পুরনো ঐতিহ্য কি ফিরিয়ে আনতে পারবে উরুগুয়ে, জানুন কেমন দল গড়ল সুয়ারেজের দেশ
বিশ্বকাপের জন্য ২৩ জনের দল ঘোষণা করেছে উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের জন্য যে দল ঘোষণা করেছে উরুগুয়ে তা থেকেই পরিস্কার এই বারের বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতে ফিরতে নারাজ উরুগুয়ের ম্যানেজার অস্কার তাবারেজ।
প্রতিটি দলের মতো ২০১৮ ফিফা ওর্য়াল্ড কাপের প্রাক্কালে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে উরুগুয়ে। প্রতিবার একাধিক নামী ফুটবলার থাকলেও প্রত্যাশা মতো নিজেদের মেলে ধরতে পারে না উরুগুয়ে। কিন্তু এই বার উরুগুয়ের দলে অভিজ্ঞ প্লেয়ারের সঙ্গে রয়েছে একাধিক তরুণ প্লেয়ারও। ফলে সমর্থকদের আশাও আকাশ ছোঁয়া প্রিয় দলকে ঘিরে। কিন্তু একটা সময় ২০১৮ ফিফা ওর্য়াল্ড কাপে কোয়ালিফাই করাটাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল উরুগুয়ের কাছে।
যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে একটা সময়ে পর পর তিন ম্যাচ হেরে কোনঠাঁসা হয়ে গিয়েছিল উরুগুয়ে। ৩-১ গোলে হারতে হয়েছিল চিলির কাছে। ঘরের মাঠে ব্রাজিল হারিয়ে যায় ৪-১ গোলে এবং তৃতীয় ম্যাচে ধারে-ভারে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা পেরুর কাছে হারতে হয় অস্কার তাবারেজের দলকে।
এর পরই দলের স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনেন কোচ তাবারেজ। ডিফেন্স শক্ত করে, কাউন্টার অ্যাটাকে এসে গোল তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুঁটি সাজান উরুগুয়ের বর্ষীয়ান কোচ। পাশাপাশি প্রথম একাদশে জায়গা দেন দুই তরুণ ফুটবলার রিয়াল মাদ্রিদের ফেডরিকো ভালভার্দে এবং জুভেন্তাসের রডরিগো বেন্টাঙ্কুরকে। এই দুই ফুটবলারকে উরুগুয়ের মাঝমাঠে যুক্ত করায় গতি বারে উরুগুয়ের খেলায়। প্রত্যাশা মতো ফলও পায় উরুগুয়ে। এবং সহজেই কোয়ালিফাই করে রাশিয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বে।
অতীতে ইস্পাত কঠিন ডিফেন্সের জন্য সুনাম ছিল উরুগুয়ের। যার কিছুটা এখনও আছে। কিন্তু এই বিশ্বকাপে ভাল রেজাল্ট করতে হলে ডিফেন্সকে প্রচীরের মতো গড়ে তুলতে হবে উরুগুয়েকে। পাশাপাশি কাভানি এবং সুয়ারেজদের নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে হবে আক্রমণভাগে। ডিফেন্স এবং আক্রমণের মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজ করে মিডফিল্ডাররা। এই জায়গাটার উপর বেশি জোড় দিতে হবে তাবারেজকে। কারণ তরুণ দু-তিন জন মিডিও ভাল খেললেও অধিকাংশ মিডফিল্ডের প্লেয়ারই সম্প্রতি ফ্লপ করেছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে। এই ভুল বিশ্বকাপের মূল পর্বে করলে চড়া দাম চোকাতে হতে পারে উরুগুয়েকে।
আসন্ন বিশ্বকাপে উরুগুয়ের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে লুইস সুয়ারেজ, নাহিতান নান্দিজ এবং এডিনসন কাভানির উপর।
লুইস সুয়ারেজ: বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম তারকা সুয়ারেজ। বার্সেলোনার দলে অন্যতম স্তম্ভ তিনি। শুধু ক্লাবের জার্সিতেই নয়, দেশের জার্সিতেও সমান সাবলীল এই ফুটবলার। উরুগুয়ের ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা সুয়ারেজ। জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৫০টি গোল। শুধু গোল স্কোরার হিসেবেই নয়, সুয়ারেজ আরও ভয়ঙ্কর তাঁর গোল উপযোগী বল তৈরির ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে নিজে গোল না করে, সুবিধাজনক জায়গায় থাকা সহ খেলোয়াড়কে দিয়ে গোল করিয়েছেন সুয়ারেজ।
এডিনসন কাভানি: সুয়ারেজের মতোই তিন কাঠি বেশ ভালই চেনেন প্যারিস সাঁ জাঁ-এর এই স্ট্রাইকার। জাতীয় দলের জার্সিতে এখনও পর্যন্ত ৪২টি গোল করেছেন তিনি। ২০১৮ ফিফা ওর্য়াল্ড কাপে কাভানির খেলার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে উরুগুয়ের ভাগ্য।
নাহিতান নান্দেজ: বোকা জুনিয়ার্সের এই মিডফিল্ডার ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন ফুটবল বিশ্বের। ২২ বছর বয়সী এই তরুণের বলের প্রতি নিয়ন্ত্রণ পিছনে ফেলে দিতে পারে অনেক তারকা প্লেয়ারকেও। উরুগুয়ের জার্সি গায়ে ইতিমধ্যেই খেলে ফেলেছেন ১১টি ম্যাচ। ফলে বিশ্বকাপের আসরে নান্দেজের সেরা খেলার উপর নির্ভর করবে, উরুগুয়ের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ।
বিশ্বকাপে উরুগুয়ের ম্যাচ:
উরুগুয়ে
বনাম
মিশর,
১৫
জুন
২০১৮
উরুগুয়ে
বনাম
সৌদি
আরব,
২০
জুন
২০১৮
উরুগুয়ে
বনাম
রাশিয়া,
২৫
জুন
২০১৮
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য কেমন দল গঠন করেছে দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে।
গোলরক্ষক: ফার্নান্দো মুসলেরা, মার্টিন সিলভা, মার্টিন ক্যাম্পানা
ডিফেন্ডার: দিয়েগো গোদিন, হোসে মারিয়া গিমিনেজ, সেবাস্তিয়ান কোয়েটিস, ম্যাক্সিমিলানো পেরেরা, গ্যাসটন সিলভা, মার্টিন, গুইলারমো ভারেলা
মিডফিল্ডার: নাহিতান নিনদিজ, লুকাস টোরেইরা, মাতিয়াস ভেসিনো, রডরিগো বেন্টাঙ্কুর, কার্লোস স্যাঞ্চেজ, জর্জিয়ান ডি আরাসিয়েতা, দিয়েগো লাক্সাল্ত, ক্রিস্টিয়ান রডরিগেজ, জোনাথন উরিতাভিসকায়া
ফরওয়ার্ড: ক্রিস্টিয়ান স্টুয়ানি, ম্যাক্সিমিলানো গোমেজ, এডিনসন কাভানি, লুইস সুয়ারেজ