য বা পুরস্কারের জন্য তিনি খেলেননি। খেলেছেন আবেগে। জানিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালের কলকাতা লিগ জিততে না পারার খেদ তাঁর তখনও রয়ে গিয়েছে।
তাঁর এই অকাল প্রয়াণে কলকাতা ময়দানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মবম্মদ আমিরুদ্দিন বলেছেন, 'সৈয়দ লতিফুদ্দিন নেই আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। তবে তাঁর মৃত্যু হলেও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সবার হৃদয়ে ও মনে তিনি রয়ে যাবেন চিরকাল।'