ইসরাইল ম্যাচ বাতিল করলো আর্জেন্টিনা! বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলার কারণ জানুন
বিশ্বকাপের আগে প্যালেস্টাইনিদের প্রতিবাদের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ বাতিল করলো আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপের আগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ বাতিল করলো আর্জেন্টিনা। প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠীগুলি এই ম্যাচ আয়োজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবল প্রশাসন। আগামী শনিবার জেরুসালেমের টেডি কোলেক স্টেডিয়ামে এই ইন্টান্যাশনাল ফ্রেন্ডলি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
আর্জেন্টিনার বিদেশমন্ত্রী যোর্হে ফাউরাই-এর মতে, ইসরাইলে খেলতে নারাজ ছিলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াররাই। তিনি বলেন, 'আমি যতদূর জানি, জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাই খেলতে ইচ্ছুক ছিলেন না'।
আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাওলি গত সপ্তাহেই ইজরায়েল সফর নিয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বিশ্বকাপের আগে বার্সেলোনাতেই থাকতে চান বলে জানিয়েছিলেন। মেসির ক্লাবেই এবার তাঁর জাতীয় দল প্রাক-বিশ্বকাপ প্রশিক্ষণ শিবির করছে। সেই শিবির থেকেই সাম্পাওলি বলেছিলেন, 'স্পোর্টিং পয়েন্ট ভিউ থেকে, আমার তো বার্সেলোনাতেই থেকে যাওয়ার ইচ্ছে। তবে উপায় তো নেই। আমাদের ম্যাচের আগের দিনই পৌঁছতে হবে ইসরাইলে। ইসরাইল ম্যাচ খেলে যেতে হবে রাশিয়ায়।'
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অনিচ্ছার পাশাপাশি এই ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ ঘিরে প্রবল আপত্তি এসেছিল প্যালেস্টাইনের তরফে। সেদেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জিব্রিল রাজৌব, আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি লিখে জেরুসালেমের ম্যাচটি বাতিলের আবেদন জানিয়েছিলেন। এই ম্যাচকে ইসরাইল 'রাজনৈতিক হাতিয়ার' করতে চাইছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের শহর রামাল্লায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজৌব বলেন, 'এই ম্যাচ একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ইহুদি সরকার জেরুসালেমে ম্যাচটি করার জন্য জোর করছে। একে রাজনৈতিক তাৎপর্য দিতে চাইছে।'
এ পাশাপাশি প্যালেস্তাইনিদের আপত্তি আছে ম্যাচটির জন্য নির্ধারিতটেডি কোলেক স্টেডিয়াম নিয়েও। স্টেডিয়ামটি পশ্চিম জেরুসালেমে অবস্থিত হলেও (প্যালেস্তাইনিরা পূর্ব জেরুসালেমকে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে) তাদের অভিযোগ স্টেডিয়ামটি যে মাটিতে নির্মাণ করা হয়েছে, একসময় সেখানে একটি প্যালেস্তাইনি গ্রাম ছিল। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল গ্রামটি দখল করে ধ্বংস করে দেয়। রাজৌব বলেন, 'মেসির শান্তি ও ভালবাসার প্রতীক। আমরা এই অপরাধে না জড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।'
গত রবিবার থেকে পরিস্থিতি আরও উত্য়প্ত হয়ে ওঠে। রাজৌব রামাল্লায় আর্জেন্টিনার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের পর মেসিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার আহ্বান জানান। মেসির জার্সি ও ছবি পোড়ানো আহ্বান জানানো হয়। এরপরই সোমবার কিছু প্যালেস্টাইনি সমর্থক বার্সেলোনার স্পোর্টস কমপ্লেক্সে, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিবিরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের হাতে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের সাদা-আকাশী নীল জার্সি ছিল। সেই জার্সিতে ছিল রক্তের প্রতীকি লাল রঙের ছিটে। এর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা করে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন।
আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়াইন বলেছেন, 'শেষ পর্যন্ত, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিতর্ক এখন আমরা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাব। স্বাস্থ্য এবং সাধারণ জ্ঞান সবার আগে। আমরা বুঝেছিলাম জেরুজালেমে ম্যাচ খেলা ঠিক নয়।"
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হচ্ছে ১৬ জুন, আইসল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে। এরপর ২১ জুন ক্রোয়েশিয়া এবং ২৬ জুন নাইজেরিয়া বিরুদ্ধে খেলতে হবে। এর আগে আর্জেন্টিনার অন্য কোনও ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ খেলবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইসরাইলের তরফে এখনও এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।