অস্ট্রেলিয়া সফর ২০১৮-১৯, উপচে পড়ছে ভারতের প্রাপ্তির ভাঁড়ার! দেখে নিন সেরা ৫ পাওয়া
অস্ট্রেলিয়া সফর ২০১৮-১৯ ভারতের প্রাপ্তি অনেক। দেখে নিন সেরা ৫ পাওয়া।
শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি), মেলবোর্নে শেষ একদিনের ম্য়াচ জিতে টেস্ট সিরিজের পর একিনের সিরিজেও ২-১ ফলে জয় পেয়েছে ভারত। প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের পাশাপাশি প্রথম দ্বিপাক্ষিক একদিনের ম্যাচের সিরিজ জিতে ঐতিহাসিক 'ডাবল' সিরিজ জয়ের রেকর্ড করেছে বিরাট কোহলির দল। টি২০ সিরিজ-টি ১-১ ফলে অমিমাংসিত ছিল। কাজেই, এই প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিন ধরণের ক্রিকেটেই সিরিজের নিরিখে ভারতীয় দল অপরাজিত থেকে ক্যাঙারুর দেশ ছাড়ছে।
শুধু এইসব বিরল রেকর্ড গড়ার কারণেই নয়, নানা কারণেই এই সফর ভারতীয় ক্রিকেটে একটা নতুন মোড় এনেছে। গোটা সফর জুড়েই কিন্তু দারুণ প্রদর্শন করেছএন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। একবারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করেনি ভারতীয় দল। তাতে জয়ের মাধুর্য আরও বেড়েছে। প্রতিটি পরিস্থিতি দারুণভাবে পড়ে নিয়ে হিসাব কষে যা যা ঝুঁকি নিয়েছে তার অধিকাংশই কাজে এসেছে।
বিরাট কোহলির ভারতের কিন্তু এই সিরিজে প্রাপ্তির ভাঁড়ার নেহাত কম নয়। দেখে নেওয়া যাক সেইসব পাওয়ার সেরা ৫টি।
চোপতা উপত্যকা
এই জায়গাটি সম্পর্কে অন্য পর্যটকদের খুব বেশি ধারণা নেই। এখানকার তুংনাথ, চন্দ্রশিলা ইত্যাদি জায়গা ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয়।
দেওয়ালের পুণরুত্থান
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে যখন যখনই দল বিপদে পড়েছে বৈতরণী পার করিয়েছেন চেতেশ্বর পূজারা। ক্রিজে এই ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটারের তপস্যা অজি পেস ব্য়াটারির শক্তি শুষে নিয়েছে বারে বারে। যেখানে একজন অস্ট্রেলিয়া ব্য়াটসম্য়ানও তিন অঙ্কের রান পাননি, সেখানে পূজারা এই কতাজ করে দেখিয়েছেন তিন-তিনবার। সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ায় বিরাট কোহলির অসামান্য রেকর্ডের কথাই আলোচনায় ছিল। সিরিজের শেষে কিন্তু ফোকাসটা সরে গিয়েছে পূজারার উপর। ভারতীয় দলে ফের 'দ্য ওয়াল'-এর পুণরুত্থান ঘটেছে বলা যায়।
সেপ্টেম্বরে চোপতা উপত্যকা
এছাড়াও এখানে পাঞ্চুলি, নন্দাদেবী, কেদারনাথ, ত্রিশূল ইত্যাদি শৃঙ্গগুলি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত করে।
ধোনি ২.০
কখনও কখনও কিংবদন্তি খেলোয়াড়েরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। গত এক বছরে ধোনির রান-খরা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথাও উঠেছে। একদিনের সিরিজে ৩ ম্যাচে ১৯৫ রান করে আরও একবার সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন তিনি। তবে এটা স্বীকার করে নিতেই হবে ৩৮ বছর বয়সে ধোনি তাঁর সেরা সময়ের ৫০ শতাংশও নন। তবে ড্রেসিংরুমে শুধুমাত্র তাঁর উপস্থিতিই বহু তরুণ ক্রিকেটারকে পথ দেখাতে পারে। আর অস্ট্রেলিয়ায় পর পর তিন ম্যাচে অর্ধশতরান পাওয়ার পর তাঁর আত্মবিশ্বাসও অনেকটা বাড়তে বাধ্য।
তুংনাথ মন্দির
উত্তরাখণ্ডের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত এই হিল স্টেশন। ফলে দেরাদুন অথবা ঋষিকেশ হয়ে এখানে যাওয়া বেশি সুবিধার।
কাটল অতিরিক্ত কোহলি নির্ভরতা
লাল বলের ক্রিকেট হোক কি সাদা বলের, ভারতীয় দলের ব্য়াটিং-এর প্রধান ভরসা অবশ্যই বিরাট কোহলি। তবে সফর শুরুর আগে ভারতচীয় ব্য়াটিং-এর অতিরিক্ত কোহলি নির্ভরতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। সিরিজে কিন্তু কোহলি যখনই কম রানে আউট হয়েছেন, কোন না কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান ঠিক খেলে দিয়েছেন। সাদা জার্সিতে মোটামুটি এই দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিলেন পূজারা। নীল জার্সিতে আবার দলকে পথ দেখান ধোনি।
শীতের সময়ে বরফে ঢাকা তুংনাথ
দেরাদুন থেকে এই চোপতা হিল স্টেশনটির দূরত্ব ২৪৬ কিলোমিটার ও ঋষিকেশ থেকে এর দূরত্ব ২১১ কিলোমিটার।
ব্য়াটিং-এর সমান ভাল বোলিং
ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথম দল এমন একটি বোলিং আক্রমণ পেয়েছে, যারা প্রতি ম্যাচেই বিপক্ষেকর ২০টি উইকেট তুলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা শুধুমাত্র বুমরার প্রতিভা বা শামির নিয়ন্ত্রণ নয়, স্পিনার-জোরে বোলার সবাই মিলে একটি ইউনিট হিসেবে উন্নতি করেছে ভারতীয় বোলিং।
তুংনাথ থেকে চন্দ্রশীলা যাওয়ার ট্রেকিংয়ের পথ
চোপতায় নানা অ্যাডভেঞ্চারের সাক্ষী হতে পারেন আপনারা। ট্রেকিংয়ের পাশাপাশি তাঁবু করে থাকা, বরফে স্কিয়িং বা পাহাড়ে চড়া ইত্যাদি নানা কিছু করতে পারেন এখানে। তুংনাথ মন্দিরে যেতে হলে চন্দ্রশিলা সামিটে এসে জড়ো হতে হয়। সেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়।
প্রত্যেকের অবদান
এটা এমন একটা সফর, যেখানে কোনও একজন কোহলি, বা পূজারা বা ধোনি ভারতকে জেতাননি। জোড়া সিরিজ জয়ে দলের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন। অ্যাডিলেড টেস্টে বল হাতে অশ্বিনের অবদান থেকে সিডনিতে জাদেজা-পন্থের জুটি, কিংবা একদিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় ম্য়াচে কার্তিকের ঝোড়ো ইনিংস বা শেষ ম্যাচে চাহালের উইকেট - প্রকৃতপক্ষে 'টিম ইন্ডিয়া'-কে খেলতে দেখা গিয়েছে এই সফরে।
চন্দ্রশীলার মন্দির
এছাড়াও চোপতাতে আকর্ষণ বলতে রয়েছে কেদারনাথ ওয়াইল্ডলাইফ স্য়াংচুয়ারি, চন্দ্রশিলার চূড়া, দেওরিয়া তাল লেক, অত্রীমুনি জলপ্রপাত ইত্যাদি।
চন্দ্রশীলার চূড়া থেকে হিমালয়ের শোভা
চোপতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই মন কাড়া যে সুইৎজারল্য়ান্ডের সঙ্গে এর তুলনা টানা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মাঝে এখানকার আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো থাকে। তবে শীতকালেও বরফের মধ্য়ে নানা খেলায় মাততে পর্যটকেরা এখানে আসেন।