অবশেষে মধুর প্রতিশোধ! অজিদের ল্যাজে-গোবরে করে ফাইনালে ইংল্যান্ড
অবশেষে মধুর প্রতিশোধ! অজিদের ল্যাজে-গোবরে করে ফাইনালে ইংল্যান্ড
বৃহস্পতিবারের আগে পর্যন্ত বিশ্বকাপে মোট সাত বার মুখোমুখি হয়েছিল চির শত্রু দুই দেশ। তার মধ্যে ছ-বারই জিতে ইংল্যান্ডকে কার্যত শান্ত করে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। চলতি বিশ্বকাপের লিগের ম্যাচেও অজিদের কাছে পরাজয় স্বীকার করেন ইংরেজরা।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন। একে একবারও বিশ্বকাপ না পাওয়ার জ্বালা। ১৯৯২-র পর টুর্নামেন্টের ফাইনালেও উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড। তার উপর চির শত্রুদের কাছে বিশ্ব মঞ্চে বার বার অপমানিত হওয়ার জ্বালা ২৭ বছর ধরে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ানো কী মুখের কথা! তাই এবার নিজভূমে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি নেয় ইয়ন মর্গ্যানের দল। ৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ধ্যানজ্ঞান ছিল একটাই, যেভাবেই হোক বিশ্বকাপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা। কাপ হাতে তোলা। সেই লক্ষ্য থেকে আর মাত্র এক কদম দূরে ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো তো বোনাস বলা চলে।
ঐতিহাসিক লর্ডসে এই অজি শিবিরের কাছে হেরে মুখ পুড়িয়েছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচ শেষে ইংরেজ শিবিরের নায়ক বেন স্টোকস কোনও রাখঢাক না রেখেই বলেছিলেন, বদলা নিতে তারা মরিয়া এবং তা নিলেনও। সেই বদলার ভার এমনই যে তার কলঙ্ক অস্ট্রেলিয়াকে হয়তো বয়ে বেড়াতে হবে দশকের পর দশক।
কারণ, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চির শত্রু ইংল্যান্ডের কাছে এমন শোচনীয় হার হয়তো আশাই করেনি অজি শিবির। বৃহস্পতিবার এজবাস্টনে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। সেই সিদ্ধান্ত যে বুমেরাং হয়ে তাঁদেরই দিকে ফিরে আসবে, ইংরেজ বোলাররা যে ব্যাটিং সহায়ক পিচেও আগুন ঝরাবেন, তা আঁচই করতে পারেননি হলুদ জার্সিধারীরা।
জ্যাম প্যাকড হোম ক্রাউডের ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড ধ্বনিতে যেন জোফ্রা আর্চার, ক্রিস ওকসদের শিরায় শিরায় উষ্ণ স্রোত বয়ে যায়। অজি শিবিরের ভয়ঙ্কর ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (৯) ও অ্যারন ফিঞ্চকে (০) মাত্র ১০ রানে ফিরিয়ে ম্যাচের ভাগ্য যেন তখনই লিখে দেন তাঁরা। চোটগ্রস্ত উসমান খোয়াজার পরিবর্তে এদিনই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা পিটার হ্যান্ডসকম্বকেও (৪) ফিরে যেতে হয় তাড়াতাড়ি। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে ১০৩ রানের জুটি বেঁধে অস্ট্রেলিয়াকে কিছুটা মোমেন্টাম জোগান স্টিভ স্মিথ। আর্চারের বল লেগে মুখে চোট পাওয়া ক্যারি ৪৬ করে আউট হন। তাঁর পিছু পিছু সাজঘরে ফেরেন অল-রাউন্ডার মার্কাস স্টোইনিসও (০)।
এরপর অভিজ্ঞ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে জুট্ বাঁধার চেষ্টা করেন স্মিথ। কিন্তু ব্যক্তিগত ২২ এবং দলের ১৫৭ রানের মাথায় স্মিথের সঙ্গ ছাড়েন গ্লেনও। ৬ রান করে আউট হন প্যাট কমিন্স। শেষ বেলায় ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ২৯ রানের ইনিংস খেলেন মিচেল স্টার্ক। ৮৫ রান করে আউট হন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়া শেষ হয় ২২৩ রানে। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদ। ২টি উইকেট নেন জোফ্রা আর্চার। জবাবে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা মন্থর গতির
হলেও আচমকাই গিয়ার আপ করেন ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। জনি ৩৪ রান করে আউট হলেও ক্রিজে রয় ঝড় অব্যাহত থাকে। তাতে ছন্দ হারান মিচেল স্টার্কের মতো বোলাররাও। রয়ের ৬৫ বলে ৮৫ রানের ঝড়ো ইনিংস শেষ হয় কুমার ধর্মসেনার দেওয়া এক বিতর্কিত আউটে। রয়ের ব্যাটন হাতে তুলে নেন জো রুট ও ইংরেজ অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। মাত্র ৩২.১ ওভারে ম্যাচ জিতে যায় ইংল্যান্ড। রুট ও মর্গ্যান যথাক্রমে ৪৯ ও ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কমিন্স।