বসনিয়া গণহত্যার সাক্ষী দুই আলবেনিয়ান তারকা সার্বিয়াকে হারিয়ে জয় এনে দিলেন সুইজারল্যান্ডকে
ফুটবল মানে শুধু খেলা নয় এক সমসাময়িক ইতিহাস। সার্বিয়া বনাম সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ আপাত দৃষ্টিতে একটি গ্রুপ লিগের ম্যাচ হলেও এটি নিঃশব্দে প্রতিবাদের মঞ্চ হয়ে উঠল দুজন সুইজারল্যান্ড খেলোয়াড়ের।
ফুটবল মানে শুধু খেলা নয়। এক সমসাময়িক ইতিহাস তার মধ্যে জলছবির মতো আঁকা থাকে। সার্বিয়া বনাম সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ আপাত দৃষ্টিতে একটি গ্রুপ লিগের ম্যাচ হলেও এটি নিঃশব্দে প্রতিবাদের মঞ্চ হয়ে উঠল দুজন সুইজারল্যান্ড খেলোয়াড়ের। যাঁরা দুজনেই গোল করে দলকে শুধু জেতালেনও না, বহু পুরনো এক অত্যাচারের বদলা নিলেন ফুটবল মাঠে।
ঘটনা হল, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে হওয়া বসনিয়ার যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ মানুষ মারা যান। বসনিয়ার সেব্রেনিকা শহরে হওয়া গণহত্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হওয়া ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যা বলে অভিহিত করা হয়।
এই ঘটনার একটি প্রেক্ষিতও রয়েছে। তা হল, ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া। তা দেখে ১৯৯২ সালে বসনিয়াও স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বসনিয়াকে স্বীকৃতিও দেয়। তবে যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান স্লোবোডান মিলোসেভিচ এই স্বাধীনতা ঠেকাতে বসনিয়ার রাজধানী আক্রমণ করেন। সেটাই পরে গণহত্যার রূপ নেয়।
সার্বিয়ার এই অত্যাচারের জেরে আলবেনিয়ার বাসিন্দা গ্রানিট হাকা ও হেরদান শাকিরির পূর্বসুরীরা দেশ ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে এসে বসবাস শুরু করেন। এঁরা দুজনেই তখন খুব ছোট। রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যাচারের কথা হয়ত এঁদের মনে নেই। তবে শুনে মনে ক্ষোভ নিশ্চয়ই পুষে রেখেছিলেন। আর তাই বিশ্বকাপে দুই দলের প্রথম সাক্ষাতেই সার্বিয়াকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিলেন হাকা, শাকিরিরা।
শুধু কি দেশ ছেড়ে চলে আসা, গ্রানিট হাকার বাবাকে সার্বিয়ার সরকার গণহত্যার প্রতিবাদ করায় তিন বছর জেলে আটকে রেখেছিল। সেই ক্ষোভ ও রাগকে এদিন গোলে পরিণত করলেন হাকা। ৫৩ মিনিটের মাথায় বিশ্বমানের গোল করে তিনি দেশকে সমতায় ফেরান।
এদিকে শাকিরি দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। আগের গোলটিতে তিনি সহায়তা করেছিলেন। পরে ম্যাচের নব্বই মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে উঠে ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে কাটিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন শাকিরি।
এই দুটি গোল যেন দুই দশক আগের অত্যাচারের নিঃশব্দ প্রতিবাদ হয়ে উঠল কোন অজান্তে। হাকা ও শাকিরি এখনও বাড়িতে, পরিজনদের সঙ্গে আলবেনিয়ান ভাষাতেই কথা বলেন। দেশ ছেড়ে এলেও এখনও মনে মনে দেশকে ভালোবাসেন দুজনে। এবং সার্বিয়ার গণহত্যার স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও মনের সেই আগুনে পুড়িয়ে দিলেন সার্বিয়াকে।