‘গ্রেটেস্ট’ ফেডেরার রূপকথা লিখলেন উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে, নজির গড়ে চ্যাম্পিয়ন
বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অষ্টমবার উইম্বলডন জিতে রজার ছাড়িয়ে গেলেন ‘গুরু’ পিট সাম্প্রাস ও উইলিয়াম রেনশকেও। টেনিস বুকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল একটাই নাম— রজার ফেডেরার।
এভাবেও ফিরে আসা যায়। ফেডেরার-রা এভাবেই ফিরে আসেন বারবার। ফিরে আসেন স্বমহিমায়, প্রতাপশালী হয়ে। রবিবাসরীয় উইম্বলডন ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী মারিন চিলিচকে রাজার মতোই হারালেন রজার। নজির গড়ে ইতিহাসে স্থান করে নিলেন তিনি। প্রমাণ করে দিলেন তিনি চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য চ্যাম্পিয়নস। দ্য গ্রেটেস্ট।
বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অষ্টমবার উইম্বলডন জিতে রজার ছাড়িয়ে গেলেন 'গুরু' পিট সাম্প্রাস ও উইলিয়াম রেনশকেও। টেনিস বুকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল একটাই নাম- রজার ফেডেরার। শুধু অষ্টমবার উইম্বলডনই নয়, সেইসঙ্গে ১৯টি গ্র্যান্ডস্লাম খেতাবও পকেটে পুরে নিলেন তিনি। নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরেও নিয়ে চলে গেলেন ফেডেক্স।
২০১২ সালে শেষবার উইম্বলডন জিতেছিলেন। মাঝের চার বছর শুধু হতাশা। দু-দু'বার ফাইনালে উঠেও শেষরক্ষা হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দু'বার জোকারের কাছে হারতে হয়েছিল তাঁকে। মনে হয়েছিল, আর বোধহয় গ্র্যান্ডস্লাম জেতা হল না ফেডেক্সের। ১৭-তেই দাঁড়ি পড়ে গেল। কিন্তু তিনি ফেডেরার। ভেবেছিলেন অন্যের থেকে আলাদা করে। ২০১৬-র মাঝপথে টেনিস সার্কিট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে চোটমুক্ত হয়ে পুরনো ছন্দে ফিরলেন রজার। তৃতীয় বার তাঁকে নিরাশ হতে হল না। স্বপ্ন সার্থক করলেন তিনি।
এবার উইম্বলডনে একটি সেটও না খুইয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন রজার। ছুঁয়ে ফেললেন ৪১ বছরের পুরনো বিয়ন বর্গের রেকর্ড। তিনি যে আরও ক্ষুরধার হয়েছেন। বয়স বাড়লেও শানিত করেছেন তাঁর প্রতিটি মারণ-অস্ত্র, তা বোঝালেন এবার উইম্বলডনে। বিশেষ করে ফাইনালে নিজেকে তুলে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়।
এদিন মারিন চিলিচের বিরুদ্ধে খেলার ফল ফেডেক্সের পক্ষে ৬-৩, ৬-১, ৬-৪। খেলার ফলই বলে দিচ্ছে কতটা প্রতাপ নিয়ে খেলেছেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত টেনিস উপহার দেওয়া চিলিচকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন ফাইনালে। পুরো ম্যাচ দেখে মনেই হয়নি ফেডেরার সাত বছরের ছোট এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে খেলছেন। ৩৫ বছরের ফেডেরার চিলিচকে হারিয়ে সবথেকে বেশি বয়সে উইম্বলডন জেতার রেকর্ডও করে ফেললেন।
টেনিস বিশ্ব মনে করেছিল চিলিচকে হারানো এত সহজ হবে না। চিলিচ যথেষ্ট বেগ দেবেন। কেননা গতবার উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে এই চিলিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল ফেডেরারের। পাঁচ সেটের সেই লড়াই জিততে ফেডেরারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। প্রথম দুই সেট হেরে গিয়েও পর পর তিনটি সেট জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছন ফেডেক্স।
এবার ফাইনালে সেই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ফেডেরারের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সর্বকালের সেরা টেনিস কিংবদন্তি বুঝিয়ে দিলেন ২০১৬ ফেডেরার আর ২০১৭ ফেডেরারের অনেক ফারাক। মোট ১১ বার ফাইনালে উঠে আটবার জয়ী হলেন তিনি। তিনবার হেরেছেন। একবার নাদালের কাছে। দু'বার জকোভিচের কাছে।
কিন্তু এবার তাঁরা আগেই বিদায় নিয়েছেন। তাই চরম অঘটন না ঘটলে ফেডেরারের জয় সময়ের অপেক্ষাই ছিল। তবে ফেডেরারকে এবার যে ফর্মে দেখা গিয়েছে, তাতে নাদাল বা জকোভিচ সামনে পড়লেও জিততে পারতেন কি না সন্দেহ রয়েই যায়। উল্লেখ্য এবার বছরের শুরুতে নাদালকে হারিয়েই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন ফেডেরার।