বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিরামিষ দক্ষিণ আফ্রিকার: যে ৪টি কারণে ঘটল তাদের বিপর্যয়
প্রথম তিনটি ম্যাচ হারের পরে সমর্থকরা আশা করেছিলেন যে ফাফ দু'প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের শেষ ম্যাচগুলিতে শক্ত লড়াই করবে, সেমিফাইনালে পৌঁছনোর সম্ভাবনা জাগাতে।
প্রথম তিনটি ম্যাচ হারের পরে সমর্থকরা আশা করেছিলেন যে ফাফ দু'প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের শেষ ম্যাচগুলিতে শক্ত লড়াই করবে, সেমিফাইনালে পৌঁছনোর সম্ভাবনা জাগাতে। কিন্তু সেই লড়াই পাওয়াই গেল না চারবারের সেমি-ফাইনালিস্টদের কাছে। রবিবার, ২৩ জুন, প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের কাছে লর্ডসে ৪৯ রানে হেরে এবারের মতো সাঙ্গ হল প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ অভিযান। কোনও লড়াই ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকার এমন বিদায় স্বভাবতই নিরাশ করেছে সমর্থকদের। ২০০৩-এর পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের নক-আউট পর্যায়ে পৌঁছতে ব্যর্থ হল।
এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার যেই দলটি এসেছিল, তা তাদের আগেকার দলগুলির তুলনায় খুবই দুর্বল। গত কয়েক মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কিছু সিরিজ জিতলেও সেগুলি যে খুব শক্তিশালী বিপক্ষের বিরুদ্ধে এসেছি, তা নয়। বরং, গত বছরের প্রথমে ভারতের কাছে দেশের মাটিতে ১-৫ ফলে বিধ্বস্ত হওয়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ভাগ্য ফেরাতে চাই বড়সড় পদক্ষেপ।
যে চারটি কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার এবারে বিশ্বকাপে ব্যর্থ হল, তা হচ্ছে:
চোট-আঘাতে জর্জরিত দল
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা ধাক্কা খায় প্রথম থেকেই। বিশেষ করে, তাদের পেস বোলিং বিভাগে। অভিজ্ঞ ডেল স্টেন এবং প্রতিভাবান কমবয়সী পেসার কাগিসো রাবাডা এবং লুঙ্গি এনগিডিকে নিয়ে তারা পরিকল্পনা করলেও স্টেনের চোট এবং তাঁর দল থেকেই ছিটকে যাওয়া ভীষণভাবেই ব্যাহত করে প্ল্যান 'এ'কে। চোটের জন্যে সব ম্যাচে খেলতে পারেননি এনগিডিও। পেস-নির্ভর বোলিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এমন ধাক্কা খাওয়ার পরে তাদের যে কোনও প্ল্যান 'বা' ছিল না, তা পরিষ্কার। মাত্র একটি ম্যাচে খেলানো হয় স্টেনের পরিবর্ত খেলোয়াড় বেউরন হেনড্রিক্সকে এবং তাতে তিনি কোনও উইকেট পাননি।
খারাপ ফর্ম
দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের দলে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সংমিশ্রণ থাকলেও মাঠে কিন্তু দলের সিনিয়রদের জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। এক অধিনায়ক দু'প্লেসি কয়েকটি অর্ধ শতরান করলেও তাঁর একার পক্ষে কতটা কী করা সম্ভব? খারাপ ফর্ম থাকা সত্ত্বেও দলে নেওয়া হয়েছিল হাসিম আমলাকে। কিন্তু শুধু ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের ৮,০০০ রান পূরণ করা ছাড়া তিনি আর কোনও অবদানই রাখতে পারেননি এবারের বিশ্বকাপে। করেছেন মাত্র একটি পঞ্চাশ রান। ফর্মে ছিলেন না কুইন্টন ডি কক, জে পি ডুমিনি, ডেভিড মিলারের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রাও। কক কয়েকটি অর্ধ শতরান করলেও দলের স্বার্থে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। রাসি ভ্যান দেড় ডুসেন প্রতিশ্রুতি দেখালেও পরবর্তী এবি ডি ভিলিয়ার্স হতে গেলে যে তাঁর আরও অনেক পরিশ্রম জরুরি, সেটা বোঝা গিয়েছে। আর অবশ্যই আসবে রাবাডার কথা। বলা হচ্ছিল এবারের বিশ্বকাপ হবে রাবাডার সঙ্গে ভারতের জসপ্রীত বুমরার লড়াইয়ের মঞ্চ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ পেসার কয়েক মাস আগে আইপিএল-এ দুর্দান্ত বল করলেও বিশ্বকাপে কিছুই করতে পারেননি প্রায়; নিয়েছেন মাত্র ছ'টি উইকেট। রাবাডার এই নিরাশাজনক ফর্মের ফলে প্রোটিয়াদের আরও নখদন্তহীন লেগেছে।
এবিডি ফ্যাক্টর
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডারে এখনও যে এবি ডি ভিলিয়ার্স-এর কোনও বিকল্প উঠে আসেনি, তা পরিষ্কার হয়ে গেল এই বিশ্বকাপে। পঁয়ত্রিশ বছরের এবিডি এখনও হেসেখেলে ঢুকতে পারেন দু'প্লেসির এই সাধারণ মানের দলে। কিন্তু তিনি নিজেই এক বছর আগে অবসর নিয়ে কেন বসলেন, তা তিনিই জানেন। আর সাম্প্রতিক বিতর্ক অনুযায়ী তিনি যদি সত্যিই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে দোষের ভাগীদার তিনিও। এখনও বেশ কিছু বছর এবিডি-র ক্রিকেট বাকি রয়েছে। এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা তা পেল না আর এর দায় ওই মারকাটারি ব্যাটসম্যানের ঘাড়েও পড়ে। মাঝখান থেকে বিতর্কের কারণে মনোসংযোগ ক্ষুণ্ণ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের।
শ্লথ ব্যাটিং, সাধারণ ফিল্ডিং
দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বড় দুর্বলতা ছিল এবারে তাদের মন্থর এবং পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং। একে তো প্রায় প্রতি ম্যাচেই বিপক্ষকে ৩০০ রানের উপরে করতে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। তার উপরে ধীর ব্যাটিং করে দলকে আরও চাপে ফেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। মাঝেসাঝে স্ট্রোকের ঝলক দেখিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে সার্বিক পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়েছেই বেশি। আর ফিল্ডিং নিয়ে তো দক্ষিণ আফ্রিকা এবারে ছিল যথেষ্ট নিরামিষ। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে যেভাবে তাদের খেলোয়াড়রা একের পর এক সুযোগ খুইয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে ক্ষমার অযোগ্য।