আই লিগ ২০১৮-১৯: ভেঙে গেল কাশ্মীরি প্রতিরোধ! সবুজ-মেরুণের কান্ডারি সেই ডিকা-কিসেকা
শ্রীনগরের রিয়াল কাশ্মীর এফসি বনাম মোহন বাগান, আইলিগ ২০১৮-১৯-এর ম্যাচের প্রতিবেদন।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) শ্রীনগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই তাপমাত্রাতেই আইলিগ ২০১৮-১৯ মরসুমের ম্যাচে রিয়াল কাশ্মীর এফসি-র ঘরের মাঠ টিআরসি টার্ফ গ্রাউন্ডে কাশ্মীরের দলটির মুখোমুখি হয়েছিল গঙ্গাপাড়ের মোহনবাগান। এদিন শঙ্করলাল চক্রবর্তীর ছেলেদের সামনে প্রতিপক্ষ একটা ছিল না। রিয়াল কাশ্মীরের উজ্জীবিত ফুটবল ছিল, ছিল অনভ্যস্ত ঠান্ডা, ছিল ম্যাচ জুড়ে ক্রমাগত রিয়ালের জন্য গলা ফাটানো স্থানীয় সমর্থকরা।
আর এই সব বাধা মোহনবাগান পেরিয়ে গেল সেই কলকাতা লিগ দেওয়া ডিকা-কিসেকা জুটির দৌলতে। প্রথমার্ধে ম্যাচের ফল গোলশূন্য থাকলেও, ৬৯ মিনিটে মোহনবাগানের স্ট্রাইকার জুটির কয়েক মুহূর্তের ম্য়াজিকে ম্যাচের একমাত্র গোল এল। গোলটি শেষ পর্যন্ত ডিকা করলেও, সিংহভাগ কৃতিত্ব কিসেকার। কাশ্মীরের বক্সের বাঁপ্রান্তে চমতকার ড্রিবলে রবার্টনকে পেরিয়েই বক্সের মধ্যে ক্রস তুলেছিলেন কিসেকা। আর সঠিক সময়ে মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে বক্সে পৌঁছে যান ডিকা। মাথার ছোঁয়ায় সেই বল রিয়াল কাশ্মীরের গোলে জড়িয়ে দেন। ফলে রিয়াল কাশ্মীরকে ০-১ গোলে হারিয়ে ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে ২ নম্বরে উঠে গেল মোহনবাগান।
শুরুতে ঝড়
কাগজে কলমে মোহনবাগান অনেক এগিয়ে ছিল রিয়াল কাশ্মীরের থেকে। তাই শুরুতেই ঘরের মাঠে গোল তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল রিয়াল কাশ্মীর। প্রথম ১৫ মিনিটে ক্রিজো, বাজি আর্মান্দো, দানিশ ফারুখরা একের পর এক হানা দিয়ে গিয়েছেন বাগান রক্ষণে। এদনি কিন্তু কিমিকিমার বদলে নামা দলরাজ বেশ ভাল খেললেন। কিংসলেও এদিন ভুল প্রায় করেননি বললেই চলে। তাই আক্রমণের ঝড় তুললেও কাজের কাজটা করতে পারেনি রিয়াল কাশ্মীর।
আক্রমণে মোহনবাগান
ম্যাচে সবুজ মেরুণ প্রথম আক্রমণের সুযোগ পায় ম্যাচের ১৬ মিনিটের মাথায়। আম্বেদকরের লম্বা থরো ইন থেকে কাশ্মীরের গেলো হেড নিয়েছিলেন ডিকা। কিন্তু রিয়াল গোলরক্ষক বিলাল খান তা প্রতিহত করেন। বিলাল কিন্তু আজ অনেক ক্ষেত্রেই দলের নিশ্চিত পতন বাঁচিয়েছেন। কিন্তু একবার খোলস ছেড়ে বের হতেই ধীরে ধীরে মাঝমাঠের দখল নিতে শুরু করে মোহনবাগান। তারা প্রথম ভাল সুযোগ পায় অবশ্য ম্যাচের ৪০ মিনিটের মাথায়। ডানপ্রান্তে পিন্টুর জন্য দারুণ থ্রু-বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন ওমর। তবে এক্ষেত্রেও গোল হওয়া আটকান বিলাল। এর ৩ মিনিট পরেই ফ্রিকিক থেকে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন কিসেকা। বাঁ-পোস্ট ঘেসা সেই বলও আটকে দেন রিয়াল গোলরক্ষক।
তেল খাওয়া মেশিন
ম্যাচে বাগান জিতলেও এদিন দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে মন ভরিয়ে দিয়েছেন রিয়াল কাশ্মীরের ফুটবলাররা। গোটা ম্যাচেই একের পর এক পরিকল্পনামাফিক আক্রমণ তুলে এনেছে। আবার তারপরই তেল খাওয়া মেশিনের মতো দ্রুত গতিতে নেমে এসেছে নিচে। ফলে জমিতে বল রেখে খেলার সুযোগ পায়নি মোহনবাগান। পরিবর্তে এদিন সবুজ মেরুণ বেশিরভাগ সময়ই বল তুলে খেলতে বাধ্য হয়েছে। আর এই শূন্যের বলে সবক্ষেত্রে অভ্রান্ত ছিলেন না বাগান খেলোয়াড়রা। তে শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধে গোলে শট নেওয়া, বলের দখল সব দিক থেকে এগিয়েি শেষ করেছিল গঙ্গাপাড়ের ক্লাব।
ডিকা-কিসেকা জাদু মুহূর্ত
দ্বিতীয়ার্ধেও প্রথমার্ধের মতোই তীব্র আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে কাশ্মীরের দলটি। ৫৮ মিনিটে দানিশ ফারুক, বাজি আর্মান্দের জন্য যে বল নামিয়ে দিয়েছিলেন তা থেকে গোল হতেই পার। কিন্তু আর্মান্দো গোলের বাইরে মারেন। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাত হঠাত আক্রমণ শানাচ্ছিলেন ডিকারা। ৬০ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে আম্বেদকরের তোলা ক্রসে হেড করে ডিকা প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন। অল্পের জন্য বাঁপোস্টের বাইরে দিয়ে মাঠের বাইরে যায় সেই বল। কিন্তু এর ৯ মিনিট পরেই প্রায় একই ভঙ্গীতে গোল পান ডিকা। শুধু এক্ষেত্রে ক্রস বাড়িয়েছিলেন কিসেকা। কলকাতা লিগের পর এই দুই বিদেশীর বোঝাপড়া আইলিগেও জাদু দেখাচ্ছে।
রিয়াল চেষ্টা
গোল খাওয়ার পর আরও তেড়েফুড়ে আক্রমণে আসে রিয়াল কাশ্মীর। ৬০ মিনিটের মাথাতেই উইঙ্গার নগেন তামাংকে নামিয়েছিলেন রিয়াল কাশ্মীর কোচ ডেভ রবার্টসন। গোল খাওয়ার পর আরও আক্রমণাত্মক হতে চেয়ে মাঝমাঠের খেলোয়াড় কায়ুমকে তুলে তিনি নামান স্ট্রাইকার নাদং ভুটিয়াকে। তাতেও কাজ না হওয়ায় ৮২ মিনিটে ডিফেন্ডার রাভাননকে তুলে নামিয়ে দেন ফারহান গনিকে। পাল্টা ডিকাকে তুলে মাঝমাঠে রক্ষমাতচ্মক মিডফিল্ডার শিল্টন ডিসিলভাকে নামিয়েছিলেন শঙ্করলাল। একের পর এক আক্রমণ করেও অ্যাটাকিং থার্ডে ভেদ শক্তির অভাবে বার বার আটকে গিয়েছে আইলিগের নবাগতরা। শেষের দিকে ক্রিজোকে আটকাতে গিয়ে হলুদ কার্ডও দেখতে হয় ইউতাকে।
এই ম্যাচে জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গলকেও টপকে গেল মোহবাগান। ১ ম্য়াচ কম খেলে লাল-হলুদের পয়েন্ট ৬। শীর্ষে থাকা চেন্নাই মোহনবাগানের থেকে ১ ম্যাচ বেশি খেলে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। আর কাশ্মীরের দলটি ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রইল ৮ নম্বরে। সবুজ মেরুন এরপর আগামী রবিবার (২৫ নভেম্বর) ঘরের মাঠে মুখোমুখি হবে চার্চিল ব্রাদার্সের।