মহিলা টি২০ বিশ্বকাপ ২০১৮, চোখ রাখুন ভারতের এই পাঁচ খেলোয়াড়ের দিকে
৫ জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যাঁরা ভারতকে তাদের প্রথম মহিলা টি ২০ বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন।
শুক্রবার (৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে আইসিসি মহিলা টি২০ বিশ্বকাপ। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবারের আয়োজক দেশ। ২০১৬ সালে নিজেদের ঘরের মাঠে খেলা হলেও টি২০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় ভারতের মহিলা দল।
তবে নতুন কোচ রমেশ পাওয়ারের অধীনে ভারতের মহিলা দলের টি২০-তে সাম্প্রতিক ফল বেশ ভাল। সদ্য সমাপ্ত সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ৪-০ ফলে হারিয়েছে হরমনপ্রিত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারত। অপেক্ষাকৃত তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড় হয়েছে এবারের ভারতীয় দল। সামগ্রিক দল হিসেবেই ভারত ভাল পারফর্ম করলেও, এই ভারতীয় দলে এমন কিছু খেলোয়াড় আছেন যাঁরা ভারতকে প্রথমবার মহিলা টি২০ বিশ্বকাপ জেতাতে মুখ্য ভূমিকা নিতে পারেন।
জেমাইমা রড্রিগেজ
তাঁকে ভারতের মহিলা ক্রিকেটের ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে দেখা হয়। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মুম্বইয়ের এই টিনএজ সেনসেশন ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। তাঁর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন ইংল্যা্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেনও। ইতিমধ্যেই তিনি ভারতকে বেশ কিছু ম্য়াচ জিতিয়েছেন। ১০টি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলে তিনি মোট ৩৩৪ রান করেছেন। তিনি শুধু ধারাবাহিকভাবে রান করে গিয়েছেন তাই নয়, তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৩৭.১৪। অর্থাত ডেথ ওভারে বা যখনই দ্রুত রান তোলার দরকার হবে, তখন ভারত ভরসা করতে পারে জেমাইমার উপর।
পুনম যাদব
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের মহিলা দলের বোলিং বিভাগে প্রাধান্য রয়েছে স্পিনারদের। আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে জোরে বোলার ঝুলন গোস্বামী অবসর নেওয়ার পর এই প্রাধান্য আরও বেড়েছে। চলতি টি২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে আছেন চারজন স্পিনার। তবে আশার কথা গায়ানার যে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে খেলা হবে, তা স্পিন সহায়ক। এই অবস্থায় ভারতীয় বোলিং আক্রমণে মুখ্য ভূমিকা নিতে পারেন লেগ স্পিনার পুনম যাদব। ৪৩টি টি২০আই খেলে পুনম ৬১টি উইকেট দখল করেছেন। এর মধ্যে দুবার ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন। সেরা বোলিং, ৯ রানে ৪ উইকেট!
দীপ্তি শর্মা
একদিনের ম্যাচে ভারতের মহিলা দলের তারকা তিনি। আইসিসির সাম্প্রতিক ক্রমতালিকায় অলরাউন্ডারদের মধ্যে তিনি রয়েছেন ৩ নম্বরে। ২১ বছরের আগ্রার এই ক্রিকেটা কিন্তু টি২০ ক্রিকেটে এখনও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। ৯টি টি২০ ম্যাচে তাঁর ডানহাতি অফস্পিন বলে ১৮টি উইকেট এলেও ব্য়াটিংয়ে এখনও তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটেনি। ৯ ইনিংসে এখনও অবধি মাত্র ৯৫ রান করতে পেরেছেন তিনি। এই টি২০ বিশ্বকাপ কিন্তু ক্রিকেটে বিশ্বকে তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে জানান দেওয়ায় সেরা মঞ্চ।
স্মৃতি মান্ধানা
খুব বেশিদিন লাগেনি, তার মধ্যেই ভারতীয় মহিলা দলের ব্যাটিংয়ের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন স্মৃতি। চলতি বছরে তিনি ফর্মের একেবারে শীর্ষে রয়েছেন। কেআইএ সুপার লিগে সর্বোচ্চ রান করে তিনি প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর আদর্শ শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা। সাঙ্গাকারাও কিন্তু স্মৃতির ব্যাটিংয়ের ভক্ত হয়ে উঠেছেন। আন্তর্জাতিক টি২০-তে তিনি ভারতের মহিলা দলের দ্রুততম শতরান করার রেকর্ডের অধিকারী। মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে তিনি দু-দুবার রেকর্ড বইতে নাম তুলেছিলেন। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করেন ৩০ বলে ৫০, এরপরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই রেকর্ড আরও উন্নত করেন ২৫ বলে অর্ধশতরান করে। নিঃসন্দেহে টপ অর্ডারে তাঁর মারকুটে ব্যাটিং প্রতিপক্ষ বোলারদের মনে ভয় ধরাবে।
হরমনপ্রিত কৌর
ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে বলা যেতে পারে বিপ্লব এনেছেন দলের অধিনায়ক হরমনপ্রিত কৌর। পুরুষ-মহিলা সব ক্রিকেটারের মধ্যে তিনিই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগের দল সিডনি থান্ডারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ইংল্যান্ডের কেআইএ সুপার লিগেও সই করা প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার তিনিই। ২৯ বছরের এই নহিলা ক্রিকেটারের আদর্শ হলেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ। আর তিনি ব্যাটও করেন সেওয়াগীয় ব্যাটিং দর্শনে - বল দেখ, বল মারো। ভারতের ব্যাটিং ইনিংসের ডেথ ওভারে দ্রুত রান তোলার ভার নেন তিনিই। আর এই মুহূর্তে তিনি বিস্ফোরক ফর্মে আছেন। গত ৬ ম্যাচের মধ্যে ৩টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি টি২০ ক্রিকেটে। তারমধ্যে আছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচে করা ৩২ বলে ৬৪ রানের ইনিংসও। তাঁর ব্যাট বিশ্বকাপেও এই ভাবে চললে আশা করাই যায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই তিনি ভারতের মহিলা দলকে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জেতাবেন।