গলায় পদক, হাতে বাটি! বিজেপি শাসিত রাজ্যের একসময়ের সেরা ক্রীড়াবিদের এ কী হাল
মনমোহন সিং লোধি, মধ্য প্রদেশের স্বর্ণপদকজয়ী জাতীয় স্তরের প্যারা-দৌড়বিদ ছিলেন। এখন তাঁকে ভোপালের রাস্তায় ভিক্ষা করতে হচ্ছে, কারণ রাজ্য সরকার সরকার তাঁকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ
এশিয়ান গেমসে এবার সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স করে দেখিয়েছে ভারত। প্রতিযোগীরা সব ঘরে ফিরছেন। তাঁদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠছে দেশবাসী। মন্ত্রীদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লেগে গিয়েছে সংবর্ধনা দেওয়ার। কিন্তু পদকজয়ী খেলোয়াড়দের মাতায় রাখতে হবে এসব মাত্র কয়েকদিনের। এরপরই থিতিয়ে যাবে উচ্ছ্বাস। কেউ মনেও রাখবে না তাঁদের।
এরকমটাই তো ঘটেছে মনমোহন সিং লোধির ক্ষেত্রে। মধ্যপ্রদেশের প্যারা অ্যাথলিট। তিনিও স্বর্ণপদক-জয়ী। জাতীয় স্তরে বিভিন্ন ইভেন্ট থেকে ৬৯ টি পদক জিতেছিলেন তিনি। পদক জিতে আসার সময়ে তাঁকে নিয়েও উচ্ছ্বাস উৎসাহ কম ছিল না। অথচ আজ, সেই পদক গলায় ঝুলিয়ে ভোপালের রাস্তায় বাটি হাতে ভিক্ষা করতে নেমেছেন তিনি। নাহলে যে না খেয়ে মরে হবে!
সরকার কি কিছুই করেনি তাঁর জন্য? একেবারে কিছু করেনি বলা ভুল। মনমোহন জানিয়েছেন, মধ্য়প্রদেশের বিদেপি সরকারের কাছ থেকে বহু প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন একটা সরকারি চাকরির আশায় তিনি চার-চারবার দেখা করেছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী শিবরাজ চৌহানের সঙ্গে। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, প্রত্যেকবারই চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মনমোহনকে ফিরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া অন্য উপায় নেই তাঁর কাছে।
মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলার বাসিন্দা মনমোহন। বরাবরই দৌড়তে ভালবাসেন। ২০০৯ সালে এক দুর্ঘটনায় একটি হাত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। অংশ নিয়েছেন একের পর এক জাতীয় স্তরের প্যারা অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায়। শেষবার ট্র্যাকে নেমেছিলেন ২০১৭ সালে। সেইবার আমদাবাদে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় পেয়েছিলেন রুপো।
রাজ্য সরকার সেই বছর তাঁকে সেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার দিয়েছিল। সঙ্গে মিলেছিল সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি। একই বছরই আবার প্রতিবন্দীদের ৬০০০ চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। ফলে সব মিলিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন মনমোহন। কিন্তু আজ তাঁর সঙ্গী কেবলই হতাশা। অভিমানী মনমোহন আজ সংবাদ মাধ্যমে এশিয়াডে পদক জয়ীদের নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখেন, আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের বাটিটা নাড়তে নাড়তে এগিয়ে যান অন্ধকারময় পথে।