আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৯: ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় এইবার নেই অতীতে অঘটন ঘটানো এই ৫টি দল
আইসিসির বিশ্বকাপ ২০১৯-এ অংশগ্রহণের সুযোগ হারানো সেরা ৫টি দল।
ক্রিকেটকে বলা হয় মহা অনিশ্চয়তার খেলা। লাল বলের ক্রিকেটে 'ছোট' দলের দুর্বলতা ধরা পড়লেও সাদা বলের ক্রিকেট পৃথিবীতে একমাত্র খেলা যেখানে কোনও একটি নির্দিষ্ট দিনে যে কোনও দল যে কোনও দলকে হারানো ক্ষমতা রাখে। কারণ দিনের শেষে ক্রিকেটে দরকার ১০টি উইকেট। যার জন্য ১০টি ভাল বল বা ব্য়াটসম্যানদের ভুলই যথেষ্ট।
মজার বিষয় হল সাদা বলের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপেই ক্রিকেটের ছোট দলগুলি ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট বিশ্বের বড় দলগুলির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরণের ম্য়াচের ফলাফল একপেশে হলেও অনেক সময়ই 'আন্ডারডগ'রা ক্রিকেট বিশ্বকাপে অঘটন ঘটিয়েছে।
২০১৯ সালেই ফের আসছে আইসিসি বিশ্বকাপ। আসন্ন বিশ্বকাপে কিন্তু অতীতে অঘটন ঘটানো বেশ কিছু পরিচিত দলকেই দেখা যাবে না।
স্কটল্যান্ড
ক্রিকেট বিশ্বকাপে কিন্তু বিগত কয়েক দশকে প্রায় নিয়মিতই অংশ নিয়েছে স্কটরা। ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তারা যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছিল। আইসিসির অ্যাসোসিয়েট দেশগুলির মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী স্কটল্য়ান্ড এখনও ক্রিকেটে সেইরকম বড় অঘটন ঘটাতে না পারলেও বরাবরই তারা লড়াকু হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত।
আইসিসি বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জনের খেলায় তারা বেশ ভাল পারফর্ম করেছেন। পর পর আফগানিস্তান, হংকং, নেপালের মতো মতো দেশকে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্টইন্ডিজ ম্য়াচে খারাপ আম্পায়ারিং তাদের বিশ্বকাপে খেলার আশা ভেঙে দেয়।
নেদারল্যান্ডস
ইউরোপের এই দেশটি ক্রিকেট বিশ্বকাপে অত্যন্ত পেশাদার দল হিসেবে পরিচিত। এখনও কোনও বড় টেস্ট দলকে হারাতে না পারলেও ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল তারা। প্রথমে ব্য়াট করে রায়ান টেন দুশখাতের ১১০ বলে ১১৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ২৯২/৬ স্কোর করেছিল তারা। ইংল্যান্ড কোনও রকমে শেষ দুই বল বাকি থাকতে জিতেছিল সেই ম্যাচ।
এবারের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের খেলায় অবশ্য বেশ গড়পড়তা পারফরম্যান্স এসেছে ডাচদের থেকে। গ্রুপ পর্বে তারা আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে পরাজিত হয়।
কেনিয়া
ক্রিকেট বিশ্বে কেনিয়ার উত্থান হয়েছিল প্রায় ধূমকেতুর গতিতে। বিশেষ করে ২০০৩ সালে তাদের পারফরম্যান্স ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সুপার সিক্স হয়ে প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র টেস্ট না খেলিয়ে দেশ হিসেবে পৌঁছে গিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল অবধি। শ্রীলঙ্কাকে পর্যন্ত হারিয়ে দিয়েছিল।
যেরকম গতিতে উঠেছিল এই আফ্রিকান দেশটি, তাদের খেলা পড়েওছে সমান গতিতেই। সম্প্রতি আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের ডিভিশন ২-তে খারাপ প্রদর্শনের জন্য তারা ডিভিশন ৩-এ নেমে গিয়েছে।
জিম্বাবোয়ে
অ্যাসোসিয়েট দেশের তকমা পাওয়ার পর থেকেই ক্রিকেটে অঘটন ঘটিয়ে এসেছে জিম্বাবোয়ে। ১৯৮৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই তারা গ্রুপ পর্বে পরাজিত করেছিল অস্ট্রেলিয়াকে। ১৯৯২-তে আবার হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সেই বছরই তারা টেস্ট খেলার মর্যাদাও লাভ করেছিল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে তারা ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারায়। অবশ্য ততদিনে আর ছোট দল হিসেবে দেখা হত না এই আফ্রিকান দেশটিকে।
কিন্তু, দেশের রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার বড় প্রভাব পড়ে জিম্বাবোয়ের উপর। নয়ের দশকের শেষের সোনার যুগ আর নেই তাদের। যোগ্যতা অর্জন টুর্নামেন্টে তারা মোটের উপর ভাল খেললেও সুপার সিক্সে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে হেরে ছিটকে যেতে হয়েছে বিশ্বকাপ খেলার দৌড় থেকে।
আয়ারল্য়ান্ড
২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে হারানো, ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ রান তাড়া, ২০১৫বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দারুণ জয় - আয়ারল্য়ান্ডের অঘটন ঘটানোর তালিকাটা দীর্ঘ। ২০১৭ সালে তারা টেস্ট খেলিয়ে দেশের সম্মানও পেয়েছে। দলে রয়েছেন কেভিন ও'ব্রায়েন, উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড, বয়েড রানকিনের মতো ক্রিকেটার।
এবারের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের খুব কাছাকাছি এসেও ব্যর্থ হয়েছে আইরিশরা। আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারের ফাইনালে আফগানিস্তানের কাছে হেরে ছিটকে যায় তারা।
এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ হতে চলেছে ১০ দলের। ভারত অস্ট্রেলিয়ার মতো টেস্ট খেলিয়ে প্রধান দলগুলির সবকটি থাকলেও এই ৫ ক্রিকেটের 'ছোট' দলের অভাব বোধ করবে ক্রিকেট বিশ্ব।