আই-লিগ ২০১৮-১৯: ঘরের মাঠে প্রথম ম্য়াচেই থমকে গেল মশাল-বাহিনীর অশ্বমেধের ঘোড়া
ইস্টবেঙ্গল বনাম চেন্নাই সিটি এফসি, আইলিগ ২০১৮-১৯-এর ম্যাচের প্রতিবেদন।
আইলিগের তৃতীয় ম্যাচেই চেন্নাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে আটকে গেল লালহলুদের অশ্বমেধের ঘোড়া। মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) প্রথমবার ঘরের মাঠে খেলতে নেমে তীব্র লড়াইয়ের পর চেন্নাইয়ের দলটির বিরুদ্ধে ১-২ ব্যবধানে হারতে হল মেনেন্দেজের ছেলেদের।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষে (৪৫+২') স্যান্ড্রো রড্রিগেজের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল চেন্নাই সিটি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই (৫২') ম্য়াচে সমতা ফিরিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের এস্কেদা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে চেন্নাইয়ের হয়ে জয় সূচক গোলটি করে যান অধিনায়ক নেস্তর গোর্দিও। তাদের দুটি গোলই অবশ্য এল সেট পিস থেকে। স্যান্ড্রো গোল করেন ফ্রিকিক থেকে, আর গোর্দিওর গোল আসে পেনাল্টি থেকে।
পতাকার গতিবিধি
মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকাটি লাগানো রয়েছে তা সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে।
আক্রমণভাগের ভেদশক্তি উধাও
মেনেন্দেজ দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। প্রথম দুই ম্যাচে নিখুঁত ফুটবল খলায় লাল-হলুদ জনতার প্রত্যাশাও ছিল আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু এদিনের ফুটবলে সমর্থকদের হতাশই করলেন এস্কেদারা। দুই শীর্ষ স্থানীয় দলের মধ্যে তীব্র লড়াই হলেও ইস্টবেঙ্গের অ্যাটাকিং থার্ডে আগের দুই ম্যাচে যে ভেদ শক্তি দেখা গিয়েছিল, এদিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তা হঠাত করেই উধাও হয়ে যায়। নিচ থেকে আক্রমণ তুলে এনেও বারবার এই জায়গাতেই আটকে গিয়েছে মশাল-বাহিনী। এই রোগেই কিন্তু আগের সব আই লিগ মরসুমে ভুগেছে কলকাতার দলটি। খেলা শেষ হওয়ার আগেই গ্যালারি ফাঁকা হয়ে যায়।
সুদর্শন চক্র
পুরীর যে কোনও জায়গা থেকে তাকালে মন্দিরের চুড়ার সুদর্শন চক্র আপনার সম্মুখীন থাকবে।
শেষ পর্যন্ত নামলেন মানজি
লাজং ম্যাচের জয়ী একাদশে এদিন দুটি পরিবর্তন করেছিলেন স্প্যানিশ কোচ মেনেন্দেজ। লালরামচুলোভার বদলে খেলান সামাদকে, আর ভ্য়ানলালরেমডিকার বদলে প্রথম দলে ফিরে আসেন ইয়ামি লঙভা। অপরদিকে শেষ পর্যন্ত চেন্নাইয়ের দলটির হয়ে এদিন প্রথম থেকেই মাঠে নেমেছিলেন তাদের তারকা স্ট্রাইকার, আই লিগে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা পেদ্রো মানজি।
হাওয়ার চলন
সাধারণত দিনের বেলায় হাওয়া সমুদ্রের দিক থেকে তটের দিকে আসে। আর সন্ধ্যের সময় তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে। কিন্তু পুরীর ক্ষেত্রে তা ঠিক উল্টো। সকাল তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে, এবং সন্ধ্যায় সমুদ্রের দিকে থেকে তটের দিকে হাওয়া বয়।
স্যান্ড্রোর চোখ-ধাঁধানো ফ্রিকিক
প্রথম কুড়ি মিনিট কিন্তু দুই দলের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে বেশ জমে উঠেছিল খেলা। কিন্তু ক্রমেই লাল-হলুদ ফুটবলাররা ছোটো ছোটো ভুল করা শুরু করেন। রালতের একটি ব্য়াক পাস তেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে প্রায় গোল করার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল কমলা-বাহিনী। কিন্তু দিনটা আজ মানজির ছিল না। তাই ফাঁকা গোলেও তিনি বল ঠেলতে ব্যর্থ হন।
এরপর থেকেই চাপ বাড়িয়েছিল চেন্নাইয়ের দলটি। এর ফল আসে প্রথমার্ধের একেবারে শেষে। গোলপোস্ট থেকে প্রায় ২০ গজ দূরে ফ্রিকিক পেয়েছিল চেন্নাই সিটি। শট নেন তাদের স্প্যানিশ স্ট্রাইকার জুটির অন্যতম স্যান্ড্রো। তাঁর বাঁ-পায়ের শট রক্ষণের দেওয়ালের উপর দিয়ে গিয়ে পোস্টের কোনা দিয়ে ঢুকে জালে জড়িয়ে যায়। দাগারের কিছু করার ছিল না।
মন্দিরের উপর
কোনও পাখি বা বিমান পুরী মন্দিরের উপর দিয়ে উড়তে পারে না।
এস্কেদার শোধ
বিরতিতে ফল ছিল ১-০। কিন্তু বিরতির পর ম্য়াচে সমতা ফেরানোর জন্য লাল-হলুদের খেলায় ঝাঁঝ ফিরে এসেছিল। এনরিকে এস্কেদার সৌজন্যে চেন্নাই-এর লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বিরতির পর পরিবর্ত হিসেবে মাঠে আসা সুরাবদ্দিন মল্লিক আড়াআড়ি পাস বাড়িয়েছিলেন জনি অ্যাকোস্টার জন্য। কোস্টা রিকার বিশ্বকাপার বলটি ফ্লিক করে দেন এস্কেদাকে। গোল করতে ভুল করেননি তিনি।
মন্দিরের ছায়া
মন্দিরের সবচেয়ে বড় প্রাসাদটির ছায়া দিনের যে কোনও সময় অদৃশ্য থাকে।
ফের হারিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল
এরপরই আরও তেড়েফুড়ে ওঠার বদলে ক্রমশঃ ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বস্তুত, এই সময় খেলাই খুব বাজে হয়েছে। তারমধ্যেও .যেটুকু যা আক্রমণ দেখা গিয়েছে তা চেন্নাইয়ের তরফ থেকেই এসেছে। ম্য়াচের ৮২ মিনিটের মাথায় গিয়ে গোল পায় তারা। সেখান থেকে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে আর সমতা ফেরানো সম্ভব হয়নি।
নিচ থেকে উঠে আসা প্রভিত্তো রাজুর উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়েছিলেন অজিতকুমার কামরাজ। প্রভিত্তোকে আটকাতে গোল ছেড়ে এগিয়ে আসেন দাগার। কিন্তু প্রভিত্তোকে বাধা দেওয়া তাঁর বিধিসম্মত হয়নি। ফলে পেনাল্টি পায় চেন্নাই। প্রায় ফাঁকা গ্যালারির সামনে গোল করে ম্যাচের ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দেন চেন্নাই অধিনায়ক।
প্রসাদ
পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট হল প্রসাদ। সারা বছর ধরেই সমপরিমান প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমান প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ হোক বা ২০ লক্ষ মানুষকে খাওয়ানো হোক তবু প্রসাদ কখনও নষ্ট হয় না বা কখনও কম পড়ে না।
রান্নার পদ্ধতি
মন্দিরের হেঁশেলে একটি পাত্রের উপর আর একটি এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচের তারপরে। এভাবে করতে করতে সবচেয়ে দেরিতে সবচেয়ে নিচের পাত্রের রান্না হয়।
সিংহদ্বারের সিড়ি
মন্দিরের ভিতরে সিংহদ্বারের মন্দিরে প্রবেশ করার পর প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পারবেন না। কিন্তু ওই সিঁড়িটি টপকে গেলে আবার সমুদ্রের শব্দ শুনতে পাবেন। সন্ধ্যাবেলায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
নবকলেবর
সাধারণত কোনও মন্দিরে বিগ্রহ নয় পাথর নয় ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা তিনজনের বিগ্রহই কাঠের তৈরি। প্রত্যেক ১২ বছর পর একটি গোপন রীতি মেনে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে নতুন শরীর দেওয়া হয়। অর্থাৎ নতুন রূপে তৈরি করা হয় যাকে বলা হয় পুনর্জন্ম তথা নবকলেবর।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মন্দিরের মুখ্য পুরোহিত সপ্নাদেশ পান যে গাছের কাঠ দিয়ে নবকলেবর হবে তা কোথায় পাওয়া যাবে। সেই গাছের কিছু বিশেষত্ব থাকতে হবে। গাছটি নিমগাছ হবে কিন্তু তাতে চন্দনের গন্ধ থাকবে, গাছে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মর চিহ্ন থাকবে। সেই গাছে যেন কোনওদিনেও কোনও পাখি না বসে, পশু না চড়ে। আর গাছটি সাপেরা ঘিরে রাখবে।
মন্দিরের রূপ
এখনকার জগন্নাথ মন্দিরটির সঙ্গে প্রথম তৈরি হওয়া পুরী মন্দিরের অনেক তফাৎ। শুধু মূল মন্দিরটা তৈরি করেছিলেন ইন্দ্রদুম্ন । কিন্তু পরে তৎকালীন সম্রাট ও শাসকদের নেতৃত্বে ক্রমে মেঘানন্দ পাচেরি, মুখশালা , নটমণ্ডপ প্রভৃতি আরও বহু সম্পদ যুক্ত করা হয়েছে।
ফলে ৪ ম্য়াচ পরেও অপরাজিত থেকে লিগ-টেবিলের শীর্ষেই রইল চেন্নাই সিটি এফসি। পৌঁছে গেল ১০ পয়েন্টে। তাদের থেকে একটি ম্য়াচ কম খেলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল রইল দুইতে।