২০০৭-র পর আবারও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে পর্যুদস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা
২০০৭-র পর আবারও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে পর্যুদস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা।
অঘটন তো প্রতি বিশ্বকাপেই ঘটে। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপে কিন্তু অঘটনটা অনেক আগেই ঘটল। তাও আবার খোদ ইংল্যান্ডের রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ওভালে।
একে অঘটনই বা বলা যায় কী! ম্যাচের প্রতি বিভাগেই খাতায়-কলমে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুধু টক্কর দেওয়া নয়, শেষ হাসি হাসবার যথেষ্ট অবকাশ তৈরি করল বাংলাদেশ। সবশেষে প্রোটিয়াসদের ২১ রানে হারিয়ে প্রথম ম্যাচ থেকে স্বস্তির দুই পয়েন্ট হাসিল করা কী টাইগারদের কাছে কম গর্বের কথা! ২০০৭-র মতো এই বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধাক্কা দিয়েই ছাড়ল বাংলাদেশ।
যে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ম্যাচ শুরুর আগেও বাংলাদেশকে আন্ডার ডগ বলে দাবি করছিলেন, মাঠে সেই দলের সিংহবিক্রম দেখে তাঁরাও কার্যত অবাক। রবিবার অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী বোলিং লাইন আপেকে কার্যত ক্লাব স্তরে নামিয়ে আনল। সামনে থেকে সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক সাকিব-আল-হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
লন্ডনের ওভালে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায়। কিন্তু প্রোটিয়াসদের অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসির সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাট করতে নামা মাশরাফি মোর্তোজার দল, ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক রণনীতি নেয়। ৯টি চার সহযোগে ৩০ বলে ৪২ রান করে আউট হন ওপেনার সৌম্য সরকার। ২৯ বলে ১৯ রান করেন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল।
৭৫ রানের মাথায় দলের দুই ওপেনার আউট হওয়ার পর জুটি বেঁধে বাংলাদেশের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ সাকিব ও মুশফিকুর। কাগিসো রাবাডা, ক্রিস মরিস সম্বলিত বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং অ্যাটাক নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করেন বাংলাদেশের দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। মাঠের সবদিকেই রানের বন্যা বইতে থাকে। এমনকী খুচরো রান আটকাতেও ব্যর্থ হন দুর্ধর্ষ প্রোটিয়াসরা। বাংলাদেশের টোটাল ২১৭-তে পৌঁছলে ব্যক্তিগত ৮৪ বলে ৭৫ রানের মাথায় ইমরান তাহিরের বলে আউট হন সাকিব-আল-হাসান। ততক্ষণে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তাঁর ১৪২ রানের পার্টনারশিপ হয়ে গিয়েছে।
পাঁচ নম্বরে নামা মহম্মদ মিঠুনও ২টি চার ও একটি ছয় সহযোগে করেন ২১ বলে ২১ রান। ৮০ বলে ৭৮ রান করে আন্দিলে ফেহলুকোয়াওয়ের বলে আউট হন মুশফিকুর। এরপর মহম্মদুল্লা ও মোসাদ্দেক হোসেনের যথাক্রমে ঝড়ো ৩৩ বলে ৪৬ ও ২০ বলে ২৬ রানের সৌজন্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাহাড় প্রমাণ ৩৩০ রানের টোটালের সামনে দাঁড় করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। প্রোটিয়াসদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ইমরান তাহির, ক্রিস মরিস ও আন্দিলে ফেহলুকোয়াও।
জবাবে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা কিন্তু ভালোই হয়। ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করামের জুটি প্রথম উইকেটে তোলে ৪৯ রান। ৯.৪ ওভারে মার্করামের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডি কক (২৩)। এরপর অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসির সঙ্গে জুটি বাঁধেন এইডেন। দু-জনের পার্টনারশিপে ওঠে ৫৩ রান। কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন ঘটে। ব্যাটের পর বল হাতেও কামাল দেখান বাংলাদেশের সাকিব। ১০২ রানের মাথায় দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার মার্করামের (৪৫) উইকেট ছিটকে দেন ওই বাঁ-হাতি অল-রাউন্ডার।
এরপর প্রোটিয়াসদের অধিনায়ক ডু্প্লেসিকে কিছুটা সঙ্গ দেন বাঁ-হাতি ডেভিড মিলার। কিন্তু দলের স্কোর যখন ১৪৭, তখন মেহেদি হাসানের বল স্টেপ আউট করে ওড়াতে গিয়ে বোল্ড হন ফাফ (৬২)। কিছুটা লড়াই দিয়ে প্যাভিলয়নের রাস্তা খুঁজে নেন মিলার (৩৮) এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র এক ম্যাচ আগে পা রাখা রেইসে ভ্যান ডার ডুসেন (৪১)। টেলেন্ডারদের নিয়ে অভিজ্ঞ জেপি ডুমিনি (৪৫) খানিকটা লড়লেও বাংলাদেশের করা পাহাড় প্রমাণ টোটালের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পৌঁছে দিতে পারেননি। ৫০ ওভারে ৩০৯ রানে আটকে যায় প্রোটিয়াসদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে ৩ ও ২ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মহম্মদ সাফিউদ্দিন। একটি করে উইকেট নেন মেহেদি হাসান ও সাকিব-আল-হাসান। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন সাকিব। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের পর বাংলাদেশের কাছেও হেরে বিশ্বকাপের দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা।