হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নাছোড় অজিদের কাছে হার মানল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জেতা-হারা তো খেলারই অঙ্গ। তবে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে বিশ্বকাপের দশম ম্যাচে উত্তেজক ও আপগ্রেডেড ক্রিকেট সমরের সাক্ষী থাকল বিশ্ব।
বিশ্বকাপের ঘটনাবহুল অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে হিরোদের ছড়াছড়ি।
হিরো নম্বর ওয়ান জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের মিচেল স্টার্ক।
হিরো নম্বর টু ও থ্রি সেই অস্ট্রিলিয়ারই নাথান কুল্টার-নাইল ও স্টিভ স্মিথ।
অন্যদিকে, পরাজিত শিবিরে বীরের মর্যাদা পাওয়া সৈনিক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক শাই হোপ, অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ও নিকোলাস পুরান।
জেতা-হারা তো খেলারই অঙ্গ। তবে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে বিশ্বকাপের দশম ম্যাচে উত্তেজক ও আপগ্রেডেড ক্রিকেট সমরের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। যার ইউএসপি দুই দলের হার না মানা লড়াই। পরতে পরতে ওঠা-নামার গল্প দিয়ে সাজানো এই ম্যাচের স্ক্রিপ্ট রূপকথার থেকে কোনো অংশে কম নয়। ম্যাচ শেষে জায়েন্ট স্ক্রিণে জয়ী দলের নাম যদি অস্ট্রেলিয়া হয়, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কামাই সম্মান ও মর্যাদা।
আলো-আঁধারির মায়াবী ট্রেন্ট ব্রিজে টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠান ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। যদিও ম্যাচের প্রথম বলেই ওয়াইডে চার রান দিয়ে ক্যারিবিয়ান সমর্থকদের বিরাগভাজন হন ওসেন থমাস। কিন্তু বাকি বোলাররা ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে পূর্ণ মর্যাদা দেন। ৩৮ রানের মধ্যেই অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ (৬), ডেভিড ওয়ার্নার (৩), উসমান খোওয়াজা (১৩) এবং ডেঞ্জারাস গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (০) ফিরিয়ে রীতিমতো ধাক্কা দেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররা।
ঘটনা নম্বর পয়লাতেই অনুভূত হয় পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধেই ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তারও আগে ১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপে ৩২ রানে ৪ উইকেট খুইয়েছিল ক্যাঙারুর দেশ। সেদিক থেকে দেখলে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে ওয়ার্নারদের প্রথম ৮ ওভারের পারফরম্যান্স সেই তালিকায় তিন নম্বর স্থান দখল করেছে।
গোটা বিশ্ব যখন ক্যারিবিয়ানদের সহজ জয় দেখতে হা-পিত্যেস শুরু করেছে, ঠিক তখনই ঘটনা নম্বর দুইয়ের আবির্ভাব। যাকে বলে কাহানী মে টুইস্ট। কেন অজিদের সমীহ করে ক্রিকেট বিশ্ব, এই ম্যাচেই তা হাড়ে হাড়ে টের পেল লারা-রিচার্ডসের দেশ। অজি দলের অপরিহার্য সদস্য নির্বাসন ফেরত স্টিভ স্মিথ আবারও পাহাড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। সঙ্গে মার্কাস স্টোইনিস অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ে ফেরাবার চেষ্টা করলেও ১৯ রান করে আউট হন ওই অল-রাউন্ডার। এরপর আনস্টপেবল স্মিথের সঙ্গে পার্টনারশিপে অজি টোটালে ৬৮ রান যোগ করেন উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারে (৪৫)। তিনি আউট হওয়ার পর রেজিস্ট্রার্ড বোলার নাথান কুল্টার-নাইল যে খেলাটা দেখান, তা যেকোনো ব্যাটসম্যানের কাছে শিক্ষনীয়। এরই মাঝে স্মিথের ১০৩ বলে ৭৩ রানের লড়াকু ইনিংসে ইতি পড়লেও আরো কিছুক্ষণ অব্যাহত থাকে কুল্টার নাইল ধামাকা। ম্যাচের সর্বোচ্চ ৯২ রান করে আউট হন তিনি।
কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। স্লগ ওভারে চালিয়ে খেলে ৪৯ ওভারের মাথায় ২৮৮ রানে অল-আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিবিয়ানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন কার্লোস ব্রেথওয়েট। ২টি করে উইকেট নেন ওসেন থমাস, শেলডন কোটরেল ও আন্দ্রে রাসেল।
ঘটনা নম্বর তিনের সূত্রপাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ইনিংসের প্রথম বল থেকেই। ক্যারিবিয়ান ওসেন থমাসের মতোই ভেরি ফার্স্ট ডেলিভারিতে ওয়াইডে চার দেন অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রাইক বোলার মিচেল স্টার্ক। যদিও ওভারের বাকি বলগুলিতে ব্যাট ছোঁয়েতেই দোনোমনো করেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানরা। অজিরাও যে সহজে্ ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন, তা প্রমাণ হয় ওই ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। প্যাট কমিন্সের বলে থার্ড স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এভিন লুইস (১)।
ঘটনা নন্বর চারে মিচেল স্টার্ক ও ক্রিস গেইলের এক অদ্ভুত ডুয়েল দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। ম্যাচের তৃতীয় তথা স্টার্কের দ্বিতীয় ওভারে চালিয়ে খেলতে গিয়ে বল মিস করেন দৈত্যাকার গেইল। বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের দস্তানায়। স্টাম্প ক্যামেরায় হালকা একটা শব্দ পেতেই অজি ক্রিকেটারদের হাউজ দ্যাট আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। মাথা নাড়িয়ে রিভিউয়ের আবেদন করেন ক্যারিবিয়ান হ্যারিকেন এবং তিনিই জেতেন। ওই ওভারের শেষ বলে আবারও গেইলের বিরুদ্ধে লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন ওঠে বোলিং ও কিপিং এন্ড থেকে। আবারও ব্যাটসম্যানকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। মাথা নাড়িয়ে আবারও রিভিউয়ের আবেদন করেন ক্ষুব্ধ গেইল। এবং সেবারও জয়ী হন তিনিই।
রাগের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ প্যাট কমিন্সের পরের ওভারে তিনটি চার মারেন ক্রিস। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে নিজের এক হাজার রানও পূর্ণ করেন ৪০ বছরের ক্যারিবিয়ান। পরের ওভারে ফের বল করতে আসেন মিচেল স্টার্ক। কিন্ত এ যাত্রায় আর রক্ষে পেলেন না দ্য বস। আবারও গেইলের বিরুদ্ধে লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন উঠতেই আঙুল তোলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউয়ের রেজাল্ট জানার আগেই সাজঘরের পথে হাঁটা লাগান গেইল (২১)। এরপর উইকেটরক্ষক শাই হোপ ও নিকোলাস পুরানের পার্টনারশিপে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ইনিংসে ৬৮ রান যোগ হয়। আচমকাই মনোসংযোগ হারিয়ে অ্যাডাম জাম্পার বলে আউট হন পুরান (৪০)।
শাই হোপের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন সিমরন হেটমের। কিন্ত পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান হেটমের। দীর্ঘদেহী অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ক্রিজে নামতেই ক্যারিবিয়ানদের রানের গতি বাড়ে। কিন্তু দলের ১৯০ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরেন হোপ (৬৮)। অর্ধ-শতরানের থেকে এক রান বেশি করে আউট হওয়া হোল্ডারকে আর সেভাবে সঙ্গত দিতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল (১৫), কার্লোস ব্রেথওয়েট (১৬) এবং অ্যাসলে নার্স (১৯)। ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৭৩ রানই তুলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ঘটনা নম্বর পাঁচ, ক্রমে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ও আন্দ্রে রাসেলকে সঠিক সময়ে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে বাউন্স ব্যাক করানো বোধহয় মিচেল স্টার্কের মতো বোলারের পক্ষেই সম্ভব। ম্যাচে মোট ৫ উইকেট নেন এই বাঁ-হাতি ফাস্ট বোলার। এভিন লুইস ও শাই হোপের উইকেট নিয়ে স্টার্ককে যোগ্য সঙ্গত করেন প্যাট কমিন্স। যদিও ম্যাচ সেরার পুরস্কার ব্যাট হাতে কোহরাম তৈরি করা নাথান কুল্টার-নাইলকেই দেওয়া হয়েছে।