'বিশ্বকাপ জিতি বা না জিতি, এই ম্যাচ তো জিততেই হবে', এভাবেই ভারত-পাকে মুখরিত ওল্ড ট্রাফোর্ড
যে মাটিতেই মুখোমুখি হোক দুই দল, এই ম্যাচের ওজন দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপতে পারেনি সময়। এমন হাই-ভোল্টেজ ইভেন্ট বিশ্বের আর কোনও প্রান্তে হয় কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
'বিশ্বকাপ জিতি বা না জিতি, এই ম্যাচ তো জিততেই হবে।'
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারত-পাক মহারণের একদিন আগে, দুই প্রতিবেশী অথচ চিরশত্রু দেশের মুখে মুখে এখন এই কথাই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যে মাটিতেই মুখোমুখি হোক দুই দল, এই ম্যাচের ওজন দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপতে পারেনি সময়। এমন হাই-ভোল্টেজ ইভেন্ট বিশ্বের আর কোনও প্রান্তে হয় কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
পার্থক্য সময়ের হলেও খেলা নিয়ে আবেগ কিন্তু আদি ও অকৃত্রিম। প্রতি বারের মতো এবারও ম্যাচের টিকিট ইতিমধ্যেই প্রায় শেষ। ম্যাচ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেই ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকদের অবাধ আনাগোনা চোখে পড়েছে। উন্মাদনা এতটাই যে প্রিয় খেলোয়াড়দের অনুশীলন দেখা, অটোগ্রাফ নেওয়া এবং সেলফি তোলার সুযোগও হাতছাড়া করতে চাননি ক্রিকেট প্রেমীরা।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভারত-পাক ক্রিকেট মহারণ নিয়ে দুই দেশের তরফে তৈরি করা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন রীতিমতো চর্চার কেন্দ্রে। তার প্রভাব দুই দেশের খেলোয়াড়দের মানসিকতায় পড়বে কী? অনেকের মতে হলেও হতে পারে। কারণ খেলোয়াড়রাও তো মানুষ। আবার অনেকের মতে, প্রফেশনালিটি ইজ মেন প্রায়োরিটি।
পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ছয় বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। প্রতিবারই ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রম, শোয়েব আখতারের দেশকে হারিয়েছেন কপিল দেব, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিং ধোনিরা। এবার বিরাট কোহলির হাতে ভারতের ব্যাটন। তিনি ও তাঁর দল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবেন কিনা, তা জানতে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
যদিও ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে মেন্টাল গেম খেলা শুরু করেছে সারফারাজ আহমেদের পাকিস্তান। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আউট করে তারা কীভাবে সেলিব্রেশন করবেন তাও পাক খেলোয়াড়েরা নাকি আগে থেকে ঠিক করে রেখেছেন। কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এবার অন্য রকম কিছু ঘটবেই। যেমনটা তাঁরা ঘটিয়েছিলেন দুই বছর আগে, লন্ডনের ক্যানিংটন ওভালে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে কমবেশি এই ভারতীয় দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল প্রায় একই পাকিস্তান। বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওল্ড ট্রাফোর্ডে টিম ইন্ডিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে সেই সুখস্মৃতিকেই বারবার রোমন্থন করে নিজেদের উদ্বুদ্ধ করার মরিয়া চেষ্টা করে চলেছেন সারফারেজ আহমেদ, মহম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজরা।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর যে তাগিদ নিয়ে এবারের পাকিস্তান একাদশ টুর্নামেন্টে ফিরে এসেছে, তাতে 'আমরা ভারতকে হারাবো' গোছের বিশ্বাস সেদেশের ক্রিকেট ফ্যান ও প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে। শোয়েব আখতার থেকে শাহিদ আফ্রিদি, বিরাট কোহলিদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে দেশের খেলোয়াড়দের সোশ্যাল মিডিয়ায় চার্জড-আপ করতে কোনও কসুর করেননি।
অন্যদিকে, সমর্থকদের মধ্যে পরিচিত উন্মাদনার আঁচ মেন ইন ব্লু শিবিরের মোটা কাঁচ ভেদ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক বিরাট কোহলি যেমন পাকিস্তান ম্যাচকে বিশ্বকাপের আর আটটা ম্যাচের মতোই (আলাদা কিছু নয়) গুরুত্ব দিতে রাজি। দলের বাকি খেলায়োড়দের শারীরিক ভাষাতেও এই ম্যাচ ঘিরে আলাদা কিছু উত্তেজনা চোখে পড়েনি। শুধু ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান ভালো দল। এই ম্যাচ জিততে মাঠে একশো শতাংশ দিতে প্রস্তুত খেলোয়াড়রা।
২০১৫ বিশ্বকাপের ভারত-পাক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট কোহলি। সেই ভিকে-কেই নিজের আদর্শ মানেন পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের হৃদপীণ্ড বাবর আজম। পাক টিম ম্যানেজমেন্ট সূ্ত্রে খবর, ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে বিভিন্ন ম্যাচে বিরাটের ব্যাটিংয়ের ক্লিপিংস বারবার দেখছেন বাবর। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পাক বোলিংয়ের অক্সিজেন তথা বন্ধু মহম্মদ আমিরের সঙ্গে রসিকতা করতেও ভোলেননি বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। তবে মাঠে যে তাঁরা কেউ কাউকে চেনেন না, সেটাও জানাতে ভোলেননি।
সংহতির প্রমাণ পাওয়া গেছে দুই দেশের সমর্থকদের সম্ভাষণেও। একে অন্যের দেশের পতাকা নিয়ে ছবি তোলা থেকে জনপ্রিয় ক্যাফেতে বসে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া, সবই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার দী্র্ঘ সাত দশকের শত্রুতাকে ধরাশায়ী করতে কাফি।
ম্যাচের ফল যাই হোক, জয়ী হোক ক্রিকেট, জয়ী হোক মানবিকতা, এমনটাই চান দুই দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা।