বাংলাকে জগৎসভায় সেরার আসন দিল বাঙালি কন্যা সায়নীর ‘সাগর’-পারের কাহিনি
জলের লড়াইয়ে বহু প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে বিজয়িনী হয়ে বাংলাকে গর্বিত করলেন যিনি, তিনি হলেন সায়নী দাস।
তিনি হার মানতে শেখেননি। শেখেননি লক্ষ্য থেকে পিছু হটতে। সেই জেদ আর জয়ের খিদেকে পাথেয় করে এ বছর আরও এক বাঙালি কন্যা জগৎসভায় বাংলার মুখ উজ্জ্বল করল। বাংলাকে তুলে ধরল বিশ্বের দরবারে। জলের লড়াইয়ে বহু প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে বিজয়িনী হয়ে বাংলাকে গর্বিত করলেন যিনি, তিনি হলেন সায়নী দাস।
বর্ধমানের কালনার সায়নী। সাঁতরে বাংলার মুকুটে গর্বের নয়া পালক এনে দিয়েছেন এই বাঙালি কন্যা। আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় চালু রীতি ভেঙে রাতের বদলে ভরদুপুরে সাগরে নামে কিস্তিমাত করেন তিনি। ১৪ ঘণ্টা ৮ মিনিট লড়াই করে ভোর ৩টে ৩ মিনিটে তিনি টার্গেট স্পর্শ করেন। সেই সঙ্গে রচনা হয় নতুন ইতিহাস।
মেয়ের ইতিহাস গড়ার দিন সঙ্গে ছিলেন বাবা রাধেশ্যাম দাস। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তিনি। মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়ে একদিন ইংলিশ চ্যানেল বিজয়িনী হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি আজ গর্বিত বাবা। মেয়ের এই সফরে তিনি বোটে থেকে দেখেছেন, কম তাপমাত্রায়, ঢেউ কাটিয়ে, শ্যাওলা-জলজ উদ্ভিজের কাঁটা ভেদ করে কীভাবে তাঁর মেয়ে লক্ষ্যপূরণ করেছেন।
১৯৫৯ সাল থেকে ২০১৭। বঙ্গ ললনাদের ইংলিশ চ্যালেন বিজয়ের একের পর এক ইতিহাস তৈরি হয়েছে। আরতি সাহা প্রথম ইংলিশ চ্যানেল বিজয়িনী হয়েছিলেন। তারপর বুলা চৌধুরী, অমৃতা দাস, রেশমী শর্মা, তাহরিনা নাসিরিনের পর সেই কীর্তি ছুঁলেন সায়নী। রেশমী বাংলার প্রতিনিধিত্ব করলেও, বাঙালি নন। সেই নিরীখে সায়নী হলেন পঞ্চম ইংলিশ চ্যানেল বিজয়িনী বাঙালি কন্যা।
রিষড়ার সুইমিং পুলে প্রশিক্ষক তমাল দাসের কাছে তাঁর প্রশিক্ষণের শুরু। মধ্যবিত্ত পরিবারের একরত্তি মেয়ে। চোখে ইংলিশ চ্যানেল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মেয়েকে সাঁতারু তৈরি করতে পাঠিয়েছিলেন বাবা রাধশ্যাম। আর এই কাজে মাস্টারমশায় রাধেশ্যামবাবু পাশে পেয়ে যান শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর পাপ্পু সিংকে।
তাঁর আর্থিক সহযোগিতায় সায়নী এই অভিযানে নাম লেখান। রাজ্য সরকারও এগিয়ে আসে সায়নীকে সাহায্য করতে। বাকিটা ইতিহাস। সায়নী যেভাবে পরিবেশ ও প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়িনী হয়েছেন, তাঁর সেই লড়াই ক্রীড়া ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।