মরিয়া পাক আগুনে পুডল দুর্ধর্ষ ইংল্যান্ড, বুড়ো হাড়ে ভেল্কি হাফিজ-ওয়াহাবের
মরিয়া পাক আগুনে পুডল দুর্ধর্ষ ইংল্যান্ড, বুড়ো হাড়ে ভেল্কি হাফিজ-ওয়াহাবের।
এভাবেও ফিরে আসা যায়!
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লজ্জাজনক হার হয়তো মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। হয়তো সেই মনের জ্বালা থেকেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সারফারাজ আহমেদরা। গোটা ম্যাচ জুড়েই পাক ক্রিকেটারদের ব্যাট ও বল থেকে ঝড়ে পড়া আগুনে কার্যত পুড়ে ছাই হয় টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ইংল্যান্ড। আর এই অভিযানের নেতৃত্ব দিলেন মহম্মদ হাফিজ, ওয়াহাব রিয়াজ, মহম্মদ আমির, সারফারাজ আহমেদের মতো পাকিস্তানের সিনিয়র ক্রিকেটাররা। যা টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলির জন্য দলের নবীন ক্রিকেটারদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
ওয়াহাব রিয়াজের করা ম্যাচের শেষ বলে মার্ক উড চার মারলেও তাতে ইংল্যান্ডের ভরাডুবি আটকানো যায়নি। জো রুট ও জোস বাটলারের লড়াকু শতরান সত্ত্বেও পাকিস্তানের পাহাড় প্রমাণ টোটাল ৩৪৮-র ১৪ রান আগেই থেমে যায় ইংরেজদের ইনিংস। ক্যারিবিয়ান ঝড় সামলেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ কামব্যাকের পর পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মুষ্টিবদ্ধ হাত শাপমুক্তির আনন্দে একসঙ্গে আকাশ পথে ধাবমান হয়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশের খেলোয়াড়দের লা-জাবাব পারফরম্যান্সের পর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ম্যাসাকারকে কেবল খারাপ দিন হিসেবেই ভুলে যেতে চাইছেন পাকিস্তানের সমর্থকরাও।
ট্রেন্ট ব্রিজে টসে জিতে অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যানের পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভুল বলেই মনে করছেন ইংল্যান্ড সমর্থকরা। ডু অর ডাই মানসিকতা নিয়ে ক্রিজে নামা পাক ওপেনার ইমাম-উল-হক ও ফাকার জামানের ঝড়ো পার্টনারশিপে ওঠে ৮২ রান। ৩৬ রান করে মইন আলির বলে স্ট্যাম্প আউট হন ফাকার। সেই মইন আলির বলেই তুলে মারতে গিয়ে সাজঘরের রাস্তা ধরেন ইমাম। এরপর বাবর আজমের সঙ্গে অভিজ্ঞ মহম্মদ হাফিজের পার্টনারশিপ পাকিস্তানকে ১৯৯ রানে পৌঁছে দেয়। ৬৩ রান করে ফের মইন আলির বলে আউট হন বাবর। ৬২ বলে ৮৪ রান করে মার্ক উডের বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে গিয়ে ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন হাফিজ। ৮টি চার ও ২টি ছয়ে সাজানো তাঁর ইনিংস ক্রিকেট প্রেমীদের বাহবা কুড়িয়েছে।
অধিনায়ক সারফারাজ আহমেদের ব্যাট থেকে আসে ঝকঝকে ৪৪ বলে ৫৫ রান। শেষ বেলায় আসিফ আলি (১৪), হাসান আলি (১০), শাদাব খানরা (১০) পাকিস্তানের পাহাড় প্রমাণ টোটালের শরিক হন। ঝকঝকে দলগত ব্যাটিং পারফরম্যান্সের দৌলতে ৫০ ওভারে এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সেরা, ৩৪৮ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন স্পিনার মইন আলি, পেসার ক্রিস ওকস। ২টি উইকেট নেন মার্ক উড।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দলের ১২ এবং ব্যক্তিগত ৮ রানের মাথায় লেগ বিফোর দ্য উইকেট হন ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়। অন্য ওপেনার জনি বেয়ারস্টো (৩২) হাত খোলার কিছু পরেই বিশ্বকাপ শুরুর আগে পাকিস্তানে সবচেয়ে সমালোচিত ওয়াহাব রিয়াজের আগ্রাসনের শিকার হন। ক্রিজে বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান (৯) এবং গত ম্যাচের নায়ক বেন স্টোকসও (১৩)। তাঁরা যথাক্রমে ম্যাচের সেরা পাকিস্তানি স্পিনার মহম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের কাছে হার মানেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ইনিংসের একটা দিক ধরে রাখেন জো রুট। বিধ্বংসী জোস বাটলারের সঙ্গে তাঁর ১৩০ রানের পার্টনারশিপ ইংল্যান্ডদের ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। দলের ২৪৮ রানের মাথায় ১০টি চার ও ১টি ছয় সহযোগে শতরানের পর ৭ রান যোগ করে শাদাব খানের বলে আউট হন জো।
কিন্তু পাকিস্তানের কাছে ক্রমে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জোস বাটলারও ৭৩ বলে ১০৩ রান করে মহম্মদ আমিরের বলে আউট হলে ম্যাচে আর ফিরতে পারেননি ইংরেজরা। ৯টি চার ও ২টি ছয় মারেন ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক। এরপর মইন আলি (১৯) ও ক্রিস ওকস (২১) কিছুটা লড়াই করলেও তা রানীর দেশের কাজে লাগেনি। সমালোচকদের শেন দৃষ্টিতে থাকা ওয়াহাব রিয়াজ পাকিস্তানের হয়ে ৩ উইকেট নেন। মহম্মদ আমির ও শাদাব খান নেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মহম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিক।