কূলদীপের ৪, চাহালের ২, কেদার ১ - ফের স্পিনের মায়াজালে আটকে গেল ব্ল্যাক-ক্যাপসরা
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) মাউন্ট মাউনগানুই-য়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৯০ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-০ ফলে এগিয়ে গেল ভারত।
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) মাউন্ট মাউনগানুই-য়ে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে পাটা পিচে নিউজিল্যান্ডকে ভারতের দেওয়া ৩২৫ রানের লক্ষ্যমাত্রাটা কম পড়তে পারে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু, ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে কিউইদের আত্মসমর্পনের কাহিনিটা এই ম্যাচেও অব্যাহত রইল। কূলদীপের ৪টি-সহ স্পিনাররা ৭ উইকেট নিলেন। ব্ল্যাক-ক্যাপসরা হারল ৯০ রানে।
এদিন রান তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই জুটির অভাবে ভুগেছে নিউজিল্যান্ড। আরও একটি অতি সাধারণ পারফরম্যান্স দেখা গেল তাদের তরফে। মাত্র ৪০ ওভারেই ২৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। একমাত্র অলরাউন্ডার ডাগ ব্রেসওয়েল (৪৬ বলে ৫৭) ছাড়া আর কেউ বড় রান পাননি।
৩০০-এর উপর রান তাড়া করতে গেলে পাওয়ার প্লের ওভারগুলিতে বড় রান তোলা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এদিন শামি ও ভূবনেশ্বর কুমার দুজনেই শুরুর ওভার গুলিতে কিউই ওপেনারদের এতটুকু মারার জায়গা দেননি। গাপ্টিল মাত্র ১৫ রান করলেও তার মধ্যেই একবার তাঁর ক্যাচ পড়ে, একবার রান আউটের হাত থেকে বাঁচেন। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম ওভারে ভুবির বলে থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
তবে শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে ব্য়াট করছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়রক কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু অপর প্রান্তে কলিন মুনরো একেবারেই রান তুলতে না পারায় একটু তড়িঘড়িই ব্য়াট চালাতে শুরু করেন তিনি। তাঁর খেলা দেখে মনে হচ্ছিল একাই ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারেন। ভারতে সৌভাগ্য তাঁর ইনিংস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অষ্টম ওভারে শামির বলে তিনি প্রথম ৪ বলে ৬,৬,৪,২ রান করেন। কিন্তু পঞ্চম বলটি তাঁর ব্যাটের ভিতরের কানায় লেগে সোজা উইকেট ভেঙে দেয়।
স্পিনাররা আসার আগেই প্ধান অস্ত্রকে হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। স্কোরবোর্ডে ৩০০-এর বেশি রানের স্কোর তাড়া করার মতো প্রত্যাশিত রানও ছিল না। এই আদর্শ মঞ্চটিকে দারুণভাবে ব্যবহার করলেন ভারতের তিন স্পিনার - কুলদীপ, চাহাল ও কেদার যাদব। প্রথমে কলিন মুনরো (৩১)-কে এলবিডব্লু করেন চাহাল। এর কিছু পরেই কিউই ব্যাটিংয়ের দ্বিতীয় ভরসা রস টেলর (২২)-কে তুলে নেন কেদার যাদব। আর ল্যাথাম (৩৪)-কে ফেরান কুলদীপ।
২৫ ওভার হতে না হতেই মিডল অর্ডার ধ্বসে যাওয়ায় ব্ল্যাক-ক্যাপসদের লোয়ার মিডল অর্ডারের উপর বিশাল দায়িত্ব এসে পড়ে। এখান থেকে কোনও অঘটন না ঘটলে ম্যাচ জেতা নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সম্ভব ছিল না, তা হয়ওনি। হেনরি নিকোলস (৩৮ বলে ২৮) দ্রুত রান তুলতে পারেননি, আবার শুরুতেই চালাতে গি.য়ে উইকেট খুইয়েছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমি (৩)।
একমাত্র চেষ্টা করেছিলেন ডাগ ব্রেসওয়েল। ৫টি চার ও ৩টি ছয় মেরে তিনি ৪৬ বলে ৫৭ রান করেন। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর প্রথম অর্ধশতরানের জোরে দলের রান ২০০ পার করলেও ভারতের রান তাড়া করার পক্ষে এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ভূবনেশ্বর কুমারের বলে তিনি শিখরের হাতে ধরা পড়েন।
একমাত্র বিজয় শঙ্কর ছাড়া ভারতীয় বোলাররা এদিন প্রত্যেকেই ভাল বল করেছেন। কুলদীপের ৪ উইকেটের পাশাপাশি ভুবনেশ্বর চাহাল ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট পান শামি ও কেদার। একমাত্র কেন উইলিয়ামসনের হাতে ১ ওভারে মার খাওয়া ছাড়া দারুণ ছন্দে বল করেন বাংলার পেসার।
তার আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (৮৭) ও শিখর ধাওয়ান (৬৬) - দুজনে জুটিতে ১৫৪ রান তুলে ভারতকে বড় ইনিংস গড়ার একটা মজবুত ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ফিরতেই ম্যাচে ফিরেছিল নিউজিল্যান্ড।
৩০ ওভারে ২ উইকেটে ১৭২ রান থেকে ভারত শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ৩২৪ রানের বেশি এগোতে পারেনি। বিশেষ করে অধিনায়ক কোহলি ৪৩ রানে ফেরার পর রায়ডু-ধোনির জুটি অত্যন্ত মন্থর ব্যাটিং করেন। একসময় ২৪ বলে ২৯ রান করা রায়ডু পরের ২৫ বেল মাত্র ১৮ রান করেন। তাঁর ব্যাটিং নিয়ে কিন্তু ফের প্রশ্ন উঠছে। এই সময় ৪- থেকে ৪৫ ওভারের মধ্যে ভারত মাত্র ২৯ রান তুলেছিল।
রায়ডু ফিরতে কেদার যাদব (১০ বলে অপরাজিত ২২)-কে নিয়ে ধোনি (৩৩ বলে অপরাজিত ৪৮) অবশ্য শেষ পাঁচ ওভারে অনেকটাই মেক-আপ দেন।