অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত ২০১৮-১৯: যদি ক্রিকেট রোমান্টিক হন, চোখ রাখুন এই ৫টি আকর্ষণীয় বিষয়ে
অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত টেস্ট সিরিজের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে এমন ৫টি আকর্ষণীয় বিষয়।
সৌরভ-সচিনদের সময় থেকেই ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ দুই দলে বেশ কিছু ভাল মানের ক্রিকেটারের উপস্থিতি ও তার হার না মানা মনোভাব। কাজেই ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া মূল ক্রিকেট-যুদ্ধের পাশাপাশি, সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যেও চলে ক্রিকেটিয় টক্কর। আর এই ছোট্ট ছোট্ট লড়াইগুলোই জন্ম দেয় ক্রিকেট-রোমান্সের।
অতীতে ম্য়াতগ্রা বনাম সচিন, ওয়ার্ন বনাম সচিন বা স্টিভ ওয়া বনাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ক্রিকেট মস্তিষ্কের সংঘর্ষে বুঁদ হয়ে থেকেছেন সমর্থকরা। আজকের যুগেও বিরাট বনাম স্টার্ক লড়াই দারুণ উপভোগ্য। বর্তমান সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল স্নিথ-ওয়ার্নার ছাড়া অনেকটাই দুর্বল নিশ্চয়ই। কিন্তু, নতুন বল হাতে স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউডদের বোলিং আক্রমণ কে কি আদৌ দুর্বল বলা যায়? যেখানে ভারতীয়দের ভাল মানের জোরে বোলিং খেলার ব্যাপারে ঐতিহ্যগত দুর্বলতা রয়েছে।
কাজেই এই সিরিজেও এরকম আকর্ষণীয় লড়াইয়ের অভাব হবে না। মাইখেল বেঙ্গলি সিরিজ শুরুর আগেই এরকম পাঁচটি ক্রিকেটিয় টক্কর উপস্থাপন করলো, যেগুলির দিকে আসন্ন সিরিজে চোখ রাখতেই হবে।
মিচেল স্টার্ক বনাম কোহলি
গোটা সিরিজটি যদি ২২ খেলোয়াড়ের লড়াইয়ের বদলে ২জনের টক্করে নামিয়ে আনা হয়, তবে সেই দুজনের নাম হবে মিচেল স্টার্ক ও বিরাট কোহলি। এই লড়াই-ই কিন্তু গোটা সিরিজের ভাগ্য লিখে দিতে পারে। সম্প্রতি চোট কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরেছেন স্টার্ক। ধীরে হলেও তিনি কিন্তু তাঁর আগের ছন্দে ফিরছেন। শেষ টি২০ ম্যাচে মাত্র ৪ ওভারেঅই তিনি তার প্রমাণ রেখেছেন। সেরা ফর্মের স্টার্ক কিন্তু প্রায় ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় একেবারে নিখুঁত জায়গায় বল রাখতে পারেন। অপরদিকে আছেন কোহলি। তিনি এই মুহূর্তে বোধহয় ফর্মের একেবারে শিখরে রয়েছেন। যে কোনও ধরণের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে তাঁর মতো ছন্দে কোনও ব্যাটসম্য়ান নেই।
দুই নেতার টক্কর
বিরাট কোহলির পাশে টিম পেইন যে যথেষ্টই ম্যাড়মেড়ে একটি নাম তা মানতেই হবে। কিন্তু খেলাটার নাম যে ক্রিকেট। এখানে আজ যে ফকির কাল সেই রাজা। পেইনের দুর্ভাগ্য তাঁকে এমন এখটি অস্ট্রেলিয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দাটিত্ব দেওয়া হয়েছে, যে দলে নেই দলের প্রধান দুই ব্যাটারই। তবে তার মধ্যেই যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন পেইন কিন্তু নেতা হিসাবে ক্রিকেট বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করে নিতে পেরেছেন। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার আগের সিরিজেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ড্র রাখার বিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু এবার তাঁর সামনের চ্য়ালেঞ্জটা অনেক বড়। বিরাট কোহলি তো আর সরফরাজ আহমেদ নন। কাজেই সিরিজে পেইন কতটা কোহলির বিরাট ছায়ার থেকে বেরিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন তার উপর সিরিজের অনেক কিছু নির্ভর করছে।
পারবেন খোয়াজা?
উসমান খোয়াজাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয় বোর্ডের অনেক স্বপ্ন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা খোয়াাকে সুযোগ দিয়েছেন, আর আশা করেছএ, এইবার খোলস ছেড়ে বেরোবেন তিনি। কিন্তু এতদিন সেই স্বপ্নপূরণের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি তিনি। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে তাঁর মধ্যে আশ্চর্য পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে তিনিই অজিদের তরফে এখমাত্র উত্তর ছিলেন বলা যায়। সিরিজে তাঁকে আউট করতে মুশকিলে পড়েছিলেন পাকিস্তানিরা। ইউএই-তে যে সম্ভাবনা তিনি দেখিয়েছেন, তার প্রকাশ ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে ঘয়ে কিনা সেদিকেও নজর থাকবে।
ডুববেন নাকি ভাসবেন?
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ফিঞ্চ নিজৈেই বলেছিলেন দলে কারোর জায়গা পাকা নয়। তাঁদের নীতি হল 'পারফর্ম করো, নইলে এসো'। সমস্যা হল, সাম্প্রতিক সময়ে ফিঞ্চ নিজেই বারাবার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি উইকেট ছুঁড়ে দেওয়ার পরই অস্ট্রেলিয়ার ব্য়াটিং ধরাশায়ী হয়েছে, এরকম ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকহবার দেখা গিয়েছে। লম্বা সিরিজের শুরুতেই যদি ফর্মে ব্যাট করতে পারেন তিনি, সেক্ষেত্রে গোটা সিরিজে তিনি সেই ফর্ম ধরে রাখার সুযোগ পাবেন। নচেত গোটা সিরিজেই সমস্য়ায় পড়বেন। কাজেই এই সিরিজ তাঁর কাছে ভেসে ওঠার নয়তো ডুবে যাওয়ার মতো। স্মিথ ওয়ার্নারের অনুপস্থিতিতে তাঁর ভাসা-ডোবার উপর কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে।
যে লড়াই পিছিয়ে গেল
মাত্র দুটি টেস্ট খেলেই যে সম্ভ্রম যে প্রচার পেয়েছেন পৃথ্বী শ, তা সম্ভবত সচিন তেন্ডুলকর ছাড়া ভারতে আর কোনও ক্রিকেটারের কপালে জোটেনি। 'নতুন বীরেন্দ্র সেওয়াগ', 'নতুন সচিন' - কতভাবেই না তাঁকে ডাকা শুরু হয়েছে। এরপর স্টার্ক, হ্যাজেলউড, কামিন্সদের কড়া পেস পরূক্ষার সামনে তাঁকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু. অনুশীলন ম্যাচের চোট তাঁকে প্রথম টেস্ট থেকে ছিটকে দিয়েছে। দ্বিতীয় টেস্টেও তাঁর খেলা নিয়ে সমশয় রেছে। কিন্তু সিরিজের শেষের দিকে কিন্তু এই দারুণ আকর্ষণীয় লড়াই দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।