ভারতের 'বিগ থ্রি' বনাম নিউজিল্যান্ড 'বিগ থ্রি' - এই লড়াই জিতবে কে, কী বলছে পরিসংখ্যান, জেনে নিন
নিউজিল্যান্ড ও ভারত উভয় পক্ষই তাদের টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটসম্যানের উপর নির্ভরশীল। কাজেই আসন্ন ওডিআই সিরিজকে 'বিগ থ্রি'-র যুদ্ধ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং আক্রমণ থেকে বিরাট কোহলি ও কেন উইলিয়ামসনের মতো দুই দুর্ধর্ষ ব্য়াটম্য়ানের নেতৃত্ব - নিউজিল্যান্ড ও ভারতে মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে। এমনকী দুই দলই বিশ্বকাপের কয়েকমাস আগে সমস্যায় রয়েছে লোয়ার মিডল অর্ডার নিয়ে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর সামঞ্জস্য দুই দলেরই 'বিগ থ্রি', অর্থাত টপ অর্ডারের প্রথম ৩ ব্য়াটসম্যানের উপর নির্ভরশীলতা।
ভারতের হাতে রয়েছে রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি - যাদের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্য়তম সেরা ব্য়াটিং-ত্রয়ী বলা হয়। অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের জবাব - মার্টিন গাপ্টিল, রস টেলর ও কেন উইলিয়ামসন। রোহিতের মতো গাপ্টিলও একদিনের ক্রিকটের অন্যতম সেরা ওপেনার। কেন উইলিয়ামসন তো আধুনিক ক্রিকেটের সেরা চার ব্যাটসম্য়ানের একজন। আর রস টেলর নিজেকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন।
ভারতের 'বিগ থ্রি'
আজিঙ্কা রাহানে ও সুরেশ রায়নার একদিনের দল থেকে হারিয়ে যাওয়া ও একই সমযে মহেন্দ্র সিং ধোনির ফর্মের পতনের পর গত কয়েক বছরে ভারতের ব্য়াটিং-কে নিজেদের কাঁধে বয়েছেন রোহিত-শিখর-বিরাট। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ভারতের মোট রানের ৫২.০৬ শতাংশই এসেছে এই তিনজনের ব্য়াট থেকে। ৪৮টি শতরানের ৩৯টি রয়েছে এঁদের কারোর না কারোর নামে। মোট ৪২টি ম্যাচে তাঁরা তিনজনেই একসঙ্গে খেলেছেন। শুধু সেই ম্যাচগুলির পরিসংখ্যান বিচার করলে রানের শতাংশ হিসাবটা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬৫.৪৬%। শতরানের হিসেব ৩১টির মধ্যে ২৯টি।
নিউজিল্যান্ডের 'বিগ থ্রি'
ব্ল্যাক ক্যাপসদের কাহিনিটাও একই। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে তাদের দলের মোট রানের ৪৬.৩৬ শতাংশ রান করেছেন গাপ্টিল-উইলিয়ামসন-টেলর মিলে। ২৬টি শতরানের ২০টির মালিক তাঁরা তিনজনই। তিলজনে একসঙ্গে খেলেছেন মোট ৩৪টি ম্যাচ। বিরাটদের মতো তাঁদের ক্ষেত্রেও শুধু এই ম্যাচগুলি ধরলে তাদের ব্য়াটিং-এর প্রভাবটা আরও বেড়ে যায়। এই ক্ষেত্রে রানের হিসাব ৫৬.৮২%।
জুটি গড়ায়
দুই দলেই ব্য়াটিং ত্রয়ীরা পর পর ব্য়াট করেন। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের নিজেদের মধ্যে জুটি গড়ে ওঠে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে গাপ্টিল-উইলিয়ামসন-টেলর নিজেদের মধ্যে ৬৬ বার জুটি গড়েছেন। ১২ টি শতরানের ও ১৭ টি অর্ধশতরানের জুটি-সহ তাঁদের রানের গড় ৫৮.৯৭। উইলিয়ামসন-টেলর তো মোট ২৪বারের জুটিতে ৬৫.৮৩ গড়ে রান করে একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা জুটি হয়েছেন।
ভারতীয় ত্রয়ী সামান্য হলেও এগিয়ে আছেন। একই সময়কালে ৯৭বার জুটি গড়ে বিরাটদের রানের গড় ৬২.৯৭। কোহলি-রোহিত ২৫টি ইনিংসে জুটিতে ৯১.৩৫ গড়ে রান করেছেন। আর রোহিত-শিখরের জুটির ২টি কম ইনিংস খেলে রানের গড় ৭৮.৮১।
দলের জয়ে অবদান
যে ৩৪টি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের 'বিগ থ্রি'-এর সবাই খেলেছেন, তারমধ্যে জেতা ম্যাচে তাদের রানের গড় ৬৭.০৬। আর যে ম্যাচে নিউজিল্যান্ড হেরেছে সেই ম্য়াচে গাপ্টিল-উইলিয়ামসন-টেলরের রানের গড় ৩৮.১৯। গত ৪ বছরে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড মাত্র ২টি সিরিজ হেরেছে. সেই হেরে যাওয়া ৬টি ম্যাচের মাত্র ১টিতে ৩ জনেই একসঙ্গে খেলেছিলেন।
ভারতীয় ত্রয়ী তুলনামূলকভাবে পরাজয়ের ম্যাচেও ভাল রান করেছেন, গড় ৫৩.৩৩। আর জেতা ম্যাচগুলি ভারত জিতেছে তাতে রোহিত-শিখর-বিরাটের রানের গড় ৭৪.৫৩।
'বিগ থ্রি'-দের ধারাবাহিকতা
যে ৪২ টি ম্য়াচ রোহিত-শিখর-বিরাট একসঙ্গে খেলেছেন, তার ৩৬টিতেই ৩ জনের একজন ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। এর ২১টিতে ভারত জিতেছে। আর বাকি যে ৬টি ম্যাচে অন্য কেউ সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছেন, তার ৩টিতে ভারত পরাজিত হয়েছে। গত ৪ বছরের এই তিনজনের কেউ বড় রান না পেলে ভারত ২৫০-এর বেশি রানের স্কোর তাড়া করে ১বারও জিততে পারেনি।
নিউজিল্য়ান্ডের 'বিগ থ্রি' তাদের একত্রে খেলা ৩৪টি ম্যাচের ২৫টিতে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছেন, যার ১৫টিতে জয় পেয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। এর মধ্যে ১৭টি ম্য়াচে নিউজিল্যান্ড আগে ব্য়াট করেছে। এর ১০টিতে তাদের দল জিতেছিল।