(ছবি) অলিম্পিক ২০১৬ : রিও থেকে ফিরেই অন্য পরীক্ষা দীপা কর্মকারের!
তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ ক্রমেই চড়ছে। আর তা অস্বাভাবিক কিছুও নয়। প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসাবে অলিম্পিকের ভল্ট ফাইনালে পৌঁছে দেশকে গর্বিত করেছেন ২৩ বছরের দীপা। তাকে নিয়ে হইচই হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। [অলিম্পিক ফাইনালের আগে 'গৃহবন্দি' জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার!]
কিন্তু দীপা নিজে কি আদৌ এই আনন্দ উপভোগের সময় পাবেন? আগামী ১৪ তারিখ অলিম্পিকে ভল্টের ফাইনাল। দীপার দিকেই রয়েছে গোটে দেশের নজর। কিন্তু অনেকেই জানেন না, রিও থেকে যেদিন ফিরবেন তার পরের দিনই MA পরীক্ষায় বসার কথা দীপার। সেমিস্টারের পরীক্ষা। বাবা ইতিমধ্যেই নোটস জোগাড় করে রেখেছেন। যেদিন রিও থেকে ফিরবেন সেদিনই নোটসগুলোতে চোখ বুলোতে হবে দীপাকে। পরের দিনই যে পরীক্ষা।
রিও শেষ হলেই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে দীপা। অলিম্পিকের জন্য এতদিন বইয়ের পাতাও উল্টে দেখা সম্ভব হয়নি তার। তবে আনন্দ উৎসবটা কবে? তা এখনও জানা নেই পরিবারের। ফোনে বাবাকে দীপা জানিয়ে দিয়েছেন, ওর বন্ধুদের কাছ থেকে যেন সব নোটস জোগাড় করে রাখে বাবা। পরীক্ষা ভাল নম্বর আনতে চায় মেয়ে। তাই মেয়েদের নির্দেশ পালন না করে বাবা যান কোথায়।
দীপার কথা বলতে গেলে আনন্দে গর্বে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে বাবা-মায়ের। মেয়ের যে এই নাম-ডাক তা তো আনন্দ দেয়ই কিন্তু সঙ্গে দীপার সংগ্রামের দিনগুলো যেন আরও তীব্রভাবে মনে করিয়ে দেয়।
এই এতটা পথ হাঁটা সোজা ছিল না দীপার পক্ষে। জানিয়েছেন মা নিজেই। দীপার মায়ের কথায় প্রথম অনুশীলনের সময় প্রয়োজনীয় সামগ্রীও ছিল না ওর কাছে। পুরনো স্কুটারের যন্ত্রাংশ দিয়ে শুরুর দিকে প্র্যাকটিস করত দীপা। কখনও সেকেন্ডহ্যান্ড নিম্ন মানের সামগ্রী হতো দীপার অনুশীলনের সঙ্গী। [অলিম্পিকে ইতিহাস গড়ে ভল্ট বিভাগের ফাইনালে পৌঁছলেন জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার]
দীপার পা ছোটবেলা থেকেই নাকি চ্যাপ্টা আর মসৃণ ছিল। স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার তরফে দীপাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। বলেছিল দীপার চ্যাপ্টা পায়ের জন্য নাকি ও কোনওদিনও জিমন্যাস্ট হতে পারবে না। দীপার মায়ের কথায়, ও চোয়াল শক্ত করে লড়ে গিয়েছে, এক একটা মেডেল জিতে একের পর এক মুখ বন্ধ করে জবাব দিয়ে গিয়েছে।
আগরতলায় অত্যন্ত অল্পবয়স থেকে অনুশীলন শুরু করে দীপা। তখন অবশ্য বাবার কথা শুনেই যেত। ৬ বছর বয়স থেকেই এক কঠিন পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন দীপা। ২০০২ সালে নর্থইস্টার্ন গেমস-এ সোনার পদক জেতাটাই ছিল দীপার জীবনের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট। এর পর থেকেই জিমন্যাস্টিক-কে ভালবাসতে শুরু করেন দীপা। জেতাটাকে নেশা বানিয়ে ফেলেছিলেন প্রায়।
এরপর ত্রিপুরা স্পোর্টস কাউন্সিল দীপার কোচ হিসাবে বিশ্বেশ্বর নন্দীর নাম প্রস্তাব করে। চ্যাপ্টা পায়ের জন্য দীপা ভাল জিমন্যাস্ট হতে পারবে না এই কথাটা শুনে প্রথমে খুব হেসেছিলেন বিশ্বেশ্বরবাবু। তাতে কিছুটা চমকেওছিল কর্মকার পরিবার। তবুও ভরসা রেখেছিলেন। তার ফল তো মিলেছে হাতে নাতেই। [(ছবি) রং-আলোর দুরন্ত মেলবন্ধনেই রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জমজমাট!]
দীপা যা করে একেবারে নিজের একশো শতাংশ দিয়ে করে। এই এত নাম ডাক কোনও প্রভাব ফেলে না ওর উপর। ও অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্মানো খুব সাধারণ একটি মেয়ে। তাই রিওর মাঝেও এমএ পরীক্ষার টেনশনটাও করে চলেছে। রিও থেকে ফিরে এমএ পরীক্ষাতেও ও নিজের একশো শতাংশ দেবে সে বিষয়ে নিশ্চিত বাবা দুলাল কর্মকার। [রিও অলিম্পিক ২০১৬: সাঁতারে ২১ তম সোনা জয় মাইকেল ফেল্পসের]
তবে মেয়ে যতই শক্ত মনের হোন না কেন, ১৪ তারিখ কি হবে তা নিয়ে বুক ধড়ফড় আর কমছে না কর্মকার দম্পতির। মেয়ের ভল্ট ফাইনাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা কমবেও না জানিয়ে দিলেন হাসতে হাসতেই।