অধিনায়ক কোহলি কে নিয়ে উঠছে প্রশ্ন - আরও যা যা বিষয় উঠে এল ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে
সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজের পর কোহলির নেতৃত্ব, শাস্ত্রীর কোটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই সিরিজ থেকে আরও যা যা উঠে এল তা আলোচনা করা হল।
ইংল্যান্ডে সদ্য সমাপ্ত ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে যতই ভারত ৪-১ ফলে হারুক, সেই হারে লজ্জার কিছু নেই। এটা ঠিকই ফলাফলটা সংখ্য়ার বিচারে খুবই লজ্জাজনক, কিন্তু এটাও সত্যি যে লর্ডস টেস্ট বাদ দিলে বাকিগুলিতে কোনও না কোনও সেশনে ভারত এগিয়ে ছিল। একটি বা দুটি খারাপ সেশনের জন্য জেতার খুব কাছে গিয়েও হারতে হয়েছে ভারতকে।
সিরিজ শুরুর আগে প্রত্যাশার পারদটা চড়ে না থাকলে এই অবস্থানটা সহজেই গ্রহণ করতে পারতেন ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা। ভারত সিরিজ শুরু করেছিল ১ নম্বর টেস্ট দল হিসেবে। কাজেই ইংল্যান্ডকে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলাই নয়, অধিনায়ক কোহলি যেমন বলেছেন ভাল পারফরম্যান্সকে ইতিবাচক ফলে পরিণত করতে হবে, সেটাই আশা ছিল ভারতের কাছ থেকে। কাজেই সিরিজে ভাল লড়াই করেও কোহলি ব্রিগেডকে নিয়ে নানান কথা উঠে গিয়েছে।
ধাওয়ানকে সরানোর সময় এসেছে
২৬, ১৩, ৩৫, ৪৪, ২৩, ১৭, ৩ ও ১ - এই হল সিরিজে ওপেনার শিখর ধাওয়ানের রান। এই পরিসংখানই টেস্ট দলের ওপেনার হিসেবে শিখর ধাওয়ানের পেছনে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের আর সময় নষ্ট করা উচিত কিনা - এই বিতর্ক শুরুর জন্য যথেষ্ট।
এই বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে একের পর এক বিদেশের সিরিজে মাঝপথে ধাওয়ানের বাদ পড়ার রেকর্ড। ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফর, তারপরের অস্ট্রেলিয়া সফর, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর - একের পর এক বিদেশ সফরে ছবিটা পাল্টায়নি। এই ইংল্যান্ড সফরেও প্রথম ম্যাচের পৎই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। মুরলী বিজয় তাঁর থেকেও বেশি দীশাহীন না হলে তিনি হয়ত আর দলে ফিরতেনও না।
ভারতকে বিদেশের মাটিতে ভাল কিছু করতে গেলে ওপেনারদের থেকে একটা ভাল শুরু আবশ্যক। ইংল্যান্ড সিরিজের পর কথা উঠে গিয়েছে শিখরকে নিয়ে যথেষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। সময় এসেছে সামেনর দিকে তাকানোর। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টেই তরুণ ওপেনার পৃথ্বী শ'কে খেলানোর কথা ভাবা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া সফরে তাঁকে এই ভূমিকায় দেখে নেওয়া যেতেই পারে।
পেসের ভবিষ্যত উজ্জ্বল
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারত ৩ টেস্ট থেকে ৬০টি উইকেট তুলেছিল। ইংল্যান্ডেও ৯ ইনিংসে ভারতের বোলিং আক্রমণ ৮২টি উইকেট তুলেছে। তারমধ্যে পেসাররাই নিয়েছেন ৬৮ উইকেট। ভারতের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ ইশান্ত শর্মার, ১৮টি। এরপরই আছেন মহম্মদ শামি ১৬টি ও ৩ টেস্ট থেকে ১৪ উইকেট নেওয়া জসপ্রীত বুমরা। এমনকী হার্দিক পান্ড্যও মোট ১০টি উইকেট নিয়েছেন।
পরিসংখ্য়ানই বলে দিচ্ছে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এত ভাল পেস আক্রমণ আগে আসেনি। এবারের ইংল্যান্ড সফরে কিন্তু যেতে পারেননি ২০১৪ সালের সেরা বোলার ভূবনেশ্বর কুমারই। শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে এই বোলাররা দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকেও দলকে ম্যাচে ফেরাতে পারেন তাঁরা।
কাজেই এরপর ভারত বিদেশে গেলে আগের মতো পেসের কড়াইতে ভাজা ভাজা কড়ার মতো উইকেট বানাতে গেলে বিদেশী দলগুলি দু'বার ভাববে।
পুজারা-রাহানে ধাঁধা
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ম্যাচে রাহানেকে না খেলানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল ইংল্যান্ড সফরের প্রথম টেস্টে পুজারাকে না খেলানো নিয়ে। কিন্তু প্রথম টেস্টে পুজারাকে বাদ দেওয়ার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে যথেষ্ট কারণ ছিল।
টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে পুজারা ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছিলেন। সেখানে কিন্তু বলার মতো বিশেষ পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। সফরের একমাত্র ওয়ার্ম আপ ম্যাচেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সিরিজে তিনি একটি শতরান ও একটি অর্ধ শতরান করেছেন। কিন্তু পুজারার ফর্মের থেকেও দলকে যা চিন্তায় রেখেছে, তা হল উইকেটে আসা বাঁক খাওয়া বলের বিরুদ্ধে তাঁর দুর্বলতা। ৩ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর বোল্ড ও এলবিডব্লু হওয়ার রেকর্ডটি বেশ খারাপ। এই জায়গায় দ্রুত মেরামতির প্রয়োজন রয়েছে।
এবার আসা যাক রাহানের কথায়। ২০১৪-র সিরিজে ভারতীয় দলের সেরা ব্যাট ছিলেন তিনিই। কিন্তু এই সিরিজে অদ্ভূতভাবে তিনি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগেছেন। তিনি ব্যাট করতে আসলে প্রথম বল থেকেই মনে হয়েছে আউট হয়ে যাবেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে সেই অবস্থাটা তিনি কাটিয়ে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু দলের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ তিনি।
ব্যাটসম্যান কোহলি পাস করেছেন, কিন্তু...
সফর শুরুর আগে ইংল্যান্ড সিরিজকে বলা হচ্ছিল ব্যাটসম্য়ান কোহলির ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার। ১৩৪ - এই সংখ্য়াটা মুখে মুখে ঘুরছিল। ২০১৪ ইংল্যান্ড সিরিজে কোহলি এই রানচুকুই করতে পেরেছিলেন। এবারের সিরিজের প্রথম ইনিংসেই ১৪৯ রান করে কোহলি সেই পরিসংখ্য়ানের ভূতকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
সিরিজের শেষ ইনিংসে তিনি প্রথম বলেই ০ রানে আউট হয়ে যান। কিন্তু তার আগেই সিরিজে তিনি ৫৯৭ রান করেছিলেন। দুই দল মিলিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনিই। কাজেই ইংল্য়ান্ডের পরীক্ষাতেও নিঃসন্দেহে ব্যাটসম্য়ান কোহলি সসম্মানে পাস করেছেন।
কথা উঠছে ইধিনায়ক কোহলিকে নিয়ে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা তুলেছেন অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ফিল্ড সাজানোর অনভিজ্ঞতার কথা। সিরিজে দেখা গিয়েছে মাঠের কোনও একটি অংশ দিয়ে ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা রান পেলেই তার পরের বলে কোহলি সেখানে একজন ফিল্ডার মোতায়েন করছেন। আবার পরের বলে হয়ত সেই ব্যাটসম্যান মাঠের অন্য অংশশ থেকে রান পেলেন। কোহলি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আরেক ফিল্ডার পাঠালেন।
প্রশ্ন উঠেছে কোহলির দলের ইংরেজ লোয়ার অর্ডারকে বল করার স্ট্র্যাটেজি নিয়েও। কোহলির প্রথম পরিকল্পনা না খাটলেই তাঁর দলকে ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। তাঁর বোলিং পরিবর্তনও সেই সময়ে দীশাহীন দেখিয়েছে।
এছাড়াও ভারত বারবার ম্য়াচ পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। যার জন্য অনেকবার ইংল্য়ান্ডকে চেপে ধরেও বড় মূল্য চোকাতে হয়েছে। ভারতের দল বাছাইতেও প্রচুর ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে। লর্ডস টেস্টে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে কূলদীপ য়াদবকে খেলানোর সিদ্ধান্ত বা সাউদাম্পটনে দুই স্পিনার না খেলানো, ৫ ব্য়াটসম্যানে খেলা - এই সিদ্ধান্ত গুলি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
কথা কম জেতো বেশি
হ্যাঁ, কোচ রবি শাস্ত্রীর কতাই বলা হচ্ছে। অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার ও বোর্ড কর্তা মনে করছেন ভারতের কোচ জেতার দিকে মন না দিয়ে বড় বেশি কথা বলছেন। সিরিজ শুরু আগে তিনি বর্তমান দলকে গত ১০-১৫ বছরের সেরা বলেছিলেন। যখনই সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি মুখ খুলেছেন তিনি এই দল নিয়ে প্রত্যাশা বাড়িয়েছেন। ফলে এই হারটা আরও বেশি করে চোখে পড়ছে।
এছাড়া তাঁর কথা ও কাজে কোনও মিল থাকছে না। স্রেফ বলার জন্য িনি অনেক কথা বলে যাচ্ছেন। যেমন প্রথম টেস্টের আগে তিনি পুজারার উপর আস্থা প্রদর্শন করেছিলেন। কিন্তু ম্য়াচের সময় দলেই রাখেননি পুজারাকে। কাজেই শাস্ত্রী-কোহলি জুটির অস্তিত্ব এখন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।