অ্যাডিলেড টেস্টে বিপাকে ভারত, ড্রাইভের ফাঁদে পড়ে আউট ৪ ব্যাটসম্যান
চার ব্যাটসম্যানের একই ভুল। আর তারই খেসারত এখন দিচ্ছে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপ। অস্ট্রেলিয়ার মতো গতি সম্পন্ন পিচে হাফ-কক মুভমেন্টে ড্রাইভ যে কতটা বিপজ্জনক স্টান্স তা এখন বুঝতে পারছে ভারতীয় ক্রিকেট দল।
চার ব্যাটসম্যানের একই ভুল। আর তারই খেসারত এখন দিচ্ছে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপ। অস্ট্রেলিয়ার মতো গতি সম্পন্ন পিচে হাফ-কক মুভমেন্টে ড্রাইভ যে কতটা বিপজ্জনক স্টান্স তা এখন বুঝতে পারছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মতো বাউন্সি এবং সুইং-এর মতো পিচে থাম্ব রুলই হল যতটা সম্ভব সামনের পায়ে বেশি করে খেলা। কারণ এখানে বল সুইং করার আগেই যদি ব্য়াট দিয়ে বলকে আটকে দেওয়া যায় তাহলে আউট হওয়ার ভয়টা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু, অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম দিনের কয়েক ঘণ্টাতেই আউট হওয়া একজনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে দেখে মনে হয়নি তাঁরা এই থাম্ব-রুল-কে মাথায় রেখেছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলে এমন সব পেসার রয়েছেন যারা গতির সঙ্গে সঙ্গে বল থেকে বাউন্সও আদায় করে নেন। স্লিপ-গালি-কভার দিয়ে ঘিরে রেখে অস্ট্রেলিয়ানরা বোলাররা এভাবেই সমানে বল ফেলে যায়। পিছন পা বা হাফ-কক-এ এমন বলের মোকাবিলা করতে গেলেই তা স্লিপ থেকে গালি-তে দাঁড়ানো ফিল্ডারদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু, ভারতের চার প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান-ই সেই একই ভুল করে গেল।
এদিন টসে জিতে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু কে এল রাহুল ওপেন করতে নেমেই অহেতুক সমানে ড্রাইভ করার চেষ্টা করছিলেন। হ্য়াজেলউড-এর পাতা ফাঁদে পা বাড়িয়েই দেন রাহুল। পা-এর কোনও মুভমেন্ট ছাড়াই হাফ-কক-এ ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন তিনি। ব্যাট-এর কানা লেগে বল সোজা চলে যায় তৃতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা অ্য়ারঞ্চ ফিঞ্চ-এর হাতে।
রাহুল আউট হন ১.৬ ওভারে। আর তাঁর পিছন পিছন ৬.৬ ওভারে আউট হয়ে যান মুরলি বিজয়। তিনিও রাহুলের মতোই পা না এগিয়ে ড্রাইভ মারার চেষ্টা করে স্টার্কের বলে পেইনের হাতে ক্যাচ দেন। সবাইকে অবাক করে দেন কোহলি। তিনিও যে হাফ-কক ড্রাইভের চেষ্টা করবেন তা কেউ ভাবতে পারেননি। গালির উপর দিয়ে বল তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে খোওয়াজার হাতে তালুবন্দি হন ভারত অধিনায়ক। আজিঙ্ক রাহানেও একই ভাবে ড্রাইভ করতে গিয়ে হ্যাজেলউড-এর বলে হ্য়ান্ডসকম্ব-এর হাতে বন্দি হন।
এই চার ব্যাটসম্য়ানের আউট-এ একটা সময় মনে হচ্ছিল ভারতীয় ইনিংস না ৮০ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায়। কারণ, সেই সময় ভারতের রান ছিল ২০.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৪১ রান। এরপর পূজারা ও রোহিত শর্মা কিছুটা হলেও সাবধানে খেলছিলেন। কিন্তু, ভারতীয় দলের 'হিটম্যান' রোহিত শর্মা যতই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হোন না কেন তাঁর রক্তে যে রাহুল দ্রাবিড় বা সৌরভ, সচিনদের পিচ আঁকড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা নেই তা ফের একবার এদিন প্রমাণ হয়ে যায়। পূজারার সঙ্গে ভারতীয় ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করছিলেন ধীরে-ধীরে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরও ভালোই ব্যাট করছিলেন দু'জনে।
বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই পরিণতি ডেকে আনেন রোহিত। ম্যাচের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জঘন্য শটটি খেলতে গিয়ে তিনিও আউট হয়ে যান। তাঁকে শিকার করেন অজি স্পিনার নাথান লিঁয়। অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয় দলে অভিষেক ঘটানো ক্রিস হ্যারিসের হাতে তালুবন্দি গন রোহিত। রোহিত ৬১ বলে ৩৭ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। এরপর ঋষভ পন্থ নামলেও তিনি দ্রুত রান তোলার চক্করে ২৫ রান করে কট-বিহাইন্ড হন। এমন পরিস্থিতিতে উইকেটে টিকে থাকাটাই যে সবচেয়ে লক্ষ্য তা ঋষভ-কে দেখে বোঝাই যায়নি। ঋষভের এই ব্যাটিং আরও একবার ভারতীয় টেস্ট দলে ঋদ্ধিমান সাহার ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরল বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।