বিশ্বকাপ ক্রিকেট: ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপের এক অদ্ভুত 'অভিশাপ'কে খণ্ডন করে
আর দু'দিন পরেই দামামা বাজতে চলেছে ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধের। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ হতে চলা এবারের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার দ্বাদশ সংস্করণ।
আর দু'দিন পরেই দামামা বাজতে চলেছে ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধের। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ হতে চলা এবারের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার দ্বাদশ সংস্করণ। আয়োজক ইংল্যান্ড আগে কখনও বিশ্বকাপ না জিতলেও এবারে তাদের দুর্দান্ত ফর্ম এবং ঘরের মাঠে খেলার সুবিধার জন্যে অন্যতম ফেবারিট। মোট দশটি দেশ এবারে অংশ নিচ্ছে যাদের মধ্যে আছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, দু'বারের বিজয়ী ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং একবারের খেতাবধারী পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তান এবারে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে খেলছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম পাঁচটি পর্বে দু'টি বিশেষ রেকর্ড কায়েম ছিল। এক, কোনও আয়োজক দেশ ট্রফি জিততে পারেনি এই সময়ে। এবং দ্বিতীয়, কোনও দল ফাইনালে পরে ব্যাট করে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। শ্রীলঙ্কাই প্রথম দল যারা এই দু'টি 'অভিশাপ'কে খন্ডন করে, ১৯৯৬ সালে।
প্রথম সতেরো বছর যে ফাইনালে আগে ব্যাট করত, বিশ্বকাপ হত তার
১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ডে হওয়া সেবারের প্রতিযোগিতায় ইয়ান চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে ১৭ রানে হারিয়ে জেতে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর পরে ১৯৭৯ সালে আয়োজক ইংল্যান্ডকে ফাইনালে ৯২ রানে হারিয়ে পর পর দু'বার বিশ্বকাপ জেতার নজির রাখে তারা (পরে রিকি পন্টিং-এর অস্ট্রেলিয়া এই রেকর্ড ভাঙে)। ১৯৮৩ সালে হ্যাট্রিক-এর দোরগোড়া থেকে ফিরতে হয় লয়েডের দলকে। কপিলদেবের ভারত আন্ডারডগ হলেও ফাইনালে মাত্র ১৮৩ রান করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মুড়িয়ে দেয় ১৪০ রানে। সেবারেও আয়োজক দেশ ছিল ইংল্যান্ড।
এরপরে শুরু হয় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। ১৯৮৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানে বিশ্বকাপের আসর বসে এবং সেবারে আয়োজক দেশগুলিকে ফেবারিট ধরা হলেও ভারত ও পাকিস্তান দু'টি দলই পরাজিত হয় সেমিফাইনালে। বিশ্বকাপ জেতে অস্ট্রেলিয়া, ইডেন গার্ডেন্সে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে মাত্র সাত রানে হারিয়ে।
এর পরের বার পঞ্চম বিশ্বকাপে, অর্থাৎ যেবার প্রথম খেলোয়াড়দের রঙিন জার্সি, সাদা বল এবং দিন-রাতের খেলার চল শুরু হল, চ্যাম্পিয়ন হয় ইমরান খানের পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আয়োজিত এই বিশ্বকাপের ফাইনালে গ্রাহাম গুচের দলকে ২২ রানে হারিয়ে প্রথম খেতাব জেতে তারা।
ওই সময়ে জিততে পারেনি কোনও আয়োজক দেশ, ভারত ও নয়
অর্থাৎ, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত কোনও আয়োজক দেশ যেমন জিততে পারেনি বিশ্বকাপ, তেমনই কোনও দল রান তাড়া করে ট্রফি কব্জা করতেও ব্যর্থ হয়। বিশ্বকাপের চাপ?
১৯৯৬ সালে ভারত, পাকিস্তান ওর শ্রীলঙ্কা যুগ্মভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করে। এবারে ফাইনালে ওঠে অর্জুন রণতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা, একটিও ম্যাচ না হেরে, এবং মার্ক টেলর-এর অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত সেবারের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে সাত উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা, এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে। পরে ব্যাট করে এবং যুগ্ম আয়োজক দেশ হিসেবে জিতে সেবারে শ্রীলঙ্কা দু'টি পুরোনো রেকর্ডকেই চুরমার করে।
ছিয়ানব্বই সালের পর যে পাঁচটি বিশ্বকাপ হয়েছে তাতে আয়োজক দেশ জিতেছে দু'বার (২০১১ তে ভারত এবং ২০১৫তে অস্ট্রেলিয়া) এবং তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালের ফলাফল গিয়েছে রান তাড়া করা দলের পক্ষে (১৯৯৯ ও ২০১৫ তে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০১১ তে ভারত)। দু'হাজার তিনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতকে ১২৫ রানে এবং ২০০৭-এ মাহেলা জয়বর্ধনের শ্রীলঙ্কাকে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে ৫৩ রানে হারায় রিকি পন্টিং-এর অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ লয়েড এবং পন্টিং যে দু'বার তাঁদের দলকে বিশ্বকাপ জেতান, সেবারে জয়ী হয় আগে ব্যাট করা দলই।