ধোনি-রাহুলের সেঞ্চুরি, স্পিন দাপটে বাংলাদেশ জয় ভারতের
ধোনি-রাহুলের সেঞ্চুরি, স্পিন দাপটে বাংলাদেশ জয় ভারতের।
মহেন্দ্র সিং ধোনি, কেএল রাহুলের সেঞ্চুরি এবং স্পিনারদের দাপটে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৯৫ রানে হারাল ভারত। ওপেনার লিটন দাস এবং উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম ছাড়া বাংলাদেশের কোনো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানই ভারতের স্পিন আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। ৯০ বলে ৭৩ রান করেছেন লিটন। মেরেছেন দশটি চার। অন্যদিকে, ৯৪ বলে ৯০ রানের ইনিংসে আটটি চার ও দুটি ছয় মেরেছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন ভারতের চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। ১০ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহলও। ১টি উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। সে তুলনায় কিছুটা হলেও জ্বলো লেগেছে ভারতের পেস অ্যাটাককে। উইকেটহীনই থাকতে হয়েছে মহম্মদ সামি, ভূবনেশ্বর কুমারকে। একমাত্র ব্যতিক্রম মিস্ট্রি পেসার জসপ্রীত বুমরা পেয়েছেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। বিশ্বকাপ শুরুর মুখে দলের ফাস্ট বোলারদের এই মিশ্র পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে চিন্তায় রাখবে ভারতের বোলিং কোচ ভরত অরুণকে।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড ম্যাচের মতোই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ওপেনারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা কিছুটা হলেও ভাবাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্টকে। কিউই-দের বিরুদ্ধে শোচনীয় হারের ধাক্কা সামলে ওয়েলসের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নেমে টসে হেরে যান ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। মেঘলা পরিবেশের সুযোগ নিয়ে ৫০ রানের মধ্যেই ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ান (১) ও রোহিত শর্মাকে (১৯) ফিরিয়ে ভারতকে ধাক্কা দেন যথাক্রমে মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হুসেন।
চার নম্বরে নেমে অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রাথমিক ইনিংসের ভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল করেন কেএল রাহুল। ব্যক্তিগত ৪৭ এবং দলের ৮৩ রানের মাথায় মহম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন বিরাট। চোট কাটিয়ে দলে ফিরে থার্ড ডাউন নামা তরুণ বিজয় শঙ্করও ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মাত্র ২ রান করে রুবেল হুসেনের বলে আউট হন বিজয়। ১০২ রানে ৪ উইকেট পরে যাওয়ার পর ব্যাট হাতে মহেন্দ্র সিং ধোনি নামতেই খেলার গতি যেন আচমকাই ঘুরে যায়। চার, ছয়ের বৃষ্টি শুরু হয় মাঠ জুড়ে। কেএল রাহুলের সঙ্গে ১৬৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মাহি।
২৬৬ রানের মাথায় সাব্বির রহমানের বলে রাহুল সুইপ মারতে গেলে বল তাঁর থাইপ্যাডে লেগে উইকেট স্পর্শ করে। কিন্ত ততক্ষণে ৯৯ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলে ফেলেছেন আইপিলেও দুরন্ত ফর্মে থাকা এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান। ঝড়ো ইনিংসে ১২টি চার ও ৪টি ছয় মারেন রাহুল। অন্যদিকে, আরো একবার সমালোচকদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে ৭৮ বলে বলে ১১৩ রান হাঁকিয়ে ধোনি প্রমাণ করেন তাঁর মুন্সিয়ানা। নিজস্ব স্টাইলেই ছয় মেরে শতরান পূর্ণ করেন মাহি। মোট ৮টি চার ও ৭টি ছয় এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ১১ বলে ২১ রান করে আউচ হন হার্দিক পাণ্ডিয়া। দীনেশ কার্তিক ও রবীন্দ্র জাদেজা অপরাজিত থাকেন যথাক্রমে ৭ ও ১১ রানে। ৩৫৯ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন রুবেল হুসেন ও সাকিব আল হাসান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ওপেনারদের শুরুটা ভালো হলেও, ব্যক্তিগত ২৫ এবং দলের ৪৯ রানে জসপ্রীত বুমরার বলে আউট হন সৌম্য সরকার। পরের বলেই ডেনজার সাকিব আল হাসানকে শূ্ণ্য রানে বোল্ড করে নিজের জাত চেনান বুমরা। এরপর আর এক ওপেনার লিটন দাস ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের চওড়া ব্যাটে ভর করে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। তাঁদের সামনে কিছুটা হলেও অসহায় দেখাচ্ছিল ভারতীয় বোলারদের। ১৬৯ রানের মাথায় লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহলের বল স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন লিটন।
মহম্মদ মিঠুন (০) ও মহম্মদুল্লার (৯) উইকেট পরপর পরে যাওয়ার পর ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দলের ২১৬ রানের মাথায় চায়না ম্যান কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হন মুশফিকুর রহিম। শেষ বেলায় মহম্মদ সাফিউদ্দিন (১৭) ও মেহেদি হাসানের (২৭) লড়াই বাংলাদেশের জন্য আর কোনো কাজে আসেনি।