অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত: সিডনিতে দুরন্ত মায়াঙ্ক-পূজারা! প্রথম দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজ ভারতের
সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বনাম ভারত, চতুর্থ ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনের রিপোর্ট।
নতুন বছরের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটা দারুণ গেল ভারতের পক্ষে। টেস্ট ওপেনার হিসেবে দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও লেটার মার্কস সহ পাস করলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৭৭)। আর আরও একবার ভারতীয় ইনিংসকে টানার দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন চেতেশ্বর পূজারা (১৩০*)। এই দুইয়ের মিলিত ফলে সিডনি টেস্টে প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর ৩০৩/৪। পূজারার সঙ্গে ক্রিজে আছেন হনুমা বিহারী (৩৯*)।
সিডনি টেস্টে দুই স্পিনার দুই জোরে বোলারে দল সাজিয়েছে ভারত। রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে দলে সুযোগ পেয়েছেন কুলদীপ যাদব। আর মায়াঙ্কের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় কেএল রাহুলকে। যিনি এদিনও দুটি খোঁচায় চার মেরে, পরের খোঁচায় শনমার্শের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন।। টিকলেন মাত্র ৬ বল।
আরও একবার ২ ওভারের মধ্যেই ব্য়াট করতে নামতে হয়েছিল পুজারাকে। তাঁর প্রসঙ্গে আসার আগে বলতেই হবে মায়াঙ্ক আগরওযালের কথা। অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল পৃথ্বীর বদলে সুযোগ পেয়েই দারুণভাবে তাকে কাজে লাগালেন মায়াঙ্ক।
এদিন প্রথমে অস্ট্রেলিয়া তাঁর জন্য অফস্টাম্পে বাইরে ফাঁদ পেতেছিল। আদর্শ টেস্ট ওপেনারের মতো স্ট্রেইট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ, ফরোয়ার্ড ডিফেন্স দিয়ে সেসব বল সামলালেন তিনি। প্রয়োজন মতো হাল্কা হাতে বল ছাড়লেনও। উল্টো দিকে পূজারার ছিলেন একেবারে জমাট। এমনকি নাথান লিয়নকে দিয়েও তাদের আটকানো যায়নি। লিয়নকে পাল্টা আক্রমণ করেন মায়াঙ্ক।
উপায়ান্তর না দেখে অস্ট্রেলিয়া ফিরেছিল ভয়ঙ্কর বাউন্সারের পথে। মায়াঙ্ক, পূজারা দুজনেরই হেলমেটে বল আছড়ে পড়েছে এদিন। মায়াঙ্ককে একবার হেলমেট পাল্টাতেও হয়। কিন্তু, তাতেও দুজনকে দমানো যায়নি। তাঁরা আন্দাজ করেছিলেন মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে পরে রান আসবে।
হলও তাই মধ্য়াহ্নভোজের বিরতির পরও বাউন্সার বর্ষণ করে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু আস্তে আস্তে পুল, কাট মারতে শুরু করেছিলেন ভারতীয় ব্য়াটসম্য়ানরা। কিন্তু পুরো পরিশ্রমটা করেও তার ফসল তুলতে পারেননি মায়াঙ্ক। এদিন নিশ্চিত শতরান ফেলে এসেছএন তিনি।
বল পুরনো হয়ে দিয়েছিল। পিচেও বলের নড়াচড়া কমে গিয়েছিল। বোলাররা সব ক্লান্ত। এমন অবস্থায় লিয়নকে মারতে গিয়ে তাঁর স্পিনের জালে আটকে গেলেন এই তরুণ ওপেনার। লঙ অনে স্টার্কের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তবে তিনি বুঝিয়ে গেলেন, পৃথ্বীর সঙ্গে ভারত আরেকজন কার্যকরী টেস্ট ওপেনার পেয়ে গেল।
এরপর ঠিক মোলবোর্নের প্রথম ইনিংসের মতোই অস্ট্রেলিয় বোলারদের হতোদ্যম করা শুরু করেছিলেন পুজারা ও কোহলি। দুজনেরই কোনও ফাঁক ফোকর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু চা-বিরতির পর, খেলার গতির বিরুদ্ধে, ২৩ রান করে হ্যাজেলউডের বলে হঠাতই আউট হন কোহলি। বল তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে পেইনের হাতে জমা পড়ে।
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে খেলার পর রান তোলার গতি বাড়িয়েছিলেন পূজারা। কিন্তু উল্টো দিকে ভারতের সহঅধিনায়ক রাহানে খুব স্বস্তিতে ছিলেন না। তাঁর এদিনের ইনিংস দেখে মনে হয়েছে, মারবেন না ধরবেন, এই দ্বিধায় ভুগছেন। তবে তিনি আউট হন স্টার্কের একটি অসাধারণ ডেলিভারিতে। বলটি এমন লেন্থে রেখেছিলেন অজি পেসার যে ব্যাট না ছুঁইয়ে উপায় ছিল না রাহানে (১৮)-এর।
এরপর স্টার্কেরই বলে একটি বাউন্ডারি মেরে ১৯৯ বলে, কেরিয়ারের ১৮তম ও সিরিজের তৃতীয় শতরান সম্পূর্ণ করেন চেতেশ্বর পুজারা। এই সিরিজে যেন পূজারার প্রতিভা সম্পূর্ণ বিকশিত হল। শতরানের পর পূজারা রান তোলার গতি আরও বাড়ান। আর নিজের চেনা জায়গায় ফিরে তাঁর সঙ্গে জমাট জুটি গড়ে তুলেছেন হনুমা বিহারী-ও।