ক্রীড়াক্ষেত্রে কি এল 'অচ্ছে দিন' - অর্জুন খেতাব পাওয়া এই অ্যাথলিটের অবস্থা দেখে বিচার করুন
অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত বক্সার দীনেশ কুমার এখন রাস্তায় কুলফি বিক্রি করে উপার্জন করেন। ক্রীড়া-ক্ষেত্রে কি এসেছে 'অচ্ছে দিন'?
অন্য়ান্য ক্ষেত্রে অচ্ছে দিন এসেছে কি আসেনি তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারত যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই মাল্টি ইভেন্ট স্পোর্টে ভারতের পদকের সংখ্যা বাড়ছে। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, ব্যাডমিন্টনে ভারতীয় খেলোয়া়রা এগোচ্ছেন। কিন্তু সেইটাই কি সব?
যদি একসময়ের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে পদকজয়ী, 'অর্জুন' খেতাব পাওয়া বক্সারকে দেনার দায়ে রাস্তায় নেমে কুলফি বিক্রি করতে হয়, সরকারের থেকে কোনও রকম সাহায্য, চাকরি কিছুই তাঁর না জোটে তবে কি বলা যায় খেলাধূলায় এসেছে অচ্ছে দিন?
শুনলে মনে হবে বোধহয় সিনেমার গল্পো। কিন্ত এটাই কর্কশ বাস্তব হরিয়ানার ভিওয়ানির দীনেশ কুমারের জীবনে। জুনিয়র লেভেল থেকে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক পদক জিতেছিলেন। সিনিয়র স্তরেও পদক জেতা শুরু করেছিলেন। ভারত সরকারের কাছ থেকে তাঁর অবদানের জন্য পেয়েছিলেন অর্জুন খেতাবও। কিন্তু, তারপর ঘটে যায় বিপর্যয়। পথ-দুর্ঘটনার কবলে পড়েন মোট ১৭টি সোনা, ১টি রূপো ও ৫টি ব্রোঞ্জজয়ী এই বক্সার।
খেলা ছাড়তে বাধ্য হন। আর তারপর থেকে তিনি ভিওয়ানির রাস্তায় কুলফি বিক্রী করেন। কিছু করার নেই, তিনি যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারেন, তার জন্য তাঁর বাবা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করেছিলেন। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য আরও দেনা করতে হয়। সেইসব ধার-কর্জের সুদ দিনকে দিন বেড়ে পাহাড়-প্রমাণ হয়ে পড়েছে।
প্রথম দিকে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দীনেশ কুমারের অভিযোগ আগের কংগ্রেস সরকার বা এখনকার বিজেপি সরকার কেউই পাশে দাঁড়াননি। একটা সরকারি চাকরি জুটলেও তাঁর অনেকটা সুরাহা হত। কিন্তু দিনের পর দিন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি।
আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিদ্বন্বিতা করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তাই দীনেশ মনে করেন জুনিয়র বক্সারদের কোচ হিসেবেও তিনি ভাল কাজ করতে পারবেন। সেই প্রস্তাবও দিয়েছিলেন সরকারকে। কিন্তু কেউ কথা কানে নেননি। ফলে ভিকট্রি স্ট্যান্ড ছেড়ে তাঁকে নামতে হয়েছে রাস্তায়।
ভাারতের সব রাজ্যের মধ্যে হরিয়ানাই কিন্তু প্রথম ক্রীড়া নীতি গড়েছিল। কিন্তু সেসবই আটকে আছে বিভিন্ন গেমসে পদকজয়ীদের সংবর্ধনার মঞ্চে। একের পর এক গেমসে পদকজয়ীদের সঙ্গে হাসিমুখথে ছবি তুলতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট-বড়-মেজো-সেজো নেতাদের। দীনেশও যখন পদক জিতে ফিরতেন, পড়ত সংবর্ধনার ধূম।
কিন্তু আজ যখন এক বিপর্যয়ে তাঁর স্বপ্নের দৌড় থেমে গিয়েছে তখন তাঁর পাশে কেউ নেই। তাঁর কোচ বিষ্ণু ভাগওয়ানও সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন বক্সিং রিংয়ে অত্যন্ত ক্ষিপ্র ছিলেন দীনেশ। সরকারি সাহায্য পেলে কিন্তু তিনি ভবিষ্যতেও কোচ হিসেবে দেশের সেবা করতে পারবেন।
এর আগে চলতি বছরের এশিয়ান গেমস চলাকালীনই জানা গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুরের প্যারা-অ্যাথলেট মনমোহন সিং লোধি-কে পেটের দায়ে গলায় পদক ঝুলিয়ে ভিক্ষা করতে হয়। তিনিও জানিয়েছিলেন সরকারি কোনও সাহায্য় তিনি পাননি। একসময়ের দুই কৃতী খোলয়াড়ের এই দুর্দশা দেখার পরও কি বলা যাবে ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে এসেছে 'অচ্ছে দিন'?