হকি বিশ্বকাপ ২০১৮: কোয়ার্টারফাইনালে চোখ রাখুন এই পাঁচ ভারতীয় খেলোয়াড়ের উপর
ভারত বনাম নেদারল্যান্ডস, হকি বিশ্বকাপ ২০১৮-এর কোয়ার্টারফাইনাল তারকা হয়ে উঠতে পারেন এই পাঁচ ভারতীয় খেলোয়াড়।
গত কয়েক বছরে এসভি সুনিল, রমণদীপ সিং, সর্দার সিং-দের বাদ দিয়ে ভারতীয় হকি দল ভাবাই যেত না। কিন্তু চলতি হকি বিশ্বকাপের ভারতের ১৮ জনের স্কোয়াডে নেই এই তিন তারকাই। কিন্তু এঁদের বাদ দিয়েই তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার নিখুঁত মিশেলে গড়া ভারতীয় দল এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে অপরাজিত রয়েছে।
শুধু তাই নয়, দুর্দান্ত আক্রমণাত্বক হকি খেলে ৩ ম্য়াচে ১২ গোল করে ক্রমতালিকায় এগিয়ে থাকা দল বেলজিয়ামকে পিছনে ফেলে পুল শীর্ষে থেকে সরাসরি কোয়ার্টারফাইনালের টিকিট জোগার করেছেন মনপ্রিত সিং-রা। স্কোয়াডে থাকা ১৮ জনই কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন। তবে এবার সামনে রয়েছে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের হয়ে কারা হয়ে উঠতে পারেন তারকা?
পুল পর্বের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে পাঁচ ভারতীয় খেলোয়াড়কে বেছে নিল মাইখেল বেঙ্গলি।
বরুণ কুমার
গত বছর ঢাকায় এশিয়া কাপে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল বরুণের। তারপর থেকে আর দলের বাইরে যেতে হয়নি তাঁকে। চলতি বছরে ভারত যে কটি বড় টুর্নামেন্ট খেলেছে সবকটিতে অংশ নেওয়া একমাত্র খেলোয়াড় তিনি। রক্ষণ থেকে আক্রমণ তুলে আনতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সেই সঙ্গে তাঁর হাতে রয়েছে শক্তিশালী ড্র্যাগ ফ্লিক। তাঁর এরকই এক ড্র্যাগ ফ্লিকেই স্টিক ছুঁইয়ে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে গোল করে সমতা ফিরিয়েছিলেন রক্ষণের আরেক খেলোয়াড় হরমনপ্রিত সিং।
সিমরণজিৎ সিং
ব্রেডায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারতীয় দলে আহত আকাশদীপ সিং-এর বদলে একেবারে শেষ মুহূর্তে সুযোগ পেয়েছিলেন এই তরুণ স্ট্রাইকার। তারপর নিউজিল্যান্ডে চার-দেশীয় টুর্নামেন্টে দলে নিজের জায়গা পাকা করেন ২১ বছরের সিমরণজিৎ। হকি বিশ্বকাপের পুলের প্রথম ম্যাচেই দজক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটি গোল করেছিলেন তিনি। এরপর বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ফের চতুর্থ কোয়ার্টারে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। কোয়ার্টারফাইনালেও ভারতীয় দল গোলের জন্য তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে।
ললিত উপাধ্যায়
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় হকি দলের সদস্য ললিত। কিন্তু তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটতে শুরু করে গোল্ড কোস্ট কমনওয়েল্থ গেমস থেকে। সুমিত কুমার চোট না পেলে হয়ত সেখানে খেলার সুযোগই আসত না ললিতের। কিন্তু তারপর থেকে ভারতের আক্রমণভাগে নিমিত ফুল ফোটাচ্ছেন ললিত। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১টি গোল করেছিলেন তিনি। কানাডার বিরুদ্ধে অধিনায়ক মনপ্রিত খেলতে না পারায় তাঁকে কিছুটা পিছন থেকে খেলিয়েছিলেন কোচ হরেন্দ্র সিং। সেখান থেকেও দুটি গোল করে ম্যাচের নায়ক হন তিনি। অবশ্য গোল করার পাশাপাশি গোল করানোতেও সমান ক্ষ তিনি।
আকাশদীপ সিং
মুস্কাটে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে পর্যন্ত স্ট্রাইকার হিসেবেই খেলতেন ২৩ বছরের আকাশদীপ। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগের সেই টুর্নামেন্ট থেকেই কোচ হরেন্দ্র তাঁকে লিঙ্কম্যান হিসেবে খেলাতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন পজিশনে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। ভারের বিশঅবকাপের ১২ গোলের অধিকাংশতেই তাঁর অবদান রয়েছে। একের পর এক ডিফেন্স চেরা পাস হোক, কি ঝড়ের বেগে ড্রিবল করে রক্ষণ ভেঙে ঢুকে যাওয়া - আকাশদীপ এই মুহূর্তে প্রতিপক্ষের দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছেন। সামনে তিন স্ট্রাইকার ও তাদের ঠিক পিছনেই আকাশদীপ - এই কম্বিনেশন ভারতের আক্রমণকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।
হরমনপ্রিত সিং
অমৃতসরের এই ২২ বছরের অলরাউন্ডার একদিকে যেমন রক্ষণে বরফ শীতল মাথার অধিকারী, আক্রমণে সেরকমই আগুনে ভয়ঙ্কর। তাঁর শক্তিশালী ড্র্যাগ ফ্লিকগুলি বিশ্বের যে কোনও গোলকিপারকে পরাস্ত করার ক্ষমতা রাখে। ভুবনেশ্বরেও ভারতীয় রক্ষণকে ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণভাগেও সামনতালে সাহায্য করে যাচ্ছেন হরমনপ্রিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর ড্র্য়াগ ফ্লিক থেকেই ডিফ্লেকশনে গোল করা সুযোগ পেয়েছিলেন মনদীপ সিং। নেদারল্যান্ডস-এর বিরুদ্ধেও তাঁর জাদু দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ভারতীয় দল।