২০০৩-এর বদলা! ক্রিকেটার দ্রাবিড়ের অপ্রাপ্তি ভুলিয়ে দিল কোচ দ্রাবিড়ের বিশ্বকাপ
স্মৃতির সারণী বেয়ে অনেকটা পথ হাঁটলে অনেক কিছু অতিক্রম করে এসেছেন। আর আজ এল সেই চূড়ান্ত সাফল্য তাঁর হাতে তৈরি ছেলেরা আজ বিশ্বজয়ী।
কতটা পথ পেরোলো তবে পথিক বলা যায়..। ভারতীয় অনুর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ী দলের কোচ হিসেবে বোধহয় মনে মনে এই কথাটাই ভাবছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। ২০০৩ সালে নিজে প্লেয়ার হিসেবে পৌঁছেছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। তবে অধরা মাধুরী ছুঁয়ে দেখা হয়নি।
কিন্তু ২০১৮ সালে দ্রাবিড় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন পেলেন পূর্ণতা। কোচ হিসেবেই হোক না, ক্ষতি কী। ২০০৩ সালের দগদগে ক্ষতটা আজও মনে অমলিন সৌরভ- দ্রাবিড়দের। তাঁদের কাছের মানুষরা সকলেই জানেন। ২০০৩ সালে জোহনেসবার্গে -র ফাইনালে ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ১২৫ রানে। সেদিন সেই লড়াইয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেছিলেন শেওয়াগ এবং দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছিলেন দ্রাবিড়। কিন্তু অজিদের বিরুদ্ধে লড়াইতে সেটুকু যথেষ্ট ছিল না। সেদিন রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হয়েছিল ভারতকে।
আজ সেখান থেকে অনেকটা পথ হেঁটে এসেছেন দ্রাবিড়। তাঁর জীবনটাই যেন দ্বিতীয় হওয়ার জন্যেই। এমনটাই তো হয়ে এসেছে, কেরিয়ারের শুরু-র দিন থেকে। তাঁর ও সৌরভের অভিষেক ম্যাচ তিনিও খেললেন ও সৌরভও খেললেন, নিজের পারফরম্যান্সে শিরোনাম ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বাংলার মহারাজ, তিনি হয়ে রইলেন দ্বিতীয়। কলকাতার ইডেন ম্যাচে লক্ষ্মণ ও দ্রাবিড়ের ঐতিহাসির পার্টনারশিপ সেখানেও দ্বিতীয়। এই দ্বিতীয় হওয়াটাই যেন ভারতীয় ক্রিকেটের এই মহারথীর ভাগ্যে ছিল।
কিন্তু টেকনিক্যালি পারফেক্ট , ভারতীয় ক্রিকেটের দ্য ওয়াল তো শুধু এইভাবে দ্বিতীয় হওয়ার জন্য আসেননি। তিনি এসেছেন সেরা হতে। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও ক্রিকেটেই থেকে গেছেন তিনি। এখন তিনি গুরু। ভারতীয় এ দলে সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করানোর পর তাঁর হাতে অনুর্ধ্ব ১৯ দলের দায়িত্ব তুলে দেয় বিসিসিআই। পৃথ্বী, শুভমান, নাগারকোটিদের নিজে হাতে দায়িত্ব নিয়ে পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি।
ফাইনালের আগেও দ্রাবিড় স্যারের দাওয়াই ছিল নো ফোন। শনিবারে ভারতীয় দলের টোট্যাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে দিল ক্রিকেটার দ্রাবিড়ের যা আক্ষেপ না পাওয়া রয়ে গেছে , তা যেন কোচ দ্রাবিড়ের না থাকে। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি অবিচল থেকে ছেলেদের থেকে সেরাটা বার করে আনতে পেরেছেন। ক্রিকেটার দ্রাবিড় যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স হয়েই থেকে গিয়েছিলেন, কোচ দ্রাবিড় আর সেই অপ্রাপ্তিতে আটকে থাকতে চাননি। তাই ছেলেদের মধ্যে ভরে দিয়েছিলেন লডা়ইয়ের বারুদ। যার বিস্ফোরণে উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপ জিতেও নিজেকে কোনও রকম কৃতিত্বের ভাগীদার করতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন তিনি। তাঁর একটাই কথা ছেলেরা ১৪ মাস ধরে অসামাণ্য পরিশ্রম করেছে। আর এই বিশ্বকাপ সেটারই ফসল। ভারতীয় ক্রিকেটের মিস্টার পারফেক্ট তবে এদিন পূর্নতা পেলেন। হাতে পেলেন বিশ্বকাপ।