ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের এই দ্রোণাচার্যকে চেনেন, এনার কাহিনি পড়লে শ্রদ্ধায় মাথা ঝুঁকিয়ে দেবেন
নিন্দুকরা মনে করেছিল আর পাঁচজন প্রাক্তন খেলোয়াড় যেরকম অ্যাকাডেমি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়, ঠিক তেমনি কিছু একটা হবে। কিন্তু গোপী-র পথ কোনও দিনই আর পাঁচজনের সঙ্গে এক নয়। তিনি সাধক।
ট্রেনিং ওয়েল, ইটিং ওয়েল, স্লিপিং ওয়েল- এটাই নতুন মন্ত্র। পুলেল্লা গোপীচাঁদ এই মন্ত্রেই তৈরি করছেন ভারতীয় শাটলারদের বিশ্বস্ত, শক্তিশালী সেনানী। যাঁরা বিশ্বমঞ্চে কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে দেশকে সম্মান এনে দিচ্ছে।
তবে শুরুটা আজ থেকে নয়। এই সাফল্যের যাত্রা-র শুরুর পথ সেই ২০০৪ সালে। যখন পেশাদার শাটলারের র্যাকেট তুলে রেখে গুরুর মন্ত্রে নিজেকে দীক্ষিত করেছিলেন গোপীচাঁদ। তাঁর হাত ধরে অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব এসেছিল ভারতে। হয়ত নিন্দুকরা মনে করেছিল আর পাঁচজন প্রাক্তন খেলোয়াড় যেরকম অ্যাকাডেমি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়, ঠিক তেমনি কিছু একটা হবে। কিন্তু গোপী-র পথ কোনও দিনই আর পাঁচজনের সঙ্গে এক নয়। তিনি সাধক। ব্যাডমিন্টন তাঁর জীবনের এক একমাত্র প্যাশন।
শুরুটা হয়েছিল সাইনা নেওয়ালকে দিয়ে। কোচ গোপীচাঁদ বিশ্বকে বার্তা পাঠালেন যে কাজের ব্রত তিনি ২০০৪ সালে নিয়েছেন তাঁর ফসল কিন্তু এবার ফলতে শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে অলিম্পিক্সে পদক জয়। সাইনা-র হাত ধরে সব স্তরেই পৌঁছে গেছে ভারত। হয়েছেন মহিলাদের এক নম্বর।
সাইনার পথ অনুসরণ করেই সাফল্য এসেছে পি ভি সিন্ধুর । সাফল্যের গাথা একইরকম ঈর্ষনীয়। অলিম্পিক্সে এসেছে রূপো। বিভিন্ন চ্যাম্পিয়নশিপেও দেশের সাফল্যের জয় পতাকা তুলে ধরেছেন।
তবে এ বছর নজর কেড়েছেন কোচ গোপী-র পুরুষ বিভাগের রত্নরা। এ বছর এ পর্যন্ত মোট ছ-টি ওপেন টু্র্নামেন্ট হয়েছে যার মধ্যে চারটি জিতেছেন ভারতীয় শাটলাররা। এবং বিশেষভাবে বলতে গেলে ৬টি-র মধ্যে ৩টি খেতাব এনেছেন পুরুষ শাটলাররা। পি কাশ্যপ অলিম্পিক্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলেও দেশকে মেডেল এনে দিতে পারেনিন। সিঙ্গাপুর ওপেন জিতেছেন সাই প্রণীথ, ইন্দোনেশিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন কিদম্বি শ্রীকান্ত। অলিম্পিক্সে সোনা ও রূপো জয়ীদের হারিয়ে কৃতিত্বের নজির রাখছেন এইচ এস প্রণয় কুমার।
সামনেই ব্যাডমিন্টনের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ গুরু গোপী-র পা মাটিতে আর নজর আকাশে। নিজের ব্যাডমিন্টন স্কিলের সঙ্গে এই গুণটাও তাঁর শিষ্যদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। ভোর চারটে পনেরো থেকে বেলা সাড়ে বারোটা, আবার বিকেলে চারটে থেকে ছটা নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পুরো অনুশীলনের সময় হাজির থাকেন ৪৩ বছরের কোচ। ১৩ বছরের এই রুটিনই তাঁকে নতুন নতুন রত্ন তুলে আনতে সাহায্য করে। নিজে কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। কারণ ব্যাডমিন্টন সাধনার পথে অন্য সবকিছুকেই বাধা মনে করেন তিনি। তাঁর একটাই মন্ত্র ট্রেন ওয়েল, ইট ওয়েল এন্ড স্লিপ ওয়েল। অর্থাৎ ভাল করে অনুশীলন কর, খাও এবং ঘুমোও। কারণ প্রতিপক্ষদের থেকে শারীরিক ওমানসিক দুটোতেই বেশি সক্ষম হতে হবে তবেই মিলবে সাফল্যের টিকিট।
পাশাপাশি অলিখিত প্রতিন্দ্বন্দিতাও চলে গোপী-র ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। একে -অপরের সাফল্যে তাঁরা যেমন গর্বিত হন, ঠিক তেমনিই নিজেদের নামের পাশেও সেই সাফল্যটা দেখতে চান। এটাও কারণ গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমির সাফল্যের। সোনার স্বপ্ন দেখতে শেখান যে গুরু তিনি আরও একটা বিষয়ে আশাবাদী। একদিন বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় শাটলাররা রাজত্ব করবে। এখনই নয়, তবে সেই দিন আসবে। গুরু গোপীর সঙ্গে গোটা দেশও এই স্বপ্ন দেখতে চায়।