এশিয়া কাপ ২০১৮, ফাইনালে কারা হতে পারেন নায়ক - চোখ রাখুন এই ক্রিকেটারদের দিকে
এশিয়া কাপ ২০১৮ ফাইনাল ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারেন এমন ৮ জন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার।
শুক্রবার বিকেল ৫টায় দুবাইতে এশিয়া কাপ ২০১৮-র ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে এখনও একমাত্র অপরাজিত দল, ভারত লিগ পর্যায়ে ৮ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশকে। ভারত ছয়বারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন। অপরদিকে বাংলাদেশ এদিন নামছে এই টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম শিরোপা অর্জন করার লক্ষ্যে।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য চোট আঘাতে তাদের প্রথম একাদশে অনেক পরিবর্তন করতে হয়েছে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে। ভারতের মতো শক্তিশালী দেশকে পরাস্ত করতে গেলে তাদেরকে সব বিভাগে দল হিসাবে সফল হতে হবে। কিন্তু তাও এই বাংলাদেশ দলে এমন কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা একক দক্ষতায় পাল্টে দিতে পারেন ম্যাচের রঙ। অপরদিকে ভারতের কিছুটা হলেও সমস্যা রয়েছে মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটিং নিয়ে। দেখে নেওয়া যাক কারা হতে পারেন এশিয়া কাপ ফাইনালের নায়ক।
রোহিত শর্মা
ভারতের অস্থায়ী অধিনায়ক সীমিত ওভারের ক্রিকেটের এক ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। একবার তাঁর ব্য়াট চলতে শুরু করলে তাঁকে থামানো কঠিন। আর এই এশিয়া কাপে তো তিনি ফর্মের তুঙ্গে আছেন। ৪ ইনিংয়ে ১৩৪.৫০ গড় নিয়ে ২৬৯ রান করে এই মুহূর্তে তিনি টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। একটি শতরান করেছেন এবং একটি অর্ধশতরান। সর্বোচ্চ ১১১*। সেই সঙ্গে মোট ২২টি ৪ ও ১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এদিনও রোহিতের ব্যাট একইভাবে চললে বাংলাদেশের কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
মুশফিকুর রহিম
বাংলাদেশের এই প্রাক্তন অধিনায়ক বরাবরই বাংলাদেশ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। আর এশিয়া কাপ থেকে তামিম ও সাকিব বেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়েছে। আর তা তিনি পালনও করে দেখিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। সুপার ফোর পর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনবদ্য ৯৯ রান করে এই ৩১ বছর বয়সী দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কী করতে পারেন। এখনও অবধি এই এশিয়া কাপে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। ৪ ম্যাচ খেলে তিনি ২৯৭ রান করেছেন। সর্বোচ্চ ১৪৪। মেরেছেন মোট ২৩টি ৪ ও ৫টি ৬। শুধু তাই নয় ছোটখাট চেহারার মুশফিকুর যেমন একদিকে বিপক্ষ বোলারদের উপর তীব্র আক্রমণ শানাতে পারেন, তেমনই রান তাড়া করাতেও তিনি দক্ষ।
শিখর ধাওয়ান
ইংল্যান্ডে চুড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান। কিন্তু তিনি ফর্মে থাকলে একাই প্রতিপক্ষের সব আশা শেষ করে দিতে পারেন। আর সেটাই তিনি করে দেখিয়েছেন এশিয়া কাপ জুড়ে। দুটি শতরান সহ ৪ ইনিংসে ৩২৭ রান করে তিনিই এখন অবধি এবারের টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সর্বোচ্চ রান ১২৭। ৪ মেরেছেন ৪১টি, ছক্কা ৬টি। নিংসন্দেহে বাংলাদেশ বোলিংকে ধ্বংস করার জন্য আরও এককবার তাঁর দিকে তাকিয়ে ভারতীয় দল।
মহম্মদ মিঠুন
রানের নিরিখে এশিয়া কাপের প্রথম ১০-এ নেই এই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান। ৫ ইনিংসে তাঁর রান ১৩৫। কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁকে বিচার করলে হবে না। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে প্রয়োজনীয় সময়ে লড়াকু ৬৩ রান করার পর, আবু ধাবিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুপার ফোরের মরণ-বাঁচন ম্যাচে চাপের মুখে রুখে দাঁড়িয়ে তিনি ৬০ রান করেন। ৫ ওভারের মধ্যে ১২ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সেখান থেকে মুশফিকুরের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৩৫ ওভারে রানটাকে ১৫৬-য় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে মিঠুনের চারিত্রিক দৃঢ়তার। বাংলাদেশ মিডল অর্ডারকে আজও ভরসা দিতে পারেন তিনি।
জসপ্রিত বুমরা
গত ২ বছরে ভারতীয় জোরে বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নতি করেছেন ২৪ বছরের তরুণ জলপ্রিত বুমরা। টুর্নামেন্টে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলেই তিনি তুলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায় রয়েছেন ৩ নম্বরে। ইয়র্কারে এতটাই এতটাই দখল যে, নিজের ইচ্ছামতো ইয়র্কার ফেলতে পারেন তিনি। দুবাইয়ের পিচে জোরে বোলারদের জন্য কিছুই নেই। সেখানে তিনি যে শুধু উইকেট তুলেছেন তা নয়, শুষে নিয়েছেন রান তোলার গতিও। এখনও অবধি টুর্নামেন্টে তিনি ২৬.২ ওভার বল করে দিয়েছেন মাত্র ৮৯ রান। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৩.৩৭! শুরুতে, ইনিংসের মাঝে, ডেথে - যে কোনও জায়গাতেই বল করতে তাঁর কোনও সমস্যা হয় না।
মুস্তাফিজুর রহমান
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে প্রয়োজনীয় ছন্দটা পাচ্ছিলেন না মুস্তাফিজ। কিন্তু আফগানিস্তান ম্যাচ থেকেই তিনি তা খুঁজে পান। সেই ম্যাচে শেষ ওভারে আফগানিস্তানের দরকার ছিল মাত্র ৭ রান। মুস্তাফিজুর দেন ৪। তিনি ওই ওভারটা না করলে সেখানেই বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান শেষ হয়ে যেত। তারপরের পাকিস্তান ম্যাচে তিনি ৪৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। ৮ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহের তালিকায় তিনি আপাতত ২ নম্বরে আছেন। বাংলাদেশকে প্রথমবার এশিয়া কাপ জিততে গেলে তাঁকে বলে তাঁকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে। তাঁর প্রধান শক্তি তাঁর বলের বৈচিত্র। অয়র্কার থেকে স্লো বাইন্সার - নানান ধরনের ডেলিভারি রয়েছে তাঁর তুনে।
রবীন্দ্র জাদেজা
দীর্ঘদিন ভারতের একদিনের দলের পরিমণ্ডলের বাইরে ছিলেন জাদেজা। এই টুর্নামেন্টে অক্ষর প্যাটেল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় ঝটতি ডাকে তিনি দলে আসেন। এসে থেকে ৩ ম্যাচে একবার ব্যাট করে ২৫ রান করেছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ তিনি জেতাতে পারেননি। তবে ব্যাটে নয়, জাদেজা প্রভাবিত করেছেন বলে। এক বছরের বেশি সময় পরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই তিনি ৪ উইকেট নেন। পাকিস্তান ম্যাচে উইকেট না পেলেও ফের আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৩ উইকেট নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে তিনি আপাতত এশিয়া কাপ ২০১৮-র যুগ্ম তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
মাহমুদুল্লা রিয়াদ
গোটা টুর্নামেন্টেই মাহমুদুল্লা বাংলাদেশের হয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের হয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁরই। ৫ইনিংসে করেছেন ১৫২ রান। সার্বিক তালিকায় আছেন ১০ নম্বরে। বলে মাত্র ২ উইকেট পেলেও তিনি বলে যতেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন। ৩.৫৩ ইকোনমি রেট নিয়ে তিনি আছেন ৫ নম্বরে।