সুপার ওভারে টাই করেও হার কেকেআর-এর, জয়ী রাজস্থান রয়্যালস ও ক্রিকেট
আইপিএল ৭ এর এই প্রথম ম্য়াচ যা সুপার ওভার পর্যন্ত গড়াল। টস জিতে ব্যাট করতে যায় রাজস্থান রয়্যালস। ১৮টি চার এবং একটি ৬ সহযোগে ১৫৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা খাঁড়া করে রাজস্থান রয়্য়ালস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল করলেও জেমস ফকনার যে এদিন এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন কে জানত। এদিন কার্যত একাই কেকেআরকে শেষ করে দিলেন ফকনার। ১৯ তম ওভারে বল করতে এসে বিনয় কুমার ও রবিন উত্থাপাকে শূন্য রানেই ফিরিয়ে দেন ফকনার। ক্রিজে জমে যাওয়া সুর্যকুমার যাদবকে তুলে নিয়েই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন একা ফকনারই। ১৮ ওভারের শেষে যেখানে ১৩৭ রানে মাত্র ৪ উইকেট ছিল সেখানে ১৯ ওভারের শেষে কেকেআরের রান দাঁড়ায় ১৪১ রানে ৭ উইকেট।
স্নায়ুচাপ তখন এতটাই তীব্র যে শেষ ওভারে ১২ রান কেকেআর করতে পারবে কি না সে নিয়ে তীব্র কেকেআর সমর্থকের মনেও প্রশ্ন হয়তো একবার জেগেছিল। এহেন আঙুল কামড়ানো পরিস্থিতে স্ট্রাইকে ছিলেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বলেই ফুল টস বলকে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারির দিকে ঠেলে দিলেন। এর পর আউট হলেন পীযূষ চাওলা। এর রান সম্পূর্ণ করে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হন চাওলা। তৃতীয় বলটি ওয়াউ করেন রিচার্ডসন। চতুর্থ বলে ওয়াইডসাইড ইয়র্কারে রান আসেনি কেকেআরের। পঞ্চম বলে ২ রান নিতে সমর্থ হন সাকিব। শেষ বলে কেকেআরের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩ রান। কিন্তু রিচার্ডসনের দুরন্ত ডেলিভারিতে ২ রান নিয়ে টাই করে কেকেআর।
১৯তম ওভারে ফকনারের ৩ উইকেট তুলে নেওয়াটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল
টাই হওয়ার ফলে সুপার ওভার পর্যন্ত গড়ায় ম্যাচ। পরিস্থিতি যা সুপারওভারে জিততেই হবে কেকেআরকে। সেখানে আর টাই করার সুযোগ নেই। কারণ সুপারওভারেও টাই হলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ণয় হবে কোন দল কত বেশি চার ও ছয় মেরেছে তার ভিত্তিতে। এই পরিস্থিতিতে প্রথম ব্যাট করতে নামে কেকেআর। এখন কেকেআরের হয়ে কোন দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামবে তা নির্বাচন করাটাও খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ ফকনারের দুরন্ত স্পেলিংয়ের পর যে এক ওভারের খেলায় তাঁকে ছাড়া অন্য কোনও বোলারকেই অধিনায়ক বাছবেন না তা ছিল প্রায় নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে সাকিব যেহেতু অপরাজিত ছিলেন এবং ব্যাটে ততক্ষণে তার হাত জমে গিয়েছে তাই সাকিবকে খেলানোটাই নিরাপদ মনে করলেন অধিনায়ক। অন্যদিকে নিজে বা পিঞ্চ হিটার রবীন উত্থাপাকে না নামিয়ে এদিনের আর এক সফল ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদবকে মাঠে নামালেন গম্ভীর।
প্রথম বলেই দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান যাদব। ফাস্ট ডাউনে মনীশ পান্ডেকে নামায় কেকেআর। মনীশও এদিন ভালই ব্যাট করেছিলেন। কিন্তু সুপার ওভার স্নায়ুর লড়াই। এই ওভারে বড় রান না তুললে হার নিশ্চিত। পান্ডে ১ রান নিয়ে সাকিবকে স্ট্রাইক দেন. এক্ষেত্রে আর একটা উইকেট পড়লেই যে খেলা শেষ সে চিন্তাও মাথা ভারি করে দিচ্ছিল কেকেআর খেলোয়াড়দের। তৃতীয় বলেও ফের ১ রান। চাপ ক্রমশ বাড়ছে কেকেআরের উপর এমন সময় চতুর্থ বলে লঙ্গ অনে স্টেপ আউট করে মারা মনীশের ছক্কা কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়। পঞ্চম বলে ফের ১ রান। শেষ বলে ফের দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান সাকিব। কেকেআর লক্ষ্যমাত্র তৈরি করে ১২ রান। কিন্তু ১১ রান করে রাজস্থান রয়্যাল টাই করতে পারলেও জয়ী হবে রাজস্থানই। তাড়াহুড়ো না করে যদি প্রথম বলে ১ রান নিয়ে যাদব নিজের উইকেটটা টিকিয়ে রাখতেন, বা যদি আর এক রান ও কেকেআর বেশি করতে পারত তাহলে হয়তো বা জয়ী দল অন্য হতে পারত।
রাজস্থানের হয়ে স্টিভ স্মিথ ও শেন ওয়াটসন ব্যাট করতে আসেন। বল হাতে আসেন সুনীল নারিন। প্রথম বলে ১ রান, দ্বিতীয় বলে ২ রান, তৃতীয় বলে ১ রান নেয় রাজস্থান। চাপ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে যেন চার বা ছয় না হাকিয়ে বসে রাজস্থান এই চিন্তার উদ্রেগ হতেই সেই ভয়কে সত্যি করে ওয়াটসনের মারা চার ম্যাচকে রাজস্থানের পক্ষে নিয়ে এল। পঞ্চম বলে ফের ১ রান। এবারেও সেই একই পরিস্থিতি, শেষ বলের জেতার জন্য দরকার ৩। তবে ২ রান হলেও জয় নিশ্চিত রাজস্থানের। শেষ বলে কভারে বল ঠেলে দিয়ে অতি সহজে ২ রান নিয়ে জয়ী অবশেষে রাজস্থান রয়্যাল। কেকেআরের গোটা দল এদিনের ট্র্যাজেডি নায়ক।