হকি বিশ্বকাপ ২০১৮: প্রথম ম্যাচেই দুরন্ত ভারত! দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এল বিশাল জয়
হকি বিশ্বকাপ ২০১৮-এর ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের প্রতিবেদন।
প্রথম ম্যাচেই ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ১৫০০০ দর্শকে ঠাসা গ্যালারির সামনে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দুর্দান্তভাবে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ভারতের হকি দল। গোটা ম্যাচেই প্রাধান্য ছিল মনপ্রিতদের। গোল করলেন, মনদীপ, আকাশদীপ, সিমরনজিৎ (২) ও ললিত উপাধ্যায়।
ম্যাচের শুরুতেই মনদীপ ও আকাশদীপের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ভারত। ম্যাচ যত এগিয়েছে ততই ভারতের খেলার ধারও বেড়েছে। তৃতীয় কোয়ার্টারে মিনিট দশেকই ম্যাচে কিছুটা ছাপ রাখতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তা ছাড়া বাকি পুরো সময়েই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছিল ভারত। মোট চাপটি পেনাল্টি কর্ণার থেকে এদিন ভারত দুটি গোল করে।
প্রথম কোয়ার্টারেই ম্যাচের ৯ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি কর্ণার পেয়েছিল ভারত। আর প্রথম পেনাল্টি কর্নারেই সফল হয় ভারত। মনদিপের গোলমুখি প্রথম শটটি দক্ষিণ আফ্রিকার গোলরক্ষক। কিন্তু ফিরতি বলে গোল করেন মনদীপ।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন আকাশদীপ সিং। বিশ্বকাপেও তিনি সেই ফর্ম ধরে রেখেছেন। মনদীপের গোলের পর কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে যে শব্দব্রহ্ম তৈরি হয়েছিল, তা মিটতে না মিটতেই ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় গোল করে ভারতকে ২-০ ফলে এগিয়ে দেন তিনি। হীরেন্দ্র লাকরা ও হার্দিকের চমৎকার বোঝাপড়ায় বোকা বনে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার রক্ষণ। তাদের গকাছ থেক বল পেয়ে দুরূহ কোন থেকে গোল করে যান আকাশদীপ।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ভারতীয় খেলোয়াড়রা বারবার সার্কেলের মধ্যে ঢুকে পড়লেও কোনও গোল পায়নি। কিন্তু প্রাধান্য ছিল ভারতেরই। বলের দখলেও এগিয়ে ছিলেন মনপ্রিতরাই। বিরতিতে ফল ছিল ভারতের পক্ষে ২-০।
বিরতির পর তৃতীয় কোয়ার্টারে কিছুটা হলেও খেলায় ফিরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই কোয়ার্টারেও তাদের তরফ থেকে কিছু বিপজ্জনক আক্রমণ হয়। কিন্তু ভারতের গোলে শ্রীজেশ সতর্ক থাকায় কোনও বিপদ হয়নি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার যাবতীয় উদ্যমের মুখে জল ঢেলে দেন সিমরনজিৎ।
লাগাতার আক্রমণে ৪২ মিনিটের মাথায় তাদের প্রথম পেনাল্টি কর্নারটি জিতে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু, বীরেনদ্র লাকড়া সেই কর্ণার শট আটকে মনপ্রিতের উদ্দেশ্যে থ্রু পাস বাড়ান। সেই বল ধরে ভারতের অধিনায়ক ডান প্রান্ত ধরে তীব্র গতিতে উপরে উঠে যান। দক্ষিণ আফ্রিকার সার্কেলের মধ্যে অপেক্ষায় ছিলেন সিমরনজিৎ। মনপ্রিতের বাড়ানো বল প্রথম ছোঁয়ায় ধরে, ঠান্ডা মাথায় গোলে পাঠান সিমরনজিৎ।
এর দু মিনিটের মাথাতেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিয়ে যান ললিত কুমার উপাধ্যায়। ফলে তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষে খেলার ফল দাঁড়ায় ভারতের পক্ষে ৪-০।
তৃতীয় কোয়ার্টারের সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই চতুর্থ তথা শেষ কোয়ার্টারের শুরুতেই পেনাল্টি কর্নার আবার পেয়েছিল হরেন্দ্র সিং-এর ছেলেরা। দর্শকদের তুমুল উন্মাদনার মধ্যে নিজের দ্বিতীয় তথা ম্যাচের পঞ্চম গোলটি করেন সিমরনজিৎ। এটাই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কবরে শেষ পেরেক।
তবে ম্যাচের একেবারে অন্তিম লগ্নে আরও একটি পেনাল্টি কর্নার পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে রেফারেল চায় মনপ্রিতরা। যার জেরে পেনাল্টি কর্নারের সিদ্ধান্ত বদল করে তাদের একটি ফ্রিহিট দেওয়া হয়। ম্যাচে দুরন্ত পারফরম্যান্সের দজোরে প্লেয়ার অবস দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন জোড়া গোল করা সিমরনজিৎ।