পরিবারই তাঁর কাছে 'কবচ কুন্ডলের' মতো, তাই তিরন্দাজ দোলার 'মা দুগ্গা' তাঁর পরিবার
জয় মা দুর্গা বললেই মনে যে শুধু ভক্তিভাব জেগে ওঠে তাই নয়। মা দুর্গা যিনি নিজের দশহাত দিয়ে আমাদের রক্ষা করেন। আজ দোলার জীবনের 'জয় মা দুগ্গা ' সম্পর্কে জেনে নেব।
'জয় মা দুগ্গা '- র সাক্ষাৎকারের সময় ওয়ান ইন্ডিয়ার বাংলা দল বিভিন্ন মানুষকে বেছে নিয়েছিল। দুর্গাপুজোর পাঁচদিন বাঙালিদের মন্ডপে ঘোরা, আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, ফ্যাশন এসব নিয়ে তো কম নিউজ প্রিন্ট খরচ হয়নি, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে কম এয়ার টাইমও খরচ হয়নি। তাই একটু অন্য কিছু করার প্রয়াসে 'জয় মা দুগ্গা'-র ভাবনার জন্ম।
দোলা বন্দোপাধ্যায় বিশ্ব তিরন্দাজিতে সেরা হয়ে দেশকে এনে দিয়েছিলেন দারুণ সম্মান। আর্চারিতেও যে বাঙালি ক্রীড়াপ্রেমাদের আগ্রহ তৈরি করা সম্ভব সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। দোলাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁর বাস্তব জীবনে দুগ্গা মা কাকে বলবেন, তাতে এক অভিনব উত্তর দিয়েছেন দোলা।
দোলার মতে তাঁর পরিবার তাঁর কাছে দুগ্গা মা-র মত। কেন জিজ্ঞাসা করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দোলা জানিয়ে দেন, পরিবার যেরকম সবদিক থেকে যত্ন করে ঘিরে রাখে, দুগ্গা মাও তো ঠিক তেমনিই রাখেন। আমাদের সমাজব্যবস্থায় মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়েরা খেলাকে পেশা করলে এখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নরকম সমালোচনা ভেসে আসে। তবে দোলা জানাচ্ছেন তিনি সৌভাগ্যবান তাঁর পরিবারকে পেরিয়ে তাঁর অবধি এরকম কথাবার্তা কখনও পৌঁছয়নি।
দোলার মতে বিশ্বের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন মা-বাবা। বাইরের দুনিয়াটা কীরকম, সেখানে কীরকমভাবে চলতে হয় সব শিক্ষাই পাওয়া পরিবারের থেকে। ছোটবেলায় বাবাই প্রথম হাত ধরে তাঁকে তিরন্দাজির দুনিয়ায় নিয়ে গেছেন। দোলা বলেন,' সেসময় শুরুর দিকে খেলতে যে খুব ভাল লাগত তা নয়। কিন্তু পরে যখন টুর্নামেন্টে জিততে শুরু করি তখন থেকে শুরু হল ভাললাগা। '
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতেই স্মৃতির পথ হেঁটে দোলা ফিরে যান একেবারে কৈশোরে। 'সে সময় একদম শুরুর দিক টুর্নামেন্টে খেলতে বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে দূরে যেতে হত। আয়োজক সংস্থাদের পক্ষ থেকে পরিবারের কোনও সদস্যকে রাখার ব্যবস্থা দেওয়া হত না। এবং সব টুর্নামেন্টে নিজেদের টাকা খরচ করে বাবা -মায়ের পক্ষে যাওয়ায় সম্ভব ছিল না। ' তবে দূর দেশে কিভাবে নিজেকে সামলে চলতে সে শিক্ষাও দিয়েছে পরিবারই। মা দুর্গা তো নিজে সব জায়গায় উপস্থিত থাকতে পারেন না তাই তিনি পরিবার বানিয়েছে। যারা জীবনের চলার পথে প্রতি মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দোলা আরও একটা কারণে নিজের পরিবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দোলা ও রাহুল দুই ভাইবোন, কিন্তু ছেলে আর মেয়েকে একইরকমভাবে মানুষ করেছেন দোলার মা -বাবা। কখনই এটা ছেলেরা করতে পারে আর মেয়েরা পারে না এই বেড়াজালে পড়তে হয়নি তাঁকে। তাই জন্যও নিজের পরিবারকে ধন্যবাদ জানান বিশ্বজয়ী বাঙালি কন্যা।
এখন দোলার জীবনের দ্বিতীয় চ্যাপ্টারও যোগ হয়েছে। এখন মেধাদীপ বন্দোপাধ্যায়ের জীবনসঙ্গিনী তিনি। সৌভাগ্যবান দোলা -র এই পর্বের পরিবারও একইরকম প্রগতিশীলা। দোলার জীবনে কোনও চৌকাঠ হওয়ার চেষ্টা না করে তাঁরাও হয়ে উঠেছেন জানলা, অনেকটা দক্ষিণের জানলা। যেখান থেকে মুক্ত বাতাস ঢুকে জীবনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
তাই জয় মা দুগ্গা বলতে নিজের পরিবারকেই বোঝেন তিরন্দাজির রাণী দোলা বন্দোপাধ্যায়।