এশিয়াডেও পদকজয়ীদের মধ্য়ে হরিয়ানার আধিপত্য - ক্রীড়াজগতে কী করে তারা এত সফল
এশিয়াড ২০১৮-তেও ভারতের পদকজয়ীদের তালিকায় সবার আগে আছে হরিয়ানা রাজ্য। জেনে নিন ক্রীড়াজগতে তাতের এই অভাবনীয় সাফল্যের কারণ কী।
ভারতের অন্যতম ধনী রাজ্য হরিয়ানা। কিন্তু এই রাজ্য প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে নারী-পুরুষের সংখ্যার ব্যবধানের জন্য, মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া জঘন্য অপরাধের জন্য, কখনও বা বেকারত্বের জন্য। কিন্তু এই এত নেতিবাচক ঘটনার মধ্যেও কোনও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিয়োগিতা হলেই এই রাজ্যটির নাম ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
পদক জয়ে বিগত বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতাতেই সবার আগে ছিল এই রাজ্যের নাম। সদ্য সমাপ্ত এশিয়াম গেমসে ভারতের জেতা ৬৯ টি পদকের ১৮টিই জিতেছেন এই রাজ্যের ক্রীড়াবিদরা। ১৫টি সোনার মধ্যে জিতেছেন ৫টি। বছরের শুরুতে গোল্ড কোস্ট কমনওয়েল্থ গেমসে ভারতের জেতা ৬৬টি পদকের ২২টি দিয়েছিল হরিয়ানা। ২০১৪ সালের গ্লাসগো কমনওয়েলথে পেয়েছিল ২৭টি, ২০১০ দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে ২৭টি।
কাজেই দেশ জুড়ে ক্রিড়া মহলে এখন যে প্রশ্নটা ঘুরছে তা হল, হরিয়ানার এই অভাবনীয় সাফল্যের রহস্য কী? হরিয়ানার ক্রীড়া জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন মূল কারণ দুটো - একটা ঐতিহ্যগত, আরেকটি আধুনিকায়ন।
ঐতিহ্যগত সংযোগ
হরিয়ানার মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া তাদের আগ্রহ রয়েছে সেনা বাহিনীতে। কৃষিকাজ বা সামরিক দায়িত্ব - উভয় পেশাই সবল শরীর গঠনের উপযোগী। এই ঐতিহ্যগত সুবিধাটা হরিয়ানার ক্রীড়াবিদরা পান।
জানা গিয়েছে স্বাধীনতার পর থেকেই হরিয়ানার নার্নোল, রেওয়ারি, ভিওয়ানির মতো দক্ষিণের জেলাগুলি খেলাধূলায় অংশ নিতে শুরু করেছিল। কুস্তিগীর লীলা রাম, দেবী সিং, লঙ জাম্পার রাম মেহর - হরিয়ানার প্রথম দিকের অলিম্পিয়ানদের বেশিরভাগই যুক্ত ছিলেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে। ক্রীড়া থেকে অবসরের পর এঁরা বেশিরভাগই কোচিং করানো শুরু করেন। আর তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই নতুন করে আরও অলিম্পিয়ান উঠে এসেছে রাজ্য থেকে।
ঐতিহ্যের আধুনিকিকরণ
ঐতিহ্যেই আটকে থাকেনি হরিয়ানা। এই সহস্রাব্দের শুরুতেই তারা সেই ঐতিহ্যের আধুনিকিকরণে মন দেয়। যার ফল আজ পাওয়া যাচ্ছে। কুস্তির কথা ধরা যাক। নজফগড় থেকে সোনপত পর্যন্ত অসংখ্য দেশী আখড়া ছিল। সেইসব আখড়ায় কাদামাটিতে কুস্তি লড়া হত। ২০০০ সালে হরিয়ানা সেই কাদার কুস্তিকে ম্যাটে আনার কাজে হাত দিয়েছিল। আখড়াগুলিতে ম্যাচ বসিয়ে সেগুলি আধুনিক করে তোলা হয়।
একই ভাবে ভিওয়ানি-দাদরিতে বক্সিং অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও, তাদের হাতে যথার্থ সরঞ্জাম ছিল না। সেখানকার ক্রিড়াবিদরা ভয় পেতেন, সরঞ্জাম ছাড়া বক্সিং করতে গেলে চোট পাবেন। কিন্তু ২০০০ সালেই সরকার থেকে এই জেলাগুলির বক্সিং ক্লাবগুলিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়ার কাজ শুরু হয়। নিট ফল আজ অন্তত একডজন জাতীয় স্তরের বক্সার রয়েছে জেলাগুলিতে।
ক্রীড়ায় অর্থায়ন
২০০০ সালেই হরিয়ানা রাজ্যে প্রথম ক্রিড়ানীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তাতে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পদক জয়ীদের নগদ পুরষ্কার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কতটা? আগে একমাত্র সোনা জয়ীরা ১ লক্ষ টাকা পেতেন। বাকি পজকজয়ীদের পুরষ্কার ছিল হাজারের ঘরে। কিন্তু নয়া ক্রীড়া নীতিতে বর্তমানে ব্রোঞ্জজয়ী পান ২৫ লক্ষ, রুপোজয়ী পান ৫০ লক্ষ আর সোনা জয়ীর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থ আসায় অনেকেই আরও বেশি করে ক্রীড়াজগতে আসতে আগ্রহী হয়েছেন।
সুনিশ্চিত চাকরির নিরপত্তা
২০০১ সালে হরিয়ানা মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদকজয়ীদের হরিয়ানা সিভিল সার্ভিস ও হরিয়ানা পুলিশ সার্ভিসে চাকরি দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত আরও বেশি করে ক্রীড়া জগতে আকৃষ্ট করেছে হরিয়ানাবাসীকে।
জাকার্তার শিক্ষা
ইন্দোনেশিয়ায় সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান গেমস থেকেও শিক্ষা নিয়েছএ রাজ্যটি। রাজ্যের ক্রীড়া কর্তারা জানিয়েছেন, জাকার্তার গেমস থেকে রাজ্য বুঝেছে, ক্রীড়ায় উন্নয়নের কোনও সীমা নেই। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রতিমুহুর্তে নিত্যনতুন সরঞ্জাম বের হচ্ছে। তাই রাজ্যও এক জায়গায় না থেকে ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়ন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।