কলকাতায় 'আই-লিগ' আসুক এবার ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে
একলপ্তে প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার স্মৃতি রবিবার ফিরে এসেছে সল্টলেক স্টেডিয়ামে। সেবার সুভাষ ভৌমিক, সমরেশ বসুরা পরপর ৬ বার কলকাতা লিগ জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন।
আর রবিবার কোচ বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের ছেলেরা ডু ডংয়ের নেতৃত্বে সেই ইতিহাসকে ফের একবার ছুঁয়ে দেখলেন। কৃতিত্বটা আরও বেশি কারণ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের পালতোলা নৌকাকে ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে কলকাতা লিগ জিতল ইস্টবেঙ্গল।
ম্যাচের আগে থেকেই ফেভারিট ছিল ইস্টবেঙ্গল সন্দেহ নেই। মূল আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন কোরিয়ান ডু ডং হিউন। আর ম্যাচ শেষেও তিনিই রয়ে গেলেন আকর্ষণের কেন্দ্রে। ম্যাচ শুরুর মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে গোল করে তিনি ঢুকে ইস্টবেঙ্গলের চিরকালীন ইতিহাসে।
বাঙালির আবেগের আর এক দিক মোহনবাগান ক্লাবের অবস্থা, বিশেষ করে সমর্থকদের মনের অবস্থা বোঝানোর নয়। অসীম উত্তেজনা ও ভালোবাসাকে সঞ্চয় করে যুবভারতীতে ম্যাচ দেখতে এসে সঞ্জয় সেন ও তাঁর ছেলেদের খেলায় মান-ইজ্জত খোয়াতে হয় তাদের। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের তীব্র গঞ্জনাকে আপাত শান্তভাবে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ জেতার জন্য ন্যূনতম লড়াইটাই করতে পারেনি সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না ইস্টবেঙ্গলকে। বাঙাল-ঘটি আবেগের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে ভালো খেলা বা লিগ জেতা। মোহনবাগান ২০০১-০২ মরশুমের পরে এবার অর্থাৎ ২০১৫-তে এসে আই লিগ ঘরে তুলেছে। ইস্টবেঙ্গলের রেকর্ড তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও বাঙাল ক্লাব শেষবার আই-লিগ জিতেছে প্রায় এক যুগ আগে।
২০০৩-০৪ সালে শেষবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এরপরে বেশ কয়েকবার ফেড কাপ জয় ও আই লিগে দ্বিতীয় স্থান পেলেও জাতীয় লিগ জয়ের স্বাদ অধরাই থেকেছে। আর এটা কলকাতা ফুটবলের জন্য আশাপ্রদ ব্যাপার নয়। মোহন-ইস্ট সম্পর্কের শৈত্য বজায় রেখেও কলকাতার ক্লাব হিসাবে তাই এবার এই সাফল্যকে আই লিগ জেতার ক্ষেত্রে পাথেয় করুক ইস্টবেঙ্গল।
ডেম্পো, চার্চিল ব্রাদার্স, সালগাঁওকর, বেঙ্গালুরু এফসির মতো মালিকানাধীন দলগুলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে সমর্থক ভিত্তিক ক্লাব ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানকে বরাবরই লড়াই করতে হয়েছে। আগামিদিনেও হয়ত করতে হবে।
তবে সমর্থকদের যে ভালোবাসা ও স্নেহ রবিবার ডু ডং সহ গোটা ইস্টবেঙ্গল দল পেল, সেই আবেগ ও ভালোবাসাকে যথার্থ মর্যাদা দিতে ও কলকাতাই ভারতীয় ফুটবলের মক্কা এই প্রবাদবাক্যকে জিইয়ে রাখতে ফি বছর জাতীয় পর্যায়ে ছাপ ফেলে আসা প্রয়োজন। বাঙাল-ঘটি আবেগ থাকুক, পাশাপাশি থাকুক কঠোর পেশাদারিত্বের আবহাওয়া যা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাবদুটিকে বারেবারে সাফল্য পেতে সাহায্য করবে।