অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, মিলল সব উত্তরই! তৃতীয় ম্যাচেই সিরিজের ফয়সালা করে ফেলল ভারত
মাউন্ট মাউনগানুই-য়ে নিউজিল্যান্ড বনাম ভারত তৃতীয় ওডিআই ম্যাচের প্রতিবেদন।
ব্যাটিং-এর সময় কিছুটা লড়লেন রস টেলর (৯৩) ও টম ল্যাথাম (৫১)। কিন্তু তারপরেও ভারতীয় বোলারদের শৃঙ্খলিত পারফরম্যান্সে ৪৯ ওভারে মাত্র ২৪৩ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড ইনিংস। জবাবে রোহিত ও বিরাটের শতরানের জুটির ভিতে দাঁড়িয়ে ভারতকে ৭ উইকেটে জয় এনে দিলেন রায়ডু (৪০*) ও কার্তিক (৩৮*)। ফলে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ পকেটে পুড়ে নিল বিরাট বাহিনী।
শৃঙ্খলিত বোলিং প্রচেষ্টা, শক্তিশালী ব্যাটিং দর্শন, চেনা ফলাফল - ম্যাচের পর ম্যাচ একই স্ক্রিপ্ট মেনে খেল যাচ্ছে ভারত। আর এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জেরেই অধিনায়ক বিশ্রামে যাওয়ার আগেই সিরিজ জিতে নিল তাঁর দল। ৪১ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে মহম্মদ শামি ম্যাচের সেরা হলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ছাড়াও ২টি করে উইকেট নিলেন আরও ৩ বোলার।
রোহিত শর্মা (৬২) ও বিরাট কোহলি (৬০) ১১৩ রান জুটি গড়ে আউট হয়ে গেলেও সমস্যায় পড়ল না মিডল অর্ডার। নজরে থাকা ব্যাটস্য়ান রায়ডু ও ধোনির পরিবর্ত উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলা কার্তিক মিলে ভারতকে ঠান্ডা মাথায় জয়ের রানটা পার করিয়ে দিলেন।
এমনকী বিতর্কে জর্জরিত হার্দিক পাণ্ডিয়াও দলে ফিরে এসেই বলে-ফিল্ডিংয়ে অবদান রাখলেন। ২টি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মিড উইকেটে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দিলেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন (২৮)-কে। অর্থাত বিশ্বকাপের আগে প্রায় সব প্রশ্নেরই জবাব পেয়ে গেল ভারত।
এদিন নিউজিল্যান্ড ও ভারতের ইনিংসের শুরুটা ছিল একেবারেই বিপরীতধর্মী। ভুবি-শামি পাওয়ার প্লের মধ্যেই মুনরো (৭) ও গাপ্টিল (১৩)-কে ফিরিয়ে দিয়ে কিউইদের ধাক্কা দিয়েছিলেন। শিখর-রোহিত একেবারে প্রথম থেকেই ছিলেন মারমুখি। বিশেষ করে শিখর ব্যাট চালালেই বল বাউন্ডারি লাইন পার করছিল। তবে তিনি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার মুখে তাঁকে আটকান ট্রেন্ট বোল্ট। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে বাঁ-হাতি ওপেনার ২৮ রান করে যান।
তবে তাঁর উইকেট পড়ার কোনও প্রভাবই ভারতীয় ব্যাটিংয়ে পড়েনি। কারণ ক্রিজে জুটি বাঁধেন বহু যুদ্ধের নায়ক ভারতের অধিনায়ক-সহঅধিনায়ক। পাওয়ার প্লে-র পর থেকে কোনও ঝুঁকির রাস্তায় না গিয়ে একেবারে মাপা ছন্দে তাঁরা ভারতীয় ইনিংস টেনে নিয়ে যান। ইনিংসের পরের দিকে অবশ্য তাঁরা নিয়মিত বাউন্ডারি পেতে শুরু করেন। লোকি ফার্গুসনের বলে ছয় মেরে ১৫ বলে একদিনের ক্রিকেটে তাঁদের ১৬ তম শতরানের জুটি সম্পূর্ণ করেন কোহলি।
যথারীতি একেবারে তেল দেওয়া যন্ত্রের মতোই মসৃণ গতিতে এগোচ্ছিল তাদের জুটি। কিন্তু এরপরই এই ম্যাচে না হলেও সম্ভবত বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা ভেবে রান তোলার গতি বাড়াতে গিয়েই পর পর আউট হয়ে যান এই দুই সেট ব্যাটসম্য়ান। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমির বদলে দলে আসা মিচেল স্যান্টনারের বলে স্টাম্পড হন রোহিত। আর কোহলি বোল্টের একটি বল কভারের উপর দিয়ে ওড়াতে গিয়ে ধরা পড়েন নিকোলস-এর হাতে।
এই সময় ভারতের স্কোর ছিল ৩১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৮। ফলে ভারতকে ফিনিশিং লাইনটা পার করানোর দায়িত্ব এসে পড়ে মিডল অর্ডারের ঘাড়ে। এই কাজটা একেবারে নিখুঁতভাবে করে গেলেন রায়ডু ও দীনেশ কার্তিক। এই ম্যাচের আগে রায়ডুর রান না পাওয়া, সবচেয়ে বড় কথা ক্রিজে হঠাত হঠাত আটকে যাওয়া নিয়ে কথা উঠেছিল। এদিন কিন্তু তাঁকে বেশ স্বচ্ছন্দে ব্যাট করতে দেখা গেল। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে তাঁরা ৭৭ রান তুলে ৪৪তম ওভারেই ম্য়াচ খতম করে দেন।
তার আগে নিউজিল্যান্ড ইনিংসে একেবারে এই বছরে ভারতের একিনের ক্রিকেটের ছক মেনে শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছিলেন ভুবি ও শামি। এদিন নিয়ে ২০১৯-এ ৬টি একদিনের ম্যাচেই প্রথম পাওয়ার প্লে-র মধ্যে প্রতিপক্ষের দুই উইকেট ফেলে দেন ভারতীয় জোরে বোলাররা। তারপর স্পিনার-জুটি ও হার্দিকের সমন্বয়ে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং-কে আরও একবার অবদমিত করে রাখে ভারত।
তবে ১৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৫৯ রান থেকে টেলর-ল্যাথাম জুটি ব্ল্যাক-ক্যাপসদের ইনিংস ৩৭ ওভারে ১৭৮/৪ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। কিন্তু, রানের গতি বাড়ানোর চাপের শিকার হয়ে তাঁরা ফিরতেই তাদের লোয়ার মিডল ওর্ডার দ্রুত গুটিয়ে যায়। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে এদিন একমাত্র কুলদীপই উইকেটহীন থাকেন। ভুবনেশ্বর, চাহাল, পাণ্ডিয়া প্রত্যেকেই ২ উইকেট করে পেয়েছেন।