মেসির টানে রাশিয়ায়, আর্জেন্তিনা শাড়ি পরে বিশ্বকাপ কাঁপালেন জলপাইগুড়ির গৃহবধূ
রাশিয়ানদের থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া অন্যান্য বিদেশিদের রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জলপাইগুড়ির শর্মিষ্ঠা দে।
বাঙালির ফুটবলে অহঙ্কারের কী আছে? যদি কাউকে এই প্রশ্ন করা যায় তাহলে তিনি যেটা বলবেন সেটা হল বাঙালি মানেই তো ফুটবল! আর বাঙালির ফুটবল ইতিহাস তো ১০০ বছরের পুরনো। কলকাতা তো ফুটবলের মক্কা নামে খ্য়াত! তাহলে! কিন্তু এ তো গেল কলকাতার ময়দান আর দেশিয় ফুটবলের কথা। কিন্তু, আন্তর্জাতিক ফুটবল- মানে বিশ্বকাপ নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? এবার যে উত্তরটা ছুটে আসবে সেটা হল আর বাঙালির আন্তর্জাতিক ফুটবল মানেই তো ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা। আর অবশ্যই পেলে, মারাদোনা, মেসি, নেইমার। বিশ্বকাপ এলে তো মনে হয় এরা সব বাংলার অলি-গলির ছেলে!
সত্যিকারেই তাই! বিশ্বকাপেই মানেই বাঙালির ফুটবল তরজায় মাসখানেক ধরে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা নিয়ে হইচই। পাড়ায় পাড়ায় এ ব্রাজিলের পতাকা ঝুলিয়ে দিচ্ছে তো, আর্জেন্তিনার ভক্তকুল ৫০ ফুটের বিশাল পতাকায় পারলে গোটা পাড়াটাকেই মুড়ে ফেলে। কোথাও কোথাও মেসি-নেইমার মূর্তি বানিয়ে তার সামনে দিনরাত টিভিতে চলছে খেলা দেখা। বিশ্বকাপ এলে এই ছবি দুই বাংলার সর্বত্র। পদ্মার এপার বা ওপার বলে বিশ্বকাপ উন্মাদনার ছবিটার কোনও বদল হয় না। বাঙালির ফুটবল প্রেম এমনই পাগলপারা।
আর এমনই এক ফুটবল প্রেমের নির্দশন এবার মিলল খোদ রাশিয়ার বুকে। যেখানে রাশিয়ানদের থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া অন্যান্য বিদেশিদের রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জলপাইগুড়ি শর্মিষ্ঠা দে।
স্বামী ও ছেলে-কে সঙ্গী করে এখন মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্বকাপ দর্শনে ব্যস্ত শর্মিষ্ঠা। কিন্তু, তাঁর এই বিশ্বকাপ দর্শনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে তাঁর আর্জেন্তিনা শাড়ি। শর্মিষ্ঠার এই শাড়ি এতটাই নজর টেনেছে সকলেই তাঁর সঙ্গে ছবি তুলছে। ফুটবলপ্রেমীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যটকেরাও ভিড় করছেন আর্জেন্তিনার শাড়ি পরিহিত শর্মিষ্ঠার সঙ্গে ছবি তুলতে।
গতবার ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে। তাই তাঁর আবদার ছিল বিশ্বকাপ দেখার। মেসির ভক্ত ছেলেকে নিয়ে তাই বিশ্বকাপের আসরে হাজির শর্মিষ্ঠা ও তাঁর আইনজীবী স্বামী ত্রিদিব দে। তিন মাস আগে থেকে বিশ্বকাপ দেখার পরিকল্পনাটা শুরু হলেও আর্জেন্তিনা শাড়ির কনসেপ্টটা মাথায় আসে রাশিয়া ভ্রমণের দিন কয়েক আগে। তখনও শর্মিষ্ঠা-ত্রিদিবদের হাতে দিন চার-পাঁচেকের সময় ছিল। কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের পরিচিত এক বুটিক তাঁর আর্জেন্তিনা শাড়ির কনসেপ্টটা হোয়াটস-অ্যাপ করে দিয়েছিলেন শর্মিষ্ঠা। পুরো শাড়িটা যে আর্জেন্তিনার বিখ্যাত নীল-সাদা বর্ডারের মধ্য হবে তাও বলে দিয়েছিলেন। শাড়ির আঁচলের নিচের একটা বিশাল অংশ সাদা রঙের এবং তাতে আর্জেন্তিনার সূর্যের লোগোর ডিজাইনটাও হোয়াটস অ্যাপ করে দিয়েছিলেন তিনি। আর অবশ্যই শাড়ির সঙ্গে কেতাদুরস্ত সাদা রঙের ব্লাউজ।
বলতে গেলে আর্জেন্তিনা শাড়ির কনসেপ্টে শর্মিষ্ঠা রাশিয়ায় ফুটবলপ্রেমীদের বোল্ড-আউট করে দিয়েছেন। ছেলে-স্বামীকে সঙ্গে করে সেন্ট-পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়া বনাম আর্জেন্তিনার খেলাও দেখেছেন। গলা ফাটিয়েছেন আর্জেন্তিনা-মেসিদের জন্য।
শর্মিষ্ঠার স্বামী ত্রিদিব দে-র কথায়, আসলে জলপাইগুড়ি মানেই আর্জেন্তিনা। মারাদোনা আর নীল-সাদা জার্সির উন্মাদানার মাঝেই বেড়ে ওঠা। আর ছেলে তমোঘ্ন তো মেসি আর আর্জেন্তিনা বলতে অজ্ঞান। সুতরাং, বিশ্বকাপ দেখা মানেই তো আর্জেন্তিনার জন্য আসা। বিশ্বকাপের টিকিট কাটা থেকে হোটেল বুকিং, রাশিয়া যাওয়ার যাবতীয় পরিকল্পনাটাই একার হাতে সামলেছেন শর্মিষ্ঠা ও ত্রিদিবের ছেলে তমোঘ্ন।
রাশিয়ায় পা রেখেই তাই শর্মিষ্ঠা এবং তাঁর পরিবার এখন পুরোপুরি নীল-সাদায় রঙিন হয়ে উঠেছে। আর তাঁদের এই রঙিন বাহারই এখন চোখ টাটাচ্ছে সকলের।