এশিয়ান কাপ, অধিনায়কের মুহূর্তের ভুল! শারজার মাঠে ১৩০ কোটির ফুটবলের স্বপ্নভঙ্গ
এএফসি এশিয়া কাপ ২০১৯-এর ভারত বনাম বাহরিন ম্যাচের প্রতিবেদন।
ভেঙে গেল ১৩০ কোটি মানুষের ফুটবল স্বপ্ন। দাঁতে দাঁত চেপে ৮৯ মিনিট অবধি লড়াই করল ভারত। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে ভুল করে বসলেন এদিনের অধিনায়ক প্রণয় হালদার। পেনাল্টি থেকে গোল করে গেলেন বাহরিনের জামাল রশিদ। ৩ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট রাউন্ডে চলে গেল বাহরিন। থাইল্যান্ড-ইউএই ম্য়াচ অমিমাংসিত থাকায় ভারতের কাপ অভিযান এখানেই শেষ হল।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) শারজার মাঠে কিছুই ভারতের পক্ষে ঠিকঠাক হল না। কোনও এক অদ্ভুত কারণে এদিন ভারতীয় কোচ কন্স্টানটাইন দলকে রক্ষমাত্বক স্ট্র্য়াটেজিতে খেলালেন। সম্ভবত ড্র করলেও পরের রাউন্ডে যাওয়া যাবে, মাথায় পিছনে এই ভাবনাটাই তাঁকে ভোগালো। ফলে গোটা ম্যাচে সেই ভাবে বাহরিন গোলরক্ষককে পরীক্ষায় ফেলা তো দূরের কথা তাদের বক্সে আক্রমণ হানতেই পারল না ভারত।
অপর দিকে বাহরিন একেবারে ম্য়াচের শুরু থেকেই ঝড় তুলেছে ভারতীয় বক্সে। শেষ অবধি হারতে হলেও ভারতীয় রক্ষণভাগের প্রশংসা করতেই হবে। তীব্র আক্রমণের মুখে ছোটখাট কিছু ভুল ছাড়া এদিন তাঁরা কিন্তু দুর্দান্ত খেলেছে। ম্যাচের শুরুতেই আনাস চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্ত হিসেবে মাঠে আসা সালাম কিন্তু তাঁর অভাবটা বুঝতেই দেননি।
তবে এদিন বাহরিন কিন্তু শুরু থেকেই প্রাধান্য নিয়ে খেলে। ম্যাচের পরিসংখ্য়ানেই দুই দলের খেলার ফারাকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। গোটা ম্য়াচে ভারত শট নিয়েছে মাত্র ৩টি। সেখানে বাহরিনের শটের সংখ্য়া ২০। আর যেখানে তারা ৬বার বল তিনকাঠির মধ্যে রাখতে পেরেছে, ভারত একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। বল পজিশনেও বাহরিন অনেক এগিয়ে ছিল (৬১%-৩৯%)। পাশাপাশি তারা ১৩টি কর্নারও জিতে নেয়। সেখানে ভারত কর্নার পেয়েছে মাত্র ১টি।
এদিন শারীরিক গঠনে ভারতীয় দের থেকে এগিয়ে থাকার সুযোগ নিয়েছে বাহরিন। কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক রেখে বার বার বারতীয় বক্সে হানা দিয়েও তারা গোল পাচ্ছিল না। আগের দুই ম্য়াচে ১টি গোল করা সৈয়দ ধিয়া সইদ শুরুতে একগুচ্ছ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। রশিদ একবার বল জালে জড়ালেও অফসাইডে সেই গোল বাতিল হয়। বিরতিতে ফলাফল ০-০ ছিল।
বিরতির পরও খেলার চালচিত্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ৪৯ মিনিটেই গোলে শট নিয়েছিলেন আলি জাফার মাদান। কিন্তু তা প্রতিহত করেন গুরপ্রিত। এরপর ৭৪ মিনিটের মাথায় রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ১২ গজের বক্সের মধ্যে ফ্রিকিক পেয়েছিল বাহরিন। শুভাশীষ বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। তাঁর পায়ে লাগা বল গুরপ্রীত হাতে ধরায় রেফারি ব্য়াকপাস হাতে ধরার অপরাধে ফ্রিকিক দেন।
কিন্তু সেই পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনাকেও কাজে লাগাতে পারেননি বাহারাইনি ফুটবলাররা। বা বলা ভাল কাজে লাগাতে দেননি ভারতীয় ফুটবলাররা। রশিদের শট নেওয়ার সময় গুরপ্রিত-সহ রক্ষণের ফুটবলাররা দ্রুত এগিয়ে গোলের মুখ ছোট করে দেন। বল তাদের পায়ে প্রতিহত হয়ে বারপোস্টের উপর দিয়ে উড়ে যায়।
এরপর ভারত মোটামুটি ম্য়াচ অমিমাংসিত রেখে পরের রাউন্ডে যাওয়ার ব্য়াপারে যখন প্রায় নিশ্চিত, তখনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এতক্ষণ চাপ সহ্য করে খেলে যাওয়া ভারতীয় রক্ষণ হঠাতই একটু মনোসংযোগ হারিয়েছিল। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে ফের বিপজ্জনক ভাবে লোক বাড়িয়ে ভারতীয় বক্সে হানা দিয়েছিল বাহরিনের ফুটবলাররা। আর বক্সের মধ্যেই আল শামসানকে ফাউল করে বসেন অধিনায়ক প্রণয় হালদার। তাঁর ট্য়াকলটির ক্ষেত্রে সময়ের সামান্য ভুলচুক হয়ে যায়।
পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি রশিদ। এরপর আর সেই গোল শোধ দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় বা উদ্যম কোনোটাই ভারীয় দলের কাছে ছিল না। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলাররা স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েন। থাইল্যান্ডকে ৪-১ গোলে হারিয়ে যে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু করেছিলেন সুনীলরা, তা আজ ছিঁড়ে কুটি কুটি হয়ে গেল।
এতদিন দারুণভাবে দল পরিচালনা করে আসা কোচ কনস্টানটাইনের এদিনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কেন এই ম্য়াচে তিনি বারতের পরিচিত আক্রণাত্মক স্ট্র্যাটেজি বদলালেন? কেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অনিরুধকে প্রথম দলে রাখা হল না? প্রণয় ও বোর্গেস প্রথম দিন থেকেই ছন্দে ছিলেন না। এদিন দুজনে মাঝমাঠে মিস পাস করে প্রচুর বল প্রতিপক্ষের পায়ে তুলে দেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা দুজনেই কেন ৯০ মিনিট মাঠে?
গ্রুপের অপর ম্যাচে থাইল্য়ান্ড ও আমিরশাহির মধ্যে ম্য়াচের ফল ১-১ হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ এ-তে একেবারে তলানিতেই শেষ করল ভারত। কাজেই সেরা তৃতীয় দল হয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ারও কোনও আশা আর রইল না।