মহম্মদ 'কামব্যাক' শামি, ৪ বছরের চড়াই-উতরাই যেন রূপকথা
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে ভারতের প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। সেটাই যেন ভিতর থেকে চাগিয়ে তুলেছিল পেসার মহম্মদ শামিকে। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে মোটিভেট করে গেছেন। অপেক্ষা করে গেছেন সুযোগের।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে ভারতের প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। সেটাই যেন ভিতর থেকে চাগিয়ে তুলেছিল পেসার মহম্মদ শামিকে। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে মোটিভেট করে গেছেন। অপেক্ষা করে গেছেন সুযোগের।
কথায় বলে, ভাগ্য ও ভগবান সর্বদা সাহসীদের সঙ্গ দেন। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে মহম্মদ শামির সঙ্গেও। না হলে কেনই বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ভারতের স্ট্রাইক বোলার ভুবনেশ্বর কুমারের পেশীতে টান ধরবে, আর কেনই বা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের প্রথম একাদশে সুযোগ পাবেন মহম্মদ শামি।
এটাই যে সেই সুযোগ, তা ভাবতে ন্যূনতম সময়ও খরচ করেননি বাংলার পেসার। কেন ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসের মতো মহাতারকারা তাঁর প্রশংসা করেন, আফগানদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক সহ ৪ উইকেট নিয়ে প্রমাণ করেন শামি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সেরা ডেলিভারি করা সহ ফের ৪ উইকেট নিয়ে ডান-হাতি পেসার প্রমাণ করেছেন যে তিনি আগের থেকেও কতটা ফিট, শক্তিশালী এবং গতিশীল। যদিও শামির এই কামব্যাক সহজ ছিল না। দেখে নেওয়া যাক সেই কাহিনী।
২০১৫-র বিশ্বকাপ
চার বছর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্ট্রাইক বোলার হয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। শুরুটাও দুর্দান্ত করেছিলেন। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝেই হাঁটুতে চোট পান বাংলার পেসার। তবু মনের জোরে সেই চোট নিয়েও ওই বিশ্বকাপে ১৭টি উইকেট নেন শামি। উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় ভারতীয়দের মধ্যে হন দ্বিতীয়।
এরপর
২০১৫-র বিশ্বকাপ শেষের পর মহম্মদ শামির হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় দেড় বছর তিনি ক্রিকেটের বাইরে থাকেন। আর ততদিনে জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো তরুণ তারকারা ভারতীয় ক্রিকেটে নিজেদের কদম জমিয়ে ফেলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই চোট সারিয়ে ক্রিকেটে ফেরা শামি সেই তরণ শক্তিদের সঙ্গে লড়াইয়ের এঁটে উঠছিলেন না। তবু হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না বাংলার পেসার।
সমস্যা ব্যক্তিগত
যখন মনে হচ্ছিল সবকিছুই ধীরে ধীরে ট্রাকে ফিরছে, ঠিক তখনই তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক এবং ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের একাধিক অভিযোগ এনে মহম্মদ শামির জীবন আরো কঠিন করে দেন ক্রিকেটারের স্ত্রী হাসিন জাহান। কোর্ট-কাছারি, পুলিশি হাজিরা সামাল দিতে খেলা থেকেই যেন দূরে সরে যাচ্ছিলেন শামি। এর ফলও হয়েছিল মারাত্মক। ইয়ো ইয়ো ফিটনেস টেস্টে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের জন্য ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েন বাংলার পেসার।
ফিরে আসার লড়াই
মহম্মদ শামি যদি মনে করতেন তখনই ভেঙে পড়তে পারতেন। কিন্তু ক্রিকেট থেকে দূরে থাকাটা মেনে নিতে পারেননি বাংলার পেসার। তাই অন্য সব কিছু ভুলে শুধু এবং শুধু নিজের বোলিংয়ে মনোনিবেশ করেন শামি। নেটে নিয়মিত বল করে গেছেন। তার ফলও পেয়েছেন দ্রুত। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স করে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান শামি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করেন বাংলার পেসার।
এভাবেও ফিরে আসা যায়
যেন এক আগ্নেয়গিরি জমেছিল মহম্মদ শামির মনে। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই সেই লাভা এমন ভাবে উদগীরণ করলেন যে তাতে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন ক্রিস গেইলের মতো মহা তারকারা।
এখন প্রশ্ন
চোটের কারণে দলের বাইরে থাকা ভারতের স্ট্রাইক বোলার ভুবনেশ্বর কুমার ফের নেটে বল করতে শুরু করেছেন। তবে কী রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে শামির পরিবর্তে ভুবিকে খেলাবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। শামি যত ভালোই পারফরম্যান্স করুন, তাঁর থেকে ভুবি নাকি অনেক ভালো বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরও। কিন্তু সত্যিই মহম্মদ শামি ফের ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়লে তাঁর সঙ্গে ফের কোনও অবিচার হবে না তো!