
রাহুল দ্রাবিড় ২৩৩, অ্যাডিলেড, ২০০৩-০৪
২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখটা বোধহয় কোনও ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তের পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়। কারণ ওইদিনই ২২ বছরের খরা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৫৬ রান তাড়া করে ৮৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল ভারত। সেই সময়ই হাল ধরেছিলেন রাহুল ও লক্ষ্মণ। ৫০০ মিনিটের বেশি ব্যাট করে ২৩টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে রাহুল করেছিলেন ২৩৩। লক্ষ্মণ করেন ১৪৮। দুজনের জুটিতে ওঠে ৩০৩ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৭২ রানের ইনিংস খেলে জমজমাট সেই টেস্ট ভারতকে জেতান 'দ্য ওয়াল'।

সচিন তেন্ডুলকর ২৪১*, সিডনি, ২০০৩-০৪
একই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ দেখেছিল সচিনের ক্রিকেট-মগ্নতা। সিরিজে ভারত দল হিসেবে খুবই ভাল খেললেও সচিন একেবারেই ফর্মে ছিলেন না। সিডনির আগে তাঁর সেই সিরিজে ৫ ইনিংসে রান ছিল যথাক্রমে ০, ১, ৩৭, ০, এবং ৪৪। ফর্মে ফেরার জন্য সিডনির মাঠে একেবারে ধ্য়ানমগ্ন যোগী রূপে ধরা দিয়েছিলেন তেন্ডুলকার। গোটা অফস্টাম্পের বাইরের বল একটাও খেলেননি। তবে উইকেটে যে সব বল এসেছে তা খেলেছিলেন উইকেটের সোজাসুজি অথবা অনসাইডে। ৬০০ মিনিটেরও বেশি ব্যাট করে ভারতকে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন ৭০৫ রানের পাহাড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচ অমিমাংসিত ছিল।

বিরাট কোহলি ১৪১, অ্যাডিলেড, ২০১৪-১৫
ইংল্য়ান্ডে চরম ব্য়র্থতার পর অস্ট্রেলিয়া সফরে এসেছিলেন কোহলি। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৫ রান করার পর ফের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্য়াটিং-এর হাল ধরেছিলেন ভারতের নয়া অধিনায়ক। ৫৭ রানের মধ্যে শিখর ধাওয়ান ও পুজারার উইকেট হারিয়ে ধুকছিল ভারত। সেখান থেকে মুরলি বিজয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন বিরাট। একসময় ভারত ২ উইকেটে ২৪২ রানে পৌঁছে গিয়েছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ভারত চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জিততে চলেছে। কিন্তু সেখান থেকেই ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন নাথান লিওঁ। শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে না পারলেও চতুর্থ ইনিংসে ১৬টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে কোহলির করা সেই সাহসী ১৪১ রানের ইনিংস সেই সিরিজের সুর বেঁধে দিয়েছিল।

সেওয়াগ ১৯৫, মেলবোর্ন, ২০০৩-০৪
ফের ২০০৩-০৪ সালের সিরিজ। এটা ছিল মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট। শেষ পর্যন্ত অজিরা এই টেস্ট জিতলেও অন্তত প্রথম দিন তাদের বাক্স-বন্দি করে রেখেছিলেন ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র সেওয়াগ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয় বোলারদের একেবাীরে ক্লাব স্তরে নামিয়ে এনে ছেলেখেলা করেছিলেন বীরু। ২৫টি চার ও ৫টি ছয় মেরে মাত্র ২৩৩ বলে ১৯৫ রান করেছিলেন তিনি। ৫০ ও ১০০তে পৌঁছেছিলেন চার মেরে। ১৫০ করেন ছয় মেরে। ১৮৯ রান থেকে ১৯৫তেও পৌঁছান কাটিচকে একটি বিশাল ছয় মেরে। তার পরের বলেও ফের ছয় মারতে গিয়েই শে, হয় তাঁর বিস্ফোরক ইনিংস। তিনি সেইদিন নিশ্চিত দ্বিশতরান হারালেও ২০০০ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা সেরা ১৫টি ইনিংসের মধ্যে স্থান পেয়েছে তাঁর ইনিংসটিও।

ভিভিএস লক্ষ্মণ ১৬৭, সিডনি, ২০০০-০১
তখন অবধি অস্ট্রেলিয়ায় ভারত পায়ের নিচে জমি পায়নি। ১৯৯৬ সালে ভারতের হবয়ে অভিষেক হলেও খারাপ ফর্মের জন্য পরব্তীকালে বাদ পড়ে গিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত ফর্মের জোরে ২০০০-০১ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি দলে ফিরে আসেন। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে তিনি বিশেষ কিছু করতে না পারলেও তৃতীয় টেস্টেই তিনি সিডনিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৭ রানের ইনিংস খেলেন। দলের রান ছিল ২৬১। তাঁর পরের বড় রান ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ২৫! শেষ পর্যন্ত ভারত সেই ম্য়াচ বাঁচাতে না পারলেও এই ম্য়াচ জন্ম দিয়েছিল ভেরি ভেরি স্পেশাল এক ব্য়াটসম্য়ানের। পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যাঁর হাত থেকে বেরিয়েছে একের পর এক বড় ইনিংস।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ১৪৪, ব্রিসবেন ২০০৩-০৪
আরও একবার তালিকায় এল ২০০৩-০৪'এর সফরের কথা। যা এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বারতের সবচেয়ে প্রবাবশালী পারফরম্যান্স। তবে এই সিরিজের কথা বললে, যে ইনিংসের কথা না বললেই নয়, তা হল সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তৎকালীন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৪৪ রান। ৬২ রানের মধ্যে সেওয়াগ, দ্রাবিড় ও সচিনের মতো তিন তারকাকে হারিয়ে ভারত যখন প্রবল চাপে, সেই সময়ে নেমেছিলেন 'দাদা'। প্রথমে লক্ষ্মণ ও পরে পার্থীবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভারতের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যান। পরবর্তীকালে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, সেওয়াগ, সচিনরা বলেছেন, সিরিজের শুরুতেই তৎকালীন ভারত অধিনায়কের এই ইনিংসই গোটা সিরিজের সুরটা বেঁধে দিয়েছিল। সফরে ভাল কিছু করে দেখানোর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।