মরসুমের প্রথম ডার্বি ড্র, বিশ্বকাপার থেকে ফুটবল আবেগে কেঁপে উঠল যুবভারতী
এই বছরের ফুটবল মরসুমের প্রথম ডার্বি ড্র। উত্তেজনায় ভরপুর এই ম্যাচ আগাগোড়া ছিল নাটকীয়তায় ঠাসা।
এই বছরের ফুটবল মরসুমের প্রথম ডার্বি ড্র। উত্তেজনায় ভরপুর এই ম্যাচ আগাগোড়া ছিল নাটকীয়তায় ঠাসা। দুই পক্ষের আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে খেলা প্রথম থেকেই জমে উঠেছিল। প্রথমার্ধ ২গোল দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল মোহন বাগান। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় ফেরে ইস্টবেঙ্গল। ৬০ মিনিটের মধ্যে ২টি গোল শোধ করে দেয়। এরপর আর কোনও পক্ষই গোল করতে পারেনি।
খেলা শুরুর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই মোহনবাগান ক্রস ক্রস খেলতে ইস্টবেঙ্গলের বক্সে পৌঁছে যায়। বক্সের মধ্য়ে দুরন্ত পাস বাড়ান মোহনবাগানের অরিজিৎ বাগুই। ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে দিতে ভুল করেননি পিন্টু মাহাতা। মোহনবাগানের মাঝমাঠকে এদিন নেতৃত্ব দেন অরিজিৎ বাগুই। সবুজ-মেরুণের দ্বিতীয় গোলটির ক্ষেত্রেও তাঁর একশ শতাংশ অবদান। অরিজিৎ-এর বাড়ানো ক্রস থেকে ফের ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে দেন হেনরি কিসেক্কা। ম্য়াচের দ্বিতীয় গোলটি যখন হয় তখন খেলার বয়স ৩০ মিনিট। এদিন মোহন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী আক্রমণাত্মক ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন। ফলে শুরু থেকেই ডিকাকে সামনে রেখে প্রবল গতির ফুটবল খেলতে শুরু করে মেরিনার্সরা। যার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল প্রথমে পাল্লাই দিতে পারছিল না। ফলে মোহনবাগানের গতিকে সামাল দিতে গিয়ে দুই দু'টি গোল খেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতেই এক অন্য মেজাজে উঠে আসে লাল-হলুদ। সামান্য কয়েকটি পরিবর্তন করে দেন ইস্টবেঙ্গলের টিডি সুভাষ ভৌমিক। এবার পাল্টা আক্রমণে গতি-কে অস্ত্র করে ইস্টবেঙ্গল। যার জেরে মোহনবাগান বক্সের মধ্যে চাপ তৈরি করে ইস্টবেঙ্গল। এই চাপেই কিছুটা দিশেহারা হয়ে যায় মোহনবাগান রক্ষণ। বক্সের মধ্যে ভেসে সেন্টারে ভালো জোরেই মাথা ছুঁয়েছিলেন জনি অ্যাকোস্টা। বল আটকাতে গিয়ে অহেতুক সামনে ড্রাইভ মারতে যান শিল্টন। ফলে অ্যাকোস্টার হেড শিল্টনের শরীরে লেগে ফের অ্যাকোস্টার পায়ে-ই যায়। মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া শিল্টনের শরীরের উপর দিয়ে বল গোলে ঠেলতে ভুল করেননি অ্যাকোস্টা। সই করার তিন দিনের মধ্যে অভিষেকেই ডার্বিতে গোল করে দেওয়া অ্যাকোস্টাকে নিয়ে মাঠের মধ্যেই উন্মাদনা শুরু হয়ে যায়। যদিও, মোহনবাগানের দুটি গোল দেওয়ার ক্ষেত্রে জনি অ্য়াকোস্টার দোষ অস্বীকার করা যায় না। কারণ, দুটো পাস আটকানোর ক্ষেত্রে জনি কিছু ভুলচুক হয়েছিল। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় শুরুতে মোহন-এর জালে বল ঢুকিয়ে খানিকটা হলেও যেন পাপস্খলন করলেন অ্যাকোস্টা। ৫৮ মিনিটের মাথায় ফের মোহনবাগান বক্সের মধ্যে ফিরতি কর্নার আদায় করে ইস্টবেঙ্গল। প্রথম গোলপোস্টের উপরে থাকা ভলিটাকে হাত দিয়ে সামনে ঠেলেই দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে তেমন জোর ছিল না। ফলে গোলমুখের একদম সামনেই বলটি পড়েছিল। আর সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের রালতে। শিল্টন তখন নেটের মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। রালতে প্রায় ফাঁকা গোলেই বল ঠেলে দিতে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন গ্যালারিতে থাকা লাল-হলুদ সমর্থকরা। বলতে গেলে ইস্টবেঙ্গলের অসাধারণ কামব্যাকে তখন খেলা ২-২।
এরপর দুই দলই গোলের সংখ্যা বাড়াতে তেড়েফুড়ে আক্রমণে ওঠে। যার জেরে ডিকা অন্তত ৩টি সুযোগ পান। তিনটি চান্সের মধ্যে একটা ৬০:৪০-এর রেশিও থাকলেও, বাকি দুটি সুযোগের ক্ষেত্রে তা ৮৫:১৫-র রেশিও ছিল। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই গোলে বল ঠেলতে পারেননি ডিকা। সুযোগ যে ইস্টবেঙ্গল পায়নি তা নয়। একবার বক্সের সামেন আমনা ও শিল্টনের ওয়ান ইস্টু ওয়ান। শিল্টন ঝাঁপিয়ে পড়ে আমনার পা থেকে বল তুলে নেন। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের ক্ষেত্রে শিল্টনকে দায়ী করা হচ্ছিল। আমনার পা থেকে বল তুলে নিয়ে কিছুটা হলেও যেন পাপ-স্খলন করলেন শিল্টন।
মরসুমের প্রথম ডার্বি ঘিরে উত্তেজনার বারুদে এদিন বারবার কেঁপে ওঠে যুবভারতী। এর আগে কোনও ডার্বিতে বিশ্বকাপারের অভিষেক হয়নি। ফলে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে বিশ্বকাপার জনি অ্যাকোস্টাকে নিয়ে প্রবল উন্মাদনা ছিল। যা ম্যাচ চলাকালীন বারবার গ্যালারিতে ফুটে উঠছিল। এই উন্মাদনায় কিছুটা হলেও বাড়তি মাত্রা যোগ করেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন স্প্য়ানিশ কোচ অ্যালেজান্দ্রো মেন্দেনেজ গার্সিয়া। আইলিগ থেকে দলের দায়িত্ব নেবেন তিনি।
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2FMohunBaganAthleticClub1889%2Fvideos%2F1667688066632446%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="308" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>
ডার্বিতে অবশ্য উজ্জ্বল হল জঙ্গল-মহল। কারণ সেখানকার পিন্টু মাহাতাই এদিনের ডার্বির ম্য়ান অফ দ্য ম্য়াচ। একটি গোল করার সঙ্গে সঙ্গে পিন্টু যে গোলটি করলেন তা অনবদ্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পিন্টুর সঙ্গে আরও দুই বাঙালি তরুণ ফুটবলার এদিন নজর কেড়েছেন। একজন মোহনবাগানের অরিজিৎ বাগুই এবং অন্যজন ইস্টবেঙ্গলের সৌরভ দাস।