হকি বিশ্বকাপ ২০১৮: ঠিক যেন সাপ-লুডো! টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ হাসি নীল-সাদার
স্পেন বনাম আর্জেন্টিনা হকি বিশ্বকাপ ২০১৮-এর পুল এ ম্যাচের প্রতিবেদন। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয় পেল আর্জেন্টিনা।
হকি ম্যাচ তো নয় ঠিক যেন সাপ লুডো। মইতে চড়ে এই এগিয়ে যাচ্ছে তো পরক্ষণেই আবার শাপের মুখে পড়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। এরকমই এক রুদ্ধশ্বাস হকি ম্যাচের সাক্ষী থাকল ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়াম। পুল এ-এর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত স্পেনর বিরুদ্ধে ৪-৩ গোলে জয়ী হল নীল-সাদা জার্সিধারী আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত বারবার বদলেছে ম্যাচের ভারসাম্য। প্রথম গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল স্পেনই। তাদের পক্ষে ৩টি গোল করেন এলরিকে গঞ্জালেস (৩'), জোসেপ রোমেউ (১৪') ও ভিনসেন্স রুইজ (৩৫')। আর্জেন্টির পক্ষে দুটি করে গোল করেন অগুস্তিন মাজিয়ি (৪' ও ১৫'), পেইয়াত (১৫' ও ৪৯')।
এদিনের ম্যাচে ধারে ভারে আর্জেন্টিনার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল স্পেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের রানার আপ ছিল আর্জেন্টিনা, ২০১৬ অলিম্পিকে সোনা জিতেছিল। বিশ্ব ক্রমতালিকাতে তারা আছে ২ নম্বরে, আর স্পেন অনেক পরে ৮ নম্বরে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, এটা বিশ্বকাপ। এখানে সবাই শুরু করছে শূন্য থেকে।
আর বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর)-এর ম্যাচে তারই সাক্ষর রাখল স্পেন। একেবারে ম্যাচের শুরুতেই, ৩ মিনিটের মাথায় দলকে গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন এনরিকে। প্রথমার্ধে এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার কিন্তু বারেবারে আর্জেন্টিনা রক্ষণকে ব্যস্ত রেখেছেন। প্রথম ক্ষেত্রে তিনি আর্জেন্টিনার সার্কেলে তাদের রক্ষণভাগের ফুটবলারদের থেকে বলটি কেড়ে গোলে পাঠান।
তবে ১-০'এর লিডটা স্পেন ধরে রাখতে পেরেছিল মাত্র ১ মিনিট। 'লস লেওনেসদের হয়ে সমতা ফেরান আর্জেন্টাইন লিঙ্কম্যান মাজিয়ি। ডানপ্রান্ত থেকে তাঁর দূরপাল্লার দিক বদল করে সোজা ঢুকে যার স্পেনের গোলে।
এরপর মিনিট দশেক দুই দলই প্রতিপক্ষর বক্সে হানা দেয়। ১৪ মিনিটের মাথায় আবার এগিয়ে যায় স্পেন। এবার গোল আসে পেনাল্টি কর্নার থেকে। জোসেফ রোমেয়ুর সরাসরি শট দ্বিতীয় পোস্ট দিযে গোলে ঢোকে।
কিন্তু, এখানে ম্য়াচের শুরুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে ম্য়াচে সমতা ফিরিয়ে আনেন সেই মাজিয়ি। বাঁপ্রান্ত থেকে লুকাস ভিলা তাঁর জন্য নিখুঁত বল বাড়িয়েছিলেন।
এই ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন বিশ্বখ্যাত আর্জেন্টাইন 'ড্র্যাগ ফ্লিকার' গঞ্জালো পেইয়াত। তাঁর গোল দেখার জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন কিঙ্গ স্টেডিয়ামের দর্শকরা। প্রথম কোয়ার্টারের একেবারে অন্তিম লগ্নে, অর্থাত ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় জ্বলে ওঠে তাঁর স্টিক। কর্নার থেকে সার্কেলের মধ্যে থাকা স্পেনিয় রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের পায়ের নিচ দিয়ে বল গোলে পাঠান তিনি।
দুরন্ত প্রথম কোয়ার্টারের পর দ্বিতীয় কোয়ার্টারে একটিও গোল আসেনি। খেলার গতি অবশ্য এতটুকু থমকায়নি। মুহূর্মুহূ আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ হয়েছে। কিন্তু একটিও গোল না হওয়ায় প্রথমার্ধের শেষে আর্জেন্টিনা এগিয়ে ছিল ৩-২ ফলে।
বিরতির পর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে এনেছিল স্পেন। দ্বিতীয় য়ার্টারে গোল না হওয়ায় দর্শকরা খানিক ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। তাদের জাগিয়ে তোলেন ভিনসেন্ রুইজ। তবে তাঁর প্রথম দুই প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক হুয়ান ভিভালদি। কিন্তু, তৃতীয় প্রচেষ্টার বলকে একেবারে গোলের উপরের নেটে মারেন রুইজ। ফলে ফল দাঁড়ায় ৩-৩।
তবে এরপর ফের খেলা কিছুটা থিতিয়ে গিয়েছিল। তৃতীয় কোয়ার্ারের একেবারে শেষএ ৪৫ মিনিটে আর্জেমন্টিনা পেনাল্টি কর্নার পেয়েছিল। পেইয়াত জোরালো ড্র্যাগ ফ্লিক নিলেও পরাস্ত করতে পারেননি স্পেনিয় গোলরক্ষক কুইকো কোর্তেস-কে।
কিন্তু চতুর্থ কোয়ার্টারের শুরুতেই ৪৯ মিনিটে শেষ হাসিটা হাসেন পেইয়াতই। দুই স্পেনিয় ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে তিনি বলটি রেখেছিলেন গোলের ডান কোনে। আর এই গোলেই আর্জেন্টিনা তাদের বিস্ভকাপ অভিযানের প্ৎথম ম্যাচে ৪-৩ গোলে জয়ী হয়।