এশিয়ান গেমস ২০১৮-য় অংশ নিচ্ছেন ৫৪১ জন ভারতীয়, কাদের ঘিরে আছে পদকের আশা, জেনে নিন বিস্তারিত
আগামী ১৮ আগস্ট তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ১৮তম এশিয়ান গেমস। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও পালেম্বাং শহরে আয়োজিত এবারের গেমসে ভারত মোট ৫৪১ জন খেলোয়াড়ের দল পাঠিয়েছে। তাঁরা মোট ৩৪ টি ক্রিড়ায় অংশ নেবেন।
আগামী ১৮ আগস্ট তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ১৮তম এশিয়ান গেমস। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও পালেম্বাং শহরে আয়োজিত এবারের গেমসে ভারত মোট ৫৪১ জন খেলোয়াড়ের দল পাঠিয়েছে। তাঁরা মোট ৩৪ টি ক্রিড়ায় অংশ নেবেন। ২০১৪ সালে ইঞ্চেয়নে ১১টি সোনা-সহ মোট ৫৭টি পদক জিতেছিল ভারত। এবার পদকের সংখ্য়া বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
অলিম্পিকের মতোই প্রতি ৪ বছর অন্তর হয় এই বিবিধ ক্রিড়ার প্রতিযোগিতা। ধারে ভারে বিশ্বের ক্রিড়া প্রতিযোগিতাগুলির মধ্যে অলিম্পিকের পরই এই প্রতিযোগিতার স্থান। ১৯৫১ সালে প্রথমবার নয়াদিল্লিতে বসেছিল এই প্রতিযোগিতার আসর। এশিয়ান গেমস ফেডারেশনের ভারত অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও বটে। সেই থেকে প্রতিটি গেমসেই ভারত অংশ নিয়েছে। শুধু তাই নয় জাপান বাদে ভারতই একমাত্র দেশ, যারা প্রতিটি গেমস থেকেই পদক জিতেছে। ভারতের এবারের দলেও আগে পদকজয়ী কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন। তাদের সঙ্গে আছেন সম্ভাবনাময় নতুন মুখরাও। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এশিয়া গেমসে বিভিন্ন ক্রিড়ায় কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ভারত।
সাঁতার
সাঁতারের পুল থেকে পদক তুলে আনার ব্যাপারে ভারতের প্রধান ভরসা বীরধাওয়াল খাড়ে ও সন্দীপ সেজওয়াল। ২০১০ সালের গেমসে সাঁতারে ভারতের দীর্ঘদিনের পদক খড়া কাটিয়েছিলেন খাড়ে। সেবার জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ। এবার পদকের রঙটা আরও উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তীরন্দাজি
ভারতীয় তীরন্দাজরা এবারের গেমসের প্রস্তুতি হিসেবে প্রখ্য়াত ইতালীয় তিরন্দাজ সের্গিও পাগনি-র কাছে ট্রেনিং নিয়েছেন। ট্রেনিং ক্যাম্পের পর পাগনি ভারতীয় তীরন্দাজ দলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে দলের সবাই বিশ্বমানের। পাগনির বিশ্বাস গেমসে তারা সফল হবেনই। কাজেই জাকার্তায় সমগ্র তীরন্দাজ দলকে নিয়েই আশায় বুক বাঁধছে ভারত।
অ্যাথলেটিক্স
৫৩ জনের অ্যাথলেটিক্স দলকে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠিয়েছে ভারত। ২০১৪-য় ২টি সোনা সহ মোট ১৩টি পদক এসেছিল অ্যাথলেটিক্স থেকে। এবার সেই সংখ্য়াটা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন অ্যাথলেটিক্স কর্তারা। দলে আছে হিমা দাস, মহম্মদ আনাস, নীরজ চোপড়া, দ্যুতি চাঁদ, নবীন কুমার, সীমা পুনিয়ার মতো বড় নাম। গত কয়েকবছরে এরা বহু সাফল্য এনে দিয়েছেন দেশকে। এছাড়া আরও নতুন মুখ উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্যাডমিন্টন
দলে আছেন পিভি সিন্ধু, কিদাম্বি শ্রীকান্ত, সাইনা নেহওয়ালের মতো তারকারা। কাজেই এই ক্রিড়া থেকে বেশ কয়েকটি পদক আসবে বলেই ধরেই নিচ্ছেন ভারতীয় ক্রিড়া-ভক্তরা। সাম্প্রতিক কালে অসাধারণ খেলছেন সিন্ধু। কিন্তু বারবার আটকে গিয়েছেন ফাইনালে। তাঁর ভক্তরা বলছেন এবার তিনি সোনা ফলাবেনই। তবে প্রাক্তন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোন সতর্ক করে বলেছেন, এশিয়ান গেমসকে সহজ ভাবার কারণ নেই, কারণ ব্যাডমিন্টনের অধিকাংশ সেরা খেলোয়াড়রা এশিয়ারই।
বক্সিং
৭
জন
পুরুষ
ও
৩
জন
মহিলা
বক্সারের
দল
পাঠানো
হয়েছে
ইন্দোনেশিয়ায়।
এঁদের
মধ্যে
একজনের
পদক
জয়
প্রায়
নিশ্চিত।
তিনি
হলেন
বিকাশ
কৃষ্ণাণ
যাদব।
তিনি
নামবেন
৭৫
কেজি
মিডলওয়েটে।
এই
বিভাগে
আগের
দুই
গেমসে
তিনি
১টি
সোনা
ও
১টি
ব্রোঞ্জ
জিতেছেন।
এবার
তিনি
পজক
জয়ের
হ্যাট্রিক
করবেন
বলেই
ধরা
হচ্ছে।
পদকের
রঙটা
কি
হয়
সেটাই
দেখার।
এছাড়া
৪৯
কেজি
ফ্লাইওয়েট
বিভাগে
অমিত
পাঙ্গালও
পদক
জয়ের
দাবিদার।
মহিলাদের
মধ্যে
মেরি
কম
এবারের
গেমসে
অংশ
নিচ্ছেন
না
বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের
প্রস্তুতি
নিচ্ছেন
বলে।
তাছাড়া
তিনি
নতুনদেরও
সুয়োগ
করে
দিতে
চেয়েছেন।
তিনি
না
থাকলেও
সরজুবালা
দেবী,
সোনিয়া
লাথের
ও
পবিত্রাকে
নিয়ে
গঠিত
ভারতীয়
মহিলা
বক্সিং
দলটি
কম
শক্তিশালী
নয়।
ব্রিজ
তাস খেলাকে বিনোদনমূলক ক্রিড়া হিসেবে মনে করা হলেও এবারের গেমসেই ব্রিজ-কে প্রথমবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর প্রথমবারেই ভারতীয় দল এই বিভাগে পদক দয়ের আশা করছে। ২৪ জনের ভারতীয় ব্রিজ খেলোয়াড়ের দলটিতে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়ার থাকলেও সবাইকে ছাপিয়ে সাড়া ফেলেছেন ৭৯ বছরের রীতা চোক্সি।
হকি
২০১৪ সালে ভারতের পুরুষ হকি দল সোনা জিতেছিল। এবারে সেই পদক ধরে রাখতে চায় তারা। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা দুটি দলই ভাল পারফর্ম করেছে। কাজেই দুটি দলই পদক জেতার অন্যতম দাবিদার। পুরুষদের সোনার পাশাপাশি ২০১৪-তে মহিলারা জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ। তারা এবার পদকের রঙটা পাল্টে সোনা করতে চাইছে।
জিমন্যাস্টিক্স
জিমন্যাস্টিক্স-এ আছেন সোনার মেয়ে দীপা কর্মকার। অলিম্পিকে সবাইকে চমকে দেওয়ার পর আবার দুর্ধর্ষ ভাবে ২ বছর পর তিনি ফিরে এসেছেন তুরস্কে। সেখানে এ বছর ফিগ আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে জিতে নিয়েছেন সোনা। ২০০৭-এর এপ্রিলে তাঁর ডানপায়ের হাঁটুতে অস্ত্রপচার হয়। তারপর তিনি এভাবে ফিরে আসায়, এশিয়াডি তাঁর সোনা জয়ের আশা করছে গোটা দেশ। কোচ বিশ্বশ্বর নন্দীও মেনে নিয়েছেন তাঁর ও তাঁর ছাত্রীর উপর অসম্ভব প্রত্যাশার চাপ রয়েছে।
এছাড়া জিমন্যাস্টিক্সে পদকের জোরালো দাবিদার রয়েছেন রাকেশ পাত্র। ফিগ আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপ ও গোল্ড কোস্ট কমনওয়েল্থ গেমস দু'জায়গাতেই তিনি অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া করেছেন। এবার আর তার পুনরাবৃত্তি হতে দিতে চান না এই জিমন্যাস্ট।
কাবাডি
ভারতের জাতীয় খেলা কাবাডি। এই ক্রিড়া বিভাগে এশিয়াডে গত ৬ বার টানা ভারতীয় পুরুষ কাবাডি দল সোনা জিতেছে। এবারেও তারা সেই কর্তৃত্ব ধরে রাখবে এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। মবিলা দলও এবার তাদের তৃতীয় স্বর্ণপদকের লক্ষ্যে নামবে। দনয়ন্তী বোরোর নেতৃত্বাদীন মহিলা দলও সোনা ঘরে আনবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
শুটিং
২৮ জনের ভারতীয় শুটিং দলে অনেকেই পদক জেতার দাবিদার। গগন নারাং, জিতু রাই, মেহুলি ঘোষদের মতো পরিচিত বেশ কিছু নাম এবারের দলে না থাকলেও আছেন ভাকের, অনিশ ভানওয়ালা, অপূর্বী চান্দেলা, হীনা সিন্ধুরা।
১৬ বছরের ভাকের এবছর তাঁর অভিষেক কমনওয়েল্থ গেমসেই ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। হীনা সিন্ধু প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষে রয়েছেন। আর ১৫ বছরের আনিশ সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় হিসেবে এবছর কমনওয়েলথে সোনা জিতেছেন।
স্কোয়াশ
২০১৪-এয় পুরুষ স্কোয়াশ দল এশিয়াডে সোনা জিতেছিল। এবার তারা পদক ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। দলের সদস্য মহেশ মাঙ্গোয়াঙ্কার জানিয়েছেন, যে কোনও পদক নয় তাঁরা সবসময় সোনা জেতার লক্ষ্যেই খেলতে নামেন। ক্তিগত বিভাগে সোনা জেতার ভরসা সৌরভ ঘোষাল ও দীপিকা পাল্লিকাল কার্তিক।
টেবিল টেনিস
২১-তম কমনওয়েল্থ-এ সোনা জেতার পর এশিয়াডে অন্তত প্রথম চারের মধ্যে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় মহিলা টেবিলটেনিস দল। এই বিভাগে প্রথম চারে যেতে পারলেই পদক নিশ্চিত। ওয়ার্ল্ড টিম টেবিলটেনিসে পুরুষদের দল ১৩-তম স্থান পেয়েছিল। এসিয়ান গেমসে পদক জেতার বিষয়ে তারাও আত্মবিশ্বাসী। মহিলা ও পুরুষ দলের নেতৃত্বে আছেন যথাক্রমে মনিকা বাত্রা ও সথিয়ান জ্ঞানসেকরণ।
টেনিস
২০০৬-এর দোহা গেমস-এর পর ফের ভারতীয় দলে ফিরছেন লিয়েন্ডার পেজ। আগের গেমসে পুরুষদের ডাবলস দল রৌপ্য পদক জিতেছিল। সানিয়া মির্জার সঙ্গে জুটি বেঁধে আগের গেমসে মেয়েদের ডাবলসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন প্রার্থনা থোম্বারে। এবার তিনি রোহন বোপান্নার সঙ্গে মিক্সড ডাবলসে জুটি বাঁধছেন। টেনিস থেকেও পদক আশা করা হচ্ছে।
ভারোত্তোলন
৪৮ কেজি বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মিরাবাই চানু-র। তাঁর সোনা জেতা নিশ্চিত ছিল। কমনওয়েলথেও তিনি স্বর্ণপদক জিতেছেন। কিন্তু এশিয়ান গেমসের মাত্র দিন কয়েক আগে, চোটের জন্য তিনি গেমস থেকে নাম তুলে নিয়েছেন। তাই ভারোত্তলনে ভারতের পদকের আশা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে।
পুরুষদের বিভাগে অবশ্য আছেন সতীশ শিবালিঙ্গম, বিকাশ ঠাকুর, অজয় সিং-রা। সতীশ ৭৭ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথে সোনা জিতেছেন। বিকাশ ঠাকুর ২০১৪-র এশিয়াডে ৮৫ কেজি বিভাগে অল্পের জন্য সোনা হারিয়ে রূপো পেয়েছিলেন। এবার পদকের রঙ বদলাবার ভাল সুযোগ আছে তাঁর সামনে।
কুস্তি
মাল্টি ইভেন্ট ক্রিড়া প্রতিযোগিতাগুলিতে, কুস্তি ভারতকে অনেক পদক এনে দিয়েছে। ২০১৮ এশিয়ান গেমসেও ভারতীয় কুস্তি দলের কাছ থেকে অনেকগুলি পদক জেতার আশা করা হচ্ছে। ৭৪৩ কেজি বিভাগে শুশীল কুমার, ৫০ কেজি বিভাগে ভিনেশ ফোগত, ৬২ কেজি বিভাগে সাক্ষী মালিক-এর মতো অনেক ব় নাম রয়েছে দলে, যাঁরা পদক জেতার নিশ্চিত দাবিদার।
অন্যান্য খেলায়
এই খেলাগুলি ছাড়াও ভারত অ্যাকুয়াটিক্স, সাইক্লিং, গল্ফ, জুডো, মার্শাল আর্টস, স্পোর্ট ক্লাইম্বিং, সফট টেনিস, সেইলিং, রোইং, ডাইভিং, সেপাক টাকরও, রেগু, কোয়ার্ড্যান্ট, তাইকোন্ডো, প্যারাগ্লাইডিং, রোলার স্পোর্টস, বাস্কেটবল, বোলিং, ক্যানোইং , হ্যান্ডবল, অশ্বাচালনা, এবং ফেন্সিং-এর মতো অনেকগুলি ক্রিড়ায় অংশ নিচ্ছে।
এরমধ্যে মিক্সড ার্শাল আর্টসে ভারতীয় কুড়াস দলটি বেশ শক্তিশালী। তারা পদক পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এশিয় ইন্ডোর গেমসে দলটি দুটি ব্রোঞ্জ মেডেল এবং একটি রৌপ্য পদক জিতেছে। ভারতের তাইকোন্ডো এবং সাইক্লিং দলেরও পদক জেতার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে কিছু অজানা মুখ হঠাত তারকা হয়ে উঠতে পারে।