জোহরি নিষ্কলঙ্ক, কিন্তু প্রশ্ন তৈরি করেই দিল বিসিসিআই-এর কোয়া কমিটির দুই প্রধান-এর ভিন্ন-ভিন্ন মত
যৌন কেলেঙ্কারিকাণ্ডে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে বিসিসিআই-এর সিইও রাহুল জোহরি-কে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্ত এবং রঙ চড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
যৌন কেলেঙ্কারিকাণ্ডে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে বিসিসিআই-এর সিইও রাহুল জোহরি-কে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্ত এবং রঙ চড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিসিসিআই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কিন্তু, রাহুল জোহরি-র নিষ্কলঙ্ক প্রমাণের দিনে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কারণ, বিসিসিআই-এর কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা কোয়া-র মতবিরোধ। কোয়ার অন্যতম সদস্য তথা প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার ডায়না এডুলজি নিজের আগের অবস্থানে অনড় থেকেই রাহুলের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
গত তিন সপ্তাহের-ও বেশি সময় ধরে জোর করে রাহুল-কে ছুটি নিতে বাধ্য করেছে কোয়া। কারণ, এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্ত চলছিল। অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি রাকেশ শর্মা, দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন বরখা সিং এবং আইনজীবী তথা অ্যাক্টিভিস্ট বীণা গৌড় এই তদন্ত করছিলেন। এই তদন্ত কমিটি রাহুলকে ক্লিনচিট দিলেও তাঁকে 'জেন্ডার সেনসিটিভিটি' সম্পর্কে কাউনসেলিং করানোর পরামর্শ দিয়েছে। তদন্ত কমিটির মাথা রাকেশ শর্মা জানিয়েছেন, যাঁরা রাহুলের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন তাঁরা কেউই কোনও প্রমাণ বা নথি পেশ করতে পারেননি। এমনকী তাঁদের বয়ানেও অসঙ্গতি রয়েছে। ফলে এই মহিলারা যে অভিযোগ এনেছেন তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। রাহুলকে বিসিসিআই থেকে তাড়ানোর জন্য একটা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন রাকেশ শর্মা। বুধবার বিসিসিআই-এর সদর দফতরে এক বৈঠকে কোয়া-র হাতে এই তদন্ত রিপোর্ট তুলে দেয় স্বাধীন তদন্তকারী কমিটি।
ক্লিনচিট পাওয়ার পরপরই পিটিআই-কে রাহুল জোহরি জানান তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন অবশেষে। ভগবানের উপরে তাঁর আস্থা ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। রাহুল জোহরির বিরুদ্ধে অক্টোবর মাসে একাধিক মহিলা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। একটি ই-মেলে রাহুল জোহরি-র বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন নাম পরিচয় না জানানো এক মহিলা। টুইটারেও রাহুলের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য সেই পোস্ট ডিলিট করে দেওয়া হয়। এই টুইটার পোস্টে অভিযোগকারীনির অভিযোগ ছিল রাহুল বিসিসিআই-এর আগে যেখানে কাজ করতেন সেখানে তাঁকে যৌন নিগ্রহ করেছিলেন। এরপরও সিঙ্গাপুরের এক মহিলা মিডিয়া প্রোফেশনাল ও অন্যএক মহিলাও রাহুলের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনেন।
রাহুল-কে নিয়ে এই সময় প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়। বিসিসিআই-এর সিইও পদ থেকে তাঁর ইস্তফাও দাবি করা হয়েছিল। ১৫ অক্টোবর এই ঘটনায় কোয়া স্বাধীন তদন্ত কমিটি তৈরি করেছিল। অভিযোগকারিদের মধ্যে দুই মহিলা স্কাইপি-তে তাঁদের অভিযোগের পক্ষে সওয়াল করেন। রাহুলের বিরুদ্ধে বিসিসিআই-এর মহিলা কর্মীর বিরুদ্ধেও অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। যদিও তা ধোপে টেকেনি।
তবে, রাহুলের ক্নিনচিট পাওয়ার থেকেও এখন বড় হয়ে উঠেছে রাহুল-কে নিয়ে কোয়ার মধ্যে তৈরি হওয়া বিরোধ। ডায়না এডুলজি প্রথম থেকেই রাহুলের পদত্যাগ চেয়েছিলেন। তাঁর মত ছিল, বিসিসিআই এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে ছেলে এবং মেয়েরা সমান অগ্রাধিকার পায়। এমন এক প্রতিষ্ঠানে যদি এমন এক ব্যক্তিকে শীর্ষপদে রাখা হয় তাহলে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের মধ্যে সংকোচ তৈরি হতে পারে। সেই কারণ এডুলজি রাহুলের ইস্তফার সঙ্গে সঙ্গে জেন্ডার কাউনসেলিং-এর পক্ষেও বারবার সওয়াল করে এসেছিলেন। এমনকী, বুধবার যখন রিপোর্ট জমা পড়ে। তখনও এডুলজি কোয়ার প্রধান বিনোদ রাই-কে জানিয়েছিলেন রিপোর্ট না প্রকাশ করতে। তাঁর যুক্তি ছিল আগে দিন কয়েক ধরে রিপোর্টটা ভালো করে পড়া হোক। তারপর এটা প্রকাশ্যে আনা যেতে পারে। কিন্তু, বিনোদ রাই একপ্রকার জোর করেই রিপোর্টটি খুলে সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ করে দেন বলে অভিযোগ। বিনোদ রাই-এর এমন আচরণে তীব্র ক্ষুদ্ধ এডুলজি। বিনোদ রাই যখন রিপোর্টটি খুলেছিলেন তখন সেখানে হাজির ছিলেন স্বাধীন তদন্ত কমিটির সদস্য় থেকে শুরু করে বিসিসিআই-এর লিগ্যাল সেলের সদস্যরা।