দক্ষিণ আফ্রিকার এবিডি আর ইংল্যান্ডের আর্চার: কার বাদ পড়া নৈতিক; কার নির্বাচন অনৈতিক?
বিপর্যয়ের সময়ে নখ-দাঁত বেরিয়ে পড়তে সময় লাগে না। চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টানা তিনটি ম্যাচ হারার পরে দক্ষিণ আফ্রিকারও সেই রকমই অবস্থা।
বিপর্যয়ের সময়ে নখ-দাঁত বেরিয়ে পড়তে সময় লাগে না। চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টানা তিনটি ম্যাচ হারার পরে দক্ষিণ আফ্রিকারও সেই রকমই অবস্থা। পরপর আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড, প্রত্যয়ী বাংলাদেশ এবং তারপরে শক্তিশালী ভারতের কাছে হেরে ফাফ ডুপ্লেসির দলের এখন কোণঠাসা অবস্থা। লিগের শেষ ছয়টি ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই জিততে হবে তাদের এখন সেমি-ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে।
একদিকে ফর্ম এবং দলের খেলোয়াড়দের চোট-আঘাত নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরের নাজেহাল অবস্থা, তখনই ফাটল আরেকটি বিতর্কের বোমা। সম্প্রতি ক্রিকিনফো-র একটি প্রতিবেদনে বেরিয়েছে যে প্রোটিয়াদের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাটসম্যান এবি ডি'ভিলিয়ার্স নাকি জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে ফের খেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে নাকি তাঁর সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই, বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার চূড়ান্ত খারাপ পারফরম্যান্স এখন এই ঘটনাকে সামনে এনে ফেলেছে। প্রশ্ন উঠছে, বছর পঁয়ত্রিশের ডি'ভিলিয়ার্স যেখানে এখনও ভালো ফর্মে রয়েছেন (সম্প্রতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি ভালো খেলেন রয়াল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর-এর হয়ে), সেখানে তাঁকে উপেক্ষা করার কারণ কী? কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের টিম ম্যানেজমেন্ট, এমনকি নির্বাচক মণ্ডলীকেও।
দোষ এবিরই, তাঁর উচিত ছিল নির্বাচন নীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার
কিন্তু এই বিষয়টিতে দোষ যদি কারও থাকে, তবে তা ডি'ভিলিয়ার্স-এরই। বিশ্বকাপের ঠিক এক বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই মারকাটারি ব্যাটসম্যান, কারণ হিসেবে দেখান অপার ক্লান্তি। অবশ্য ক্লাব-ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলা থেকে থামেননি তিনি। বিশ্বের নানা প্রান্তে তাঁকে দেখা গিয়েছে গত এক বছরে ব্যাট করতে। কিন্তু বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার চূড়ান্ত দল ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগে ডি'ভিলিয়ার্স কর্তৃপক্ষকে জানান তাঁর ইচ্ছের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন কমিটির কনভেনর লিন্ডা জন্ডি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে তিনি ডি'ভিলিয়ার্সকে অনুরোধ করেছিলেন অবসর না নিতে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন ডি'ভিলিয়ার্স। বিশ্বকাপের দলে ঢুকতে হলে গত একবছরে ডি'ভিলিয়ার্সকে দেশের হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে হত দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনী ও ফিটনেস নীতি অনুযায়ী, যা তিনি করেননি। আর তাই একেবারে শেষ মুহূর্তে যখন দল নির্বাচন চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে, তখন ডি'ভিলিয়ার্স-এর অনুরোধ রাখা সম্ভব ছিল না বলে জানিয়েছেন জন্ডি।
অন্যায় করা হত নবাগত খেলোয়াড়দের প্রতিও
এবিকে প্রত্যাখ্যান করার আরও একটি কারণ হচ্ছে তাঁকে যদি আচমকাই দলে ঢুকিয়ে নেওয়া হতো, তাহলে ভালো ফর্মে থাকা নবাগত খেলোয়াড় যেমন রাসি ভ্যান দার ডুসেন-এর প্রতি অন্যায় করা হতো বলেও অভিমত অনেকের। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে নৈতিকভাবেই এবি ডি ভিলিয়ার্সের প্রত্যাবর্তন সমর্থনযোগ্য ছিল না তাই ভালো ব্যাটসম্যান হলেও তাঁকে দলে ফেরত নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ড জোফ্রা আর্চারকে খেলাল যেন তেন প্রকারেণ
এবি ডি'ভিলিয়ার্স এই পরিস্থিতিটিকে এড়াতে পারতেন যদি তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাকাপাকিভাবে সন্ন্যাস না নিয়ে বড় বিশ্রাম নিয়ে তাজা মনে ফের ফিরে আসতেন ২২ গজে।
নৈতিকতার প্রশ্ন যদি ওঠে তাহলে এই বিশ্বকাপের আরেকটি দল ইংল্যান্ড কিন্তু সেসবের ধার ধারেনি। জন্মগতভাবে ক্যারিবিয়ান বলার জোফ্রা আর্চারকে তাদের হয়ে এবারের বিশ্বকাপে খেলানোর জন্যে এতটাই মরিয়া ছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে তাঁর খেলার পথ প্রশস্ত করে তারা। বছর চব্বিশের আর্চারের আইনিভাবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্যে আরও কিছু বছর অপেক্ষা করতে হত কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তাঁকে 'ফাস্ট-ট্র্যাক' করে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে তোলার অনুমতি দিয়ে দেন। খেলার নিরিখে এই পদক্ষেপটিকে সমর্থন করলেও প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন এর নৈতিক দিকটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
নৈতিকতা কী আর অনৈতিকতাই বা কী সে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে অনন্ত তর্ক চলতেই পারে কিন্তু আসল কথা দিনের শেষে পারফরম্যান্সই শেষ কথা।
[আরও পড়ুন:বিশ্বকাপের সমস্ত খবর দেখুন একনজরে]