ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান, ৫টি সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এবং স্মরণীয় কলকাতা ডার্বি
ফিরে দেখা যাক এখনও পর্যন্ত হওয়া পাঁচটি সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ, এবং স্মরণীয় কলকাতা ডার্বি।
ফুটবল মাঠের প্রতিটি ডার্বির নিজস্ব কাহিনি থাকে। ইতিহাস, গভীরতা, আবেগ, খেলোয়াড় থেকে সমর্থকদের স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। ফিফা-র এইরকম ক্লাসিক ১০০টি ডার্বির একটি তালিকা আছে। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত অতি সম্প্রতি প্রথম ১০০ জনের মধ্যে ঢুকতে পারলেও ডার্বির এই ১০০ টির তালিকায় প্রথম থেকেই রয়েছে কলকাতা ডার্বি।
ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান - দুই দলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইতিহাস প্রায় ১০০ বছরের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলেছে এই ঘটি-বাঙাল, ইলিশ-চিংড়ির লড়াই। ১৯২১ সালে কোচবিহার ট্রফিতে প্রথম দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। ফলাফল ছিল ০-০ গোলে অমিমাংসিত। এখনও পর্যন্ত দুই গল মোট ৩৪৮টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে লাল-হলুদ জয় পেয়েছে ১২৬টিতে আর সবুজ মেরুন ১১৭টিতে। অমিমাংসিত - ১১৫টি।
রবিবার (২৭ জানুয়ারি), আরও এক ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচের আগে ফিরে দেখা নেওয়া যাক চিরস্মরণীয় ৫ কলকাতা ডার্বি।
মোহনবাগান ৩-১ ইস্টবেঙ্গল (আইএফএ শিল্ড ফাইনাল, ১৯৬৯)
স্বাধীনতার পর ভারতীয় ফুটবলের উত্থানের ইতিাসে স্থান করে নিয়েছে ১৯৬৯-এর আইএফএ শিল্ড ফাইনালের এই ম্যাচ। এই ম্যাচে মোহনবাগানের তরুণ কোচ অমল দত্তের ট্যাকটিক্সের কাছেই পরাজিত হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ৪-৩-৪ ছকে দুই ওভার্যাপিং উইংব্যাক খেলিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ছিল প্রণব গাঙ্গুলির অসাদারণ বল কন্ট্রোল, যার কাছে সেই ম্যাচে বার মেনেছিলেন সুধীর কর্মকারও। মোহনবাগানের হয়ে প্রণবই দুই গোল করেছিলেন। তৃতীয় গোলটি এসেছিল সুকল্যান ঘোষদস্তিদারের পা থেকে।
ইস্টবেঙ্গল ৫-০ মোহনবাগান (আইএফএ শিল্ড ফাইনাল, ১৯৭৫)
কলকাতা ডার্বির কথা যাঁরা জানেন তাঁরা প্রত্যেকেই এই ম্যাচের কথা জানেন। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এই রকম একপেশে ফাইনাল এখনও অবধি দ্বিতীয়টি হয়নি। সাতের দশকের শুরুর পাঁচ বছরে ইস্টবেঙ্গল মোটামুটি ভারতীয় ফুটবলের সব ট্রফিই জিতেছিল। এই সময়ে কলকাতা ডার্বিতেও তারা ছিল অপরাজেয়। মাত্র ৫ মিনিটেই লাল-হলুদের হয়ে গোলের মুখ খুলেছিলেন সুরজিত সেনগুপ্ত। যে মুখ দিয়ে বন্যার মতো পরের ৮৫ মিনিটে শ্যাম থাপা (২), রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, শুভঙ্কর সান্যালরা গোল করে যান। এই হারের ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে মোহনবাগান সমর্থক উমাকান্ত পালধি আত্মহত্যা করেছিলেন।
ইস্টবেঙ্গল ৪-১ মোহনবাগান (ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনাল, ১৯৯৭)
এই ম্যাচ ছিল ভারতীয় ফুটবলের দুই প্রবাদপ্রতীম কোচের লড়াই। মোহনবাগান কোচ অমল দত্তের ডায়মন্ড সিস্টেম-এর পাল্টা ইস্টবেঙ্গল কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোকাল টনিক। সেই সঙ্গে ছিল বাগান কোচ অমল দত্তের লাল-হলুদের নয়নের মনি বাইচুংকে 'চুংচুং' বা ওমেলোকে 'ওমলেট' বলে কটাক্ষ নিয়ে হইচই। রেকর্ড সংখ্যক ১ লক্ষ ৩১ হাজার দর্শকে ভরে গিয়েছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। ম্যাচে দেখা গিয়েছিল বাহাড়ি বিছের বিষাক্ত ছোবল। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলটি করেছিলেন নাজিমুল হক। বাইচুং করেছিলেন হ্যাটট্রিক। আর মোহনবাগানের একমাত্র গোলটি করেছিলেন চিমা ওকোরি।
মোহনবাগান ৪-৩ ইস্টবেঙ্গল (কলকাতা ফুটবল লিগ, ২০০৭)
মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য ছিলেন লাল-হলুদ কোচের চেয়ারে। কলকাতা ডার্বির উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য় এটাই ছিল যথেষ্ট। বাগানের আক্রমণ ভাগে তখন ছিলেন সবুজ তোতা হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। ম্য়াচের প্রথম গোল আসে লালমপুইয়ার একক প্রচেষ্টায়। ৩৫ মিনিটের মাথায় ব্যারেটোকে আটকাতে না পেরে বক্সের মধ্যে তাঁকে ফাউল করা হয়। পেনাল্টি থেকে গোল করে যান ব্যারেটো। বিরতির আগেই তৃতীয় গোল করে যান ভেঙ্কটেশ। বিরতিতে ৩-০ ফলে মোহনবাগান তখন আইএফএ শিল্ডের ৫-০-এর বদলার আশা দেখছিল।কিন্তু বিরতির পর ইস্টেঙ্গলের খেলা পাল্টে যায়। প্রথম গোল শোধ দেন আলভিটো। কিন্তু এরপর ভেঙ্কটেশ দ্বিতীয় গোল করে ৩ গোলের ব্যবধান ফেরান। এরপর আলভিটো আরও একটি ও এডনিলসন গোল করে ৪-৩ করেন। অনেক চেষ্টা করেও চতুর্থ গোল আসেনি লাল-হলুদের।
মোহনবাগান ৫-৩ ইস্টবেঙ্গল (আই-লিগ, ২০০৯)
এই ম্য়াচকে সবুজ-মেরুন সমর্থকরা দেখেন আইএফএ শিল্ডের ৫ গোলের ম্য়াচের বদলা হিসেবে। লাল-হলুদ সমর্থকরা অবশ্য ব্যবধানের কথা মনে করান। ম্যাচের নায়ক ছিলেন সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলা এডে চিডি। ম্যাচের প্রথম গোল অবস্য করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের নির্মল ছেত্রি। কিন্তু এরপরই আসে চিডির দুটি গোল, আরেকটি তিনি করিয়েছিলেন মনীশ মাথানিকে দিয়ে। ম্য়াচের গতি ফের পাল্টে দিয়েছিলেন লাল-হলুদের বর্ষীয়ান স্ট্রাইকার ইউসুফ ইয়াকুবু। বিরতিতে ফল ছিল ৩-৩।
বিরতির পর প্রথম মিনিটেই চিডি তাঁর হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেছিলেন। তবে এতেই তাঁর খিদে মেটেনি। এরপর মার্কোস পেরেইরার ফ্রিকিক থেকে হেড করে চতুর্থ গোল করেছিলেন চিডি এডে।