কলকাতাকে রূপকথার জয় উপহার দিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফাইনালে সবথেক বেশি গোলে জেতার অনন্য রেকর্ড করে ফেলল ব্রিটিশ দল।
এককথায় অভাবনীয়। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে রূপকথা লিখল ইংল্যান্ড। দু-গোলে পিছিয়ে পড়ে পাঁচ গোলে স্পেনকে উড়িয়ে স্বপ্নের জয় পেল ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেইসঙ্গে ফাইনালে সবথেকে বেশি গোলে জেতার অনন্য রেকর্ড করে ফেলল ব্রিটিশ দল। এবার অনুর্ধ্ব ২০ যুব বিশ্বকাপ জয়ের পর অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপও নিজেদের নামে করে নিল ইংল্যান্ড।
প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যেই দুগোলে পিছিয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। সকাল দেখে মনে হয়নি এই ম্যাচ ইংল্যান্ড জিততে পারে। তখন মাঠে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না ইংল্যান্ডকে। গোটা মাঠ জুড়ে স্পেনের শিল্পসুষমা। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষে গোল্ডেন বুটজয়ী ব্লিউস্টারের গোলে ব্যবধান কমায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে শুধু ইংল্যান্ড আর ইংল্যান্ড। পর পর পাঁচ গোল দিয়ে ইংল্যান্ড ছিনিয়ে নিল বিশ্বকাপ। স্পেনকে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল। এই নিয়ে চারবার অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে রানার্সের ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল স্পেনকে। এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়া হল না স্পেনের। আবারও গতির কাছে অপমৃত্যু হল তিকিতাকার।
ভারত বিশ্বকাপ পেল নতুন চ্যাম্পিয়নকে। যে চ্যাম্পিয়ন টিম ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও ৫-২ ব্যবধানে জেতার ক্ষমতা রাখে। একেই বলে তারুণ্যের জয়। স্বপ্নের ফুটবল উপহার দিয়ে ইংল্যান্ড বুঝিয়ে দিল তাঁরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই এসেছিল। শুধু কি চ্যাম্পিয়ন, অল উইন চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এই টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও না হেরে চ্যাম্পিয়নের কৃতিত্ব স্থাপন করল ইংল্যান্ড।
খাতায় কলমে এগিয়ে থেকে শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু মাঠে নেমে এদিন প্রথম থেকেই রাজ করতে থাকে স্পেনের ফুটবলাররা। তার ফলও পায় স্প্যানিশ আর্মাডারা। ৩০ মিনিটের মধ্যে গোমেজের জোড়া গোলে এগিয়ে যায় তিকিতাকার দেশ। তখন ইংল্যান্ডের কাছে বিশ্বকাপ দূর অস্ত মনে হচ্ছিল। কিন্তু ব্লিউস্টার-ফোডেনরা ভেবেছিলেন অন্য কিছু। প্রথমার্ধের শেষে ব্লিউস্টার একটি গোল শোধ করতেই দ্বিতীয়ার্ধে দেখা গেল একেবারে অন্য চেহারার ইংল্যান্ডকে।
৫৮ মিনিটের মাথায় গিবসের গোলে সমতায় ফেরে। তারপর স্পেন হতোদ্যম হয়ে পড়ে। সেই সুযোগটাই নেয় ইংল্যান্ড। ১০ মিনিটের মধ্যেই ফোডেনের গোল। দুগোলে পিছিয়ে তিনগোল দিয়ে দেওয়ার পর আর ইংল্যান্ডকে আটকানো যায়নি। স্পেন পিছিয়ে পড়ে পাল্টা ঝাঁপিয়ে পড়লেও, বড্ড বেশি গোল মিসের মাশুল দিতে হয় তাঁদের। একটি বল গোল লাইন সেভ হয়। তারপরই চতুর্থ গোল গুয়েই-র। আর স্পেন যখন মরিয়া তখন কফিনে শেষ পেরেকটি পুতে দেন সেই ফোডেন।
জুনিয়রদের এই বিশ্বকাপ গতিময় ফুটবলের নমুনা রেখে গেল। প্রথমার্ধ তিকিতাকার সঙ্গে গতির সংমিশ্রণ দেখাল স্পেন। কিন্তু তারপরই হতোদ্যম হয়ে হারিয়ে গেল খেলা থেকে। দ্বিতীয়ার্ধে সংযত হতে গিয়েই ডুবল স্পেনের তরী। রানার্স হওয়ার বদনাম ঘুচাতে পারল না এবারও। প্রথমার্ধে গোল না পেলে ইংল্যান্ডের পক্ষে এই ম্যাচ ফিরে আসা কঠিন হয়ে যেত। সেজন্য কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন সেমিফাইনালে ব্রাজিল ম্যাচের নায়ক ব্লিউস্টার। তাঁর দুরন্ত হেটই এদিন ফের ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরাল।
জয় যখন ইংল্যান্ডের হাতের মুঠোয়, তখন মাথা গরম করে হলুদ কার্ড দেখলেন গোল্ডেন বুটজয়ী ব্লিউস্টার। দুই দলের ফুটবলারের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে, তা প্রশমিত করেন রেফারি। বিশ্বকাপ কদিন যুবভারতী স্টেডিয়াম ছিল ব্রাজিলের। কিন্তু রাতারাতি যুবভারতীয় সব আলো কেড়ে নিল ইংল্যান্ড। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল পরপর দুম্যাচে রূপকথার ফুটবল উপহার দিয়ে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল ব্রিটিশরা। আর বাঙালি দর্শকরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল ইংল্যান্ডের গতিময় ফুটবল। তাঁরা বুঝিয়ে দিল সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।